ইসলামী বার্তা ডেস্ক || ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪
সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটসের মতে , ইসরায়েলি বাহিনী গত ৪৮ ঘণ্টায় সিরিয়া ভূখণ্ডে প্রায় ২৫০টি বিমান হামলা চালিয়েছে। পরবর্তীতে এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫০০ ছাড়িয়ে গেছে। বিমান হামলা সিরিয়ার সামরিক সাইট, অস্ত্রের ডিপো এবং কৌশলগত অবস্থানগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করে, যার ফলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি এবং হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।
ইরানি বাহিনী, মিত্র মিলিশিয়া এবং সিরিয়ার সরকারি স্থাপনাগুলোতে হামলা চালানো হয়েছে বলে জানা গেছে। দামেস্ক, হোমস এবং টারতুসের মতো প্রধান শহরগুলো শক্তিশালী বিস্ফোরণ প্রত্যক্ষ করেছে, যার ফলে অবকাঠামো ব্যাপকভাবে ধ্বংস হয়েছে। যদিও বেসামরিক হতাহতের খবর পাওয়া গেছে, সঠিক পরিসংখ্যান অনিশ্চিত রয়ে গেছে।
আল জাজিরার রিপোর্ট অনুসারে, ইসরায়েলি বিমান হামলা কৌশলগত সামরিক স্থাপনাগুলোর পাশাপাশি হোমস, কামিশলি এবং দামেস্কের গুরুত্বপূর্ণ বিমানবন্দরগুলোকে লক্ষ্য করে চালানো হচ্ছে। “ইসরায়েলের আক্রমণগুলো পরিকল্পিত, সিরিয়ার প্রতিরক্ষা ঘাঁটিগুলো ভেঙে ফেলার লক্ষ্যে,” উল্লেখ করেন সাংবাদিক রেসুল সেরদার, দামেস্ক থেকে রিপোর্ট করছেন। ইসরায়েল অতীতে ইরানকে তার আঞ্চলিক প্রভাব বৃদ্ধি করা থেকে বিরত রাখতে এবং হিজবুল্লাহর কাছে উন্নত অস্ত্র হস্তান্তর ব্যাহত করার জন্য পূর্ব-উদ্যোগমূলক কথিত ব্যবস্থা হিসেবে এই ধরনের হামলাকে ন্যায্যতা দিয়েছে।
এই অপারেশন সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে অন্যতম তীব্র ইসরায়েলি অভিযান এবং সিরিয়ার সংঘাতের ভঙ্গুর ও অস্থির অবস্থাকে তুলে ধরে, যা বহু আন্তর্জাতিক পক্ষকে চিন্তিত করে তুলেছে। ইসরায়েল, তার দীর্ঘস্থায়ী নীতি মেনে সর্বশেষ হামলার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া থেকে বিরত রয়েছে।
এদিকে সিরিয়ায় রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে। নতুন বিপ্লবী সরকার গঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করে সিরিয়ায় অভ্যূত্থানকারী যোদ্ধাদের দ্বারা মোহাম্মদ আল-বশিরকে তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
চলমান সহিংসতা সিরিয়ায় মানবিক সংকটকে আরও গভীর করেছে। জাতিসংঘ সম্প্রতি রিপোর্ট করেছে যে ১ কোটি ৬০ লক্ষ সিরিয়ান বাসিন্দার জন্য জরুরি সাহায্যের প্রয়োজন। পর্যবেক্ষকরা আশঙ্কা করছেন যে ক্রমবর্ধমান সংঘাত ইতোমধ্যে ভূ-রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের জালে আটকে থাকা বেসামরিক নাগরিকদের দুর্ভোগকে আরও বাড়িয়ে তুলবে।
এই অঞ্চলটি যখন এই ঘটনাগুলো প্রত্যক্ষ করছে, সিরিয়ার ভবিষ্যৎ ভারসাম্যের মধ্যে ঝুলছে। স্থিতিশীলতা, শাসনব্যবস্থা এবং মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনীতিতে এই আক্রমণগুলোর বৃহত্তর প্রভাব সম্পর্কে প্রশ্ন উঠছে।
যা করণীয়
সিরিয়া, প্রায় পাঁচ দশকের সংগ্রাম ও ধ্বংসযজ্ঞ কাটিয়ে আসাদ সরকারের পতনের মাধ্যমে নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। এ অবস্থায় ইসরায়েলের এমন নিষ্ঠুর আচরণ, অযাচিত হস্তক্ষেপ এবং ধ্বংসযজ্ঞ কেবল অনৈতিকই নয়, বরং এটি সদ্য স্বাধীন একটি আরব মুসলিম দেশের জন্য মারাত্মক হুমকি। এর পাশাপাশি, মুসলিম দেশগুলোর নীরবতা ভবিষ্যতে অন্য মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর জন্যও গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
যদিও কাতার, তুরস্ক এবং মিশর সিরিয়ার অভ্যন্তরে ইসরায়েলের সামরিক অবস্থান, দখল এবং ধ্বংসযজ্ঞের নিন্দা জানিয়েছে, তা যথেষ্ট নয়। এই পরিস্থিতিতে শুধু নিন্দা নয়, প্রয়োজন সক্রিয় পদক্ষেপ। এখন সময় এসেছে মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর ঐক্যবদ্ধ হয়ে একটি যৌথ সামরিক বাহিনী গঠনের। এমন বাহিনী গঠন করতে হবে যা কোনো মুসলিম দেশে আক্রমণ হলে তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে।
মুসলিম বিশ্বের এই নিষ্ক্রিয়তা যদি অব্যাহত থাকে, তবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের আগ্রাসন আরও বিস্তৃত হতে পারে, যা বহু মুসলিম রাষ্ট্রের জন্য ধ্বংসাত্মক হবে। এজন্য মুসলিম দেশগুলোর জনগণকে নিজ নিজ সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে হবে, যেন তারা একটি যৌথ বাহিনী ও কমন সিকিউরিটি ফান্ড বা যৌথ নিরাপত্তা তহবিল গঠনের উদ্যোগ নেয়।
এক্ষেত্রে শিয়া-সুন্নী, আরব-অনারবের মতো বিভেদ ভুলে বৃহত্তর মুসলিম উম্মাহর স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। মুসলিম বিশ্বের ঐক্যই এই আগ্রাসনের প্রতিরোধে সবচেয়ে শক্তিশালী হাতিয়ার।
সূত্র: রেডিয়েন্স নিউজ