গণতন্ত্র ইসলাম থেকে নেওয়া হয়নি—এটি একটি ভ্রান্ত ধারণা। গণতন্ত্র এবং ইসলামি শাসনব্যবস্থার মধ্যে কিছু সাদৃশ্য থাকতে পারে, তবে উভয়ের মৌলিক ভিত্তি ও আদর্শ ভিন্ন। গণতন্ত্রের ধারণাটি প্রাচীন গ্রীক সভ্যতা থেকে উদ্ভূত, যা পরবর্তীতে পশ্চিমা রাজনৈতিক কাঠামোতে গড়ে ওঠে। ইসলামি শাসনব্যবস্থা “খিলাফত” বা “ইমামত” এর ওপর প্রতিষ্ঠিত, যার মূল ভিত্তি হলো আল্লাহর সার্বভৌমত্ব ও শরীয়াহ।
গণতন্ত্র ও ইসলামি শাসনব্যবস্থার পার্থক্য
ইসলামি শাসনব্যবস্থার মূল আদর্শ হলো আল্লাহর দেওয়া আইন এবং নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর সুন্নাহর ওপর ভিত্তি করে সমাজ পরিচালনা করা। এখানে জনগণের মতামত বা শূরা (পরামর্শ) গ্রহণ করা হয়, তবে তা শরীয়াহর সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হতে হবে। অন্যদিকে গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি হলো জনগণই সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী, এবং তাদের ইচ্ছা ও ভোটের ভিত্তিতে শাসনব্যবস্থা পরিচালিত হয়। ইসলামে চূড়ান্ত কর্তৃত্ব শুধুমাত্র আল্লাহর এবং তাঁর বিধান।
গণতন্ত্রের পক্ষে প্রচারণার হুকুম
ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে গণতন্ত্রের পক্ষে প্রচারণা করা সমর্থনযোগ্য নয়, কারণ এটি মানুষের ইচ্ছা ও চাহিদার ভিত্তিতে তৈরি এক ব্যবস্থা। যেকোনো শাসনব্যবস্থা যা আল্লাহর আইনকে চূড়ান্ত ও সার্বভৌম মনে করে না, ইসলামের দৃষ্টিতে তা অনুমোদনযোগ্য নয়। ইসলামি সমাজ ও রাষ্ট্রে শাসন ব্যবস্থা এমন হতে হবে, যা আল্লাহর বিধান অনুযায়ী পরিচালিত হয় এবং যেখানে শরীয়াহর বিরুদ্ধে কোনো কিছু অনুমোদন করা হবে না।
তবে, অনেক মুসলিম পণ্ডিত গণতন্ত্রের কিছু উপাদান যেমন জনমতের গুরুত্ব এবং জনগণের কল্যাণের প্রতি মনোযোগী থাকার মত দিকগুলোকে ভালো মনে করেন এবং ইসলামি ব্যবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হিসেবে দেখেন। তথাপি, ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে এমন কোনো শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার প্রতি জোর দেওয়া হয়, যা সরাসরি আল্লাহর আইন ও শরীয়াহর অধীনে পরিচালিত হবে।
সারসংক্ষেপে বলা যায়, গণতন্ত্র ইসলাম থেকে নেওয়া নয়। ইসলাম একটি সার্বভৌম শাসনব্যবস্থার কথা বলে, যা আল্লাহর নির্দেশনাকে চূড়ান্ত মনে করে এবং জনগণের ওপর আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠা করে।