ইসলামী বার্তা ডেস্ক
ইসলামিক বর্ষপঞ্জির চারটি পবিত্র মাসের একটি হলো রজব। এই মাসটি অফুরন্ত বরকত নিয়ে আসে এবং আত্মশুদ্ধি ও ইবাদাতের জন্য এটি একটি চমৎকার সময়। ইবনে ফারিস (র.) বলেছেন, “রজব শব্দটি রা-জিম-বা অক্ষর দিয়ে গঠিত। এর মূল অর্থ হলো, অন্য কিছুর দ্বারা কিছু শক্তিশালী করা। এই মাসটিকে রজব বলা হয় কারণ এটি সম্মানের মাস।”
এখানে আমরা রজব মাসের পাঁচটি প্রিয় বিষয় তুলে ধরেছি।
১. রজব শুরু করে একটি আধ্যাত্মিক যাত্রা যা শেষ হয় ঈদুল ফিতরে
রজব অন্যান্য পবিত্র মাস (জিলকদ, জিলহজ ও মহররম) থেকে আলাদা। এটি অন্যদের থেকে পাঁচ মাস পর আসে, তাই এটি একটি অনন্য স্মারক হিসেবে কাজ করে। রজব আমাদের প্রস্তুতি নিতে সহায়তা করে, যেন রমজানের মতো ব্যস্ত মাস হঠাৎ আমাদের ওপর চেপে না বসে। এটি আমাদের রমজানে ধীরে ধীরে প্রবেশের সুযোগ দেয়।
“রজবে বীজ বপন করুন, শাবানে পানি দিন, আর রমজানে ফসল কাটুন।” — ইমাম আবু বকর আল-ওয়াররাক
২. রজবে যুদ্ধ নিষিদ্ধ
ইসলামের নির্দেশনা অনুযায়ী, রজবে মুসলিমদের জন্য যুদ্ধ বা আক্রমণ শুরু করা নিষিদ্ধ, যেন ওমরাহ পালন সহজ হয়। ব্যক্তিগত জীবনে আমরা কীভাবে এটি প্রয়োগ করতে পারি?
রজব মাসটি হতে পারে রাগ ও অহংকার দমন করার, অন্যের সঙ্গে বিতর্কে না জড়ানোর এবং শান্তিপূর্ণ সমাধান খোঁজার অনুশীলনের সময়। এটি আমাদের নফস নিয়ন্ত্রণের দারুণ উপায়, বিশেষ করে যখন রমজান আসন্ন।
৩. পাপের গুরুতরতা বৃদ্ধি পায়
যুদ্ধ নিষিদ্ধ হওয়ার পাশাপাশি রজবে পাপ করা অন্যান্য সময়ের তুলনায় আরও গুরুতর বলে বিবেচিত হয়। তবে এটা ভয়ের চেয়েও একটি সুযোগ হিসাবে দেখা উচিত। এটি আমাদের জন্য একটি সুযোগ, নিজেকে সংশোধন করার এবং রমজানে গিয়ে পাপ কমানোর চেয়ে বরকত অর্জনে মনোযোগ দেওয়ার।
৪. ক্ষমা চাওয়ার এবং ক্ষমা করার সময়
রজবকে বলা হয় “ক্ষমা প্রার্থনার মাস।”
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: “রজব হলো ক্ষমা চাওয়ার মাস। তাই আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাও; নিশ্চয়ই তিনি ক্ষমাশীল ও দয়ালু।”
অনেকেই এই মাসে বিভিন্ন দোয়া পড়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চান। তবে নিজেকে ক্ষমা করাও গুরুত্বপূর্ণ। নিজের ভুল-ত্রুটিগুলো দয়ালু মনোভাব নিয়ে মেনে নেওয়া হলে, আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া সহজ হয়।
৫. ইসলামি ইতিহাসের প্রিয় একটি ঘটনা রজবে ঘটে
বিজ্ঞানের আবিস্কারের চেয়েও বিস্ময়কর ঘটনা হলো ইসরা ও মেরাজ। রজব মাসে রাসূল (সা.)-কে আল্লাহর মহিমার এক অনন্য ঝলক দেখানো হয়েছিল। এই ঘটনার বর্ণনা থেকে জানা যায়, রাসূল (সা.)-কে ফেরেশতা জিব্রাইল (আ.)-এর সাথে বোরাক নামের বাহনে করে মক্কার মসজিদুল হারাম থেকে জেরুজালেমের মসজিদুল আকসা পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তিনি নবীদের এক সম্মিলিত জামায়াতে ইমামতি করেন। এরপর জিব্রাইল (আ.) তাঁকে আকাশে নিয়ে যান, যেখানে তিনি আদম (আ.), ইয়াহিয়া (আ.), ঈসা (আ.), ইদ্রিস (আ.), হারুন (আ.) ও মুসা (আ.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সপ্তম আকাশে তিনি ইবরাহিম (আ.)-এর সঙ্গেও মিলিত হন। সবশেষে, মহানবী (সা.)-কে আল্লাহর সরাসরি উপস্থিতিতে নেওয়া হয়। এই ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা সূরা নজম-এর শুরুতে রয়েছে।
রজব মাস আমাদের জন্য পাপমুক্তি, আত্মশুদ্ধি এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের এক বিশেষ সুযোগ। এ মাসটি উদযাপন করুন, এর শিক্ষা গ্রহণ করুন এবং রমজানের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করুন।
সূত্র: এ্যাবাউট ইসলাম