ফাতিমা এলিজাবেথ কেটস (মূল নাম ফ্রান্সিস এলিজাবেথ কেটস) ছিলেন ইংল্যান্ডের প্রথম মুসলিম নারীদের একজন, যিনি তাঁর সময়ের সামাজিক বাধা পেরিয়ে ইসলাম গ্রহণ করে একটি নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। ১৮৬৫ সালে বার্কেনহেডে জন্মগ্রহণ করা ফাতিমা, দরিদ্র ভিক্টোরিয়ান শ্রমজীবী পরিবারের সন্তান ছিলেন। তাঁর বাবা ছিলেন আইরিশ বাজারের পোর্টার জন মারে। এমন কঠিন পরিস্থিতিতে বড় হওয়া ফাতিমা এলিজাবেথ সামাজিক সংস্কারে অংশ নেন এবং বিশেষত টেম্পারেন্স আন্দোলনের মাধ্যমে অ্যালকোহল সেবনের ক্ষতিকারক প্রভাব নিয়ে সক্রিয় হয়ে ওঠেন।
ইসলামের প্রতি আকর্ষণ
ফাতিমার ইসলামের প্রতি আকর্ষণ শুরু হয় লিভারপুল টেম্পারেন্স লীগ আয়োজিত একটি বক্তৃতার সময়। বক্তৃতাটি দেন আবদুল্লাহ কুইলিয়াম, যিনি একজন আইনজীবী ও নতুন ইসলামগ্রহণকারী মুসলিম ছিলেন। “দ্য গ্রেট অ্যারাবিয়ান টিটোটালার” নামে পরিচিত নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর উপর কুইলিয়ামের বক্তৃতা ফাতিমা এলিজাবেথকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। তিনি ইসলামের শিক্ষা এবং জীবন দর্শন নিয়ে আরও জানার চেষ্টা করেন এবং দুই বছর পর, মাত্র ২১ বছর বয়সে, তিনি ইসলাম গ্রহণ করে “ফাতিমা” নাম গ্রহণ করেন।
প্রতিকূলতার মুখোমুখি
ইসলাম গ্রহণের পর ফাতিমা এলিজাবেথকে ব্যাপক প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়। তাঁর মা কোরআন ধ্বংসের চেষ্টা করেছিলেন, যা তাঁকে সর্বদা নিজের কোরআন সঙ্গে রাখতে উদ্বুদ্ধ করেছিল। পারিবারিক ও সামাজিক প্রতিকূলতা, এমনকি শারীরিক আক্রমণের মধ্যেও তিনি ইসলামের প্রতি তাঁর অঙ্গীকার থেকে সরেননি। দ্য এলাহাবাদ রিভিউ-তে তিনি লেখেন, “আমাকে ক্রমাগত তিরস্কার করা হয়েছে এবং হুমকি দেওয়া হয়েছে … কিন্তু আমি ইসলামের প্রতি আমার পড়াশোনা চালিয়ে গেছি।”
মুসলিম সমাজে ভূমিকা
ফাতিমা এলিজাবেথ কেটস লিভারপুলের ক্রমবর্ধমান মুসলিম সমাজের গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভে পরিণত হন। তিনি ইংল্যান্ডের প্রথম মসজিদ প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করেন এবং সেখানে শিক্ষা ও প্রচারের কাজ শুরু করেন। তাঁর কাজ ব্রিটিশ মুসলিমদের ভারতে মুসলিম সমাজের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে সহায়তা করে। নারীর অধিকার এবং ইসলামের শান্তিপূর্ণ শিক্ষার জন্য তিনি কাজ করেছেন, যা তাঁকে তাঁর সময়ের সমাজে একজন উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত করে তোলে।
উত্তরাধিকার ও পুনরাবিষ্কার
ফাতিমার অবদান তাঁর মৃত্যুর পর ভুলে যাওয়া হলেও, ২০১৯ সালে ইতিহাসবিদ হামিদ মাহমুদ তাঁর সমাধি চিহ্নিত করেন এবং তাঁর জীবনের পুনঃআবিষ্কার শুরু হয়। ২০২১ সালে আমিরাহ স্কারিসব্রিকের প্রচেষ্টায় ফাতিমার সমাধিতে একটি নতুন স্মৃতিফলক স্থাপন করা হয়। তাঁর জীবনের গল্প নতুন প্রজন্মের মুসলিমদের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পূর্ব লন্ডনের ফাতিমা এলিজাবেথ ফ্রন্টিস্টেরি মাদ্রাসা তাঁর নামে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যা শিক্ষার্থীদের তাদের ঐতিহ্যের সঙ্গে সংযুক্ত থাকতে উৎসাহিত করে।
একটি অনুপ্রেরণামূলক প্রতীক
ফাতিমা এলিজাবেথ কেটস আজ ব্রিটিশ মুসলিম সমাজে স্থিতিস্থাপকতা এবং বিশ্বাসের প্রতীক। তিনি প্রতিকূলতাকে জয় করে ইসলামের শিক্ষা প্রচার করেছেন এবং সমাজে নারীর ভূমিকার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তাঁর জীবন নতুন প্রজন্মের কাছে একটি আলোকবর্তিকা, যা তাঁদের ঐতিহ্য ও আধ্যাত্মিকতার সঙ্গে সংযুক্ত রাখে।
ফাতিমা এলিজাবেথের এই গল্প কেবল একজন ব্যক্তির ইসলাম গ্রহণ নয়, বরং একটি সংগ্রামের কাহিনি, যা আজকের সমাজেও ইসলামোফোবিয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের শক্তি জোগায়।
সূত্র: এ্যাবাউট ইসলাম