Questioner
আব্দুর রহীম
Question

রাসূল (সা.) কীভাবে রমজানের প্রস্তুতি নিতেন?

Counselor
সাদাফ ফারুকী
Answer

আপনি প্রশ্ন করেছেনঃ

 রাসূল (সা.) রমজানের জন্য কিভাবে প্রস্তুতি নিতেন তা সম্পর্কে আমাদের জানাবেন কি? ভিন্ন ভিন্ন লোকের কাছে এই বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন কথা শুনতে পাওয়া যায়। কিন্তু হাদীসের বিশুদ্ধ বর্ণনা অনুযায়ী এ প্রসঙ্গে রাসূল (সা.) এর আমল সম্পর্কে জানতে চাচ্ছি।

 

আপনার প্রশ্নের জন্য ধন্যবাদ।

রমজান মাসের প্রস্তুতির জন্য রাসূল (সা.) মূলত তিন প্রকার কৌশলে প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন।

১. নফল রোজার মাধ্যমে রমজানের ব্যবহারিক প্রস্তুতি গ্রহণ।

২. রমজানের বরকত হাসিলের জন্য আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোয়া এবং

৩. চারপাশের সকলকে রমজানের রহমত, বরকত সম্পর্কে সচেতন করা এবং তা অর্জনের জন্য উৎসাহিত করা, যাতে সকলে তা অর্জনের জন্য অগ্রসর হয়।

প্রথমত, রমজানের পূর্ববর্তী শাবান মাসে রাসূল (সা.) রমজানের প্রস্তুতি হিসেবে নফল রোজা রাখতেন।

হযরত উসামা ইবনে যায়েদ (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘আমি একবার রাসূল (সা.) কে জিজ্ঞেস করলাম,

“হে আল্লাহর রাসূল! আমি শাবান মাসের মত আপনাকে অন্যকোন মাসে রোজা রাখতে দেখিনা (এর কারন কী)।” রাসূল (সা.) বলেন, “রজব ও রমজানের মাঝে অবস্থিত এটি এমন এক মাস যাতে লোকেরা খুব মনোযোগ দেয়না। এটি এমন মাস যখন বান্দার আমল সারা জগতের অধিপতির সামনে হাজির করা হয়, এবং আমি চাই আমার আমল এই অবস্থায় হাজির হোক যখন আমি রোজা পালনের মধ্যে থাকি।”’ (নাসায়ী)

হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে,

“রাসূল (সা.) যে মাসে অধিক রোজা পালন করতেন, তা হল শাবান; এবং আবশ্যিকভাবে তিনি তা রমজানের সাথে যুক্ত করতেন।” (নাসায়ী, আবু দাউদ)

তবে শাবান মাসে তিনি কতদিন রোজা রাখতেন তা নির্দিষ্টভাবে জানা যায়নি। কিন্তু এটি আমরা সাধারণভাবে ধারণা করে নিতে পারি, রমজান আসার পূর্বেই তিনি দৈনিক রোজা রাখার অনুশীলনের সূচনা করতেন।

অবশ্য, পুরো মাস তিনি রোজা রাখতেন না।

দ্বিতীয়ত, রাসূল (সা.) যখনই কোন নতুন মাসের চাঁদ দেখতেন, এমনকি রমজানের চাঁদ দেকলেও নিচের দোয়াটি করতেন।

হযরত তালহা ইবনে উবাইদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, “যখনই কোন নতুন মাসের চাঁদ দেখা যেত, রাসূল দোয়া করতেন,

"‏اللهم أهله علينا بالأمن والإيمان والسلامة والإسلام، ربي وربك الله، هلال رشد وخير‏"

অর্থ: হে আল্লাহ! এই চাঁদকে আমাদের জন্য নিরাপত্তা, ঈমান ও ইসলামের নিদর্শন হিসেবে আনয়ন কর। (হে চাঁদ) তোমার এবং আমার প্রভু একমাত্র আল্লাহ। পথনির্দেশনা ও সমৃদ্ধি বয়ে আনুক এই চাঁদ। (তিরমিজি)

তৃতীয়ত, রাসূল (সা.) রমজানের আগমন উপলক্ষে সবাইকে সচেতন ও উৎসাহ প্রদান করতেন।

হযরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন,

“যখন তোমাদের মধ্যে বরকতময় মাস রমজানের আগমন ঘটে যে মাসে সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহ তোমাদের জন্য রোজাকে নির্দিষ্ট করেছেন, তখন জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং সকল শয়তানকে শেকলে বন্দী করা হয়। এই মাসে, আল্লাহ এমন একটি রাত রেখেছেন যা হাজার মাসের তুলনায় উত্তম; যে এর কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হল, সে প্রকৃতই বঞ্চিত হল।” (নাসায়ী)

সুতরাং দেখা যাচ্ছে, রাসূল (সা.) মুসলমানদেরকে রমজানের কল্যাণ অর্জনের জন্য কিরূপ উৎসাহ প্রদান করছেন।

আমরা আল্লাহর রাসূলের অনুকরণে এই তিন প্রক্রিয়ায় নিজেদের রমজানের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারি।

সর্বোচ্চ জ্ঞানের অধিকারী আল্লাহই একমাত্র উত্তমভাবে জ্ঞান রাখেন।


 উৎস  

সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।