ইসলামী বার্তা ডেস্ক || ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৪
হাজেম সাঈদ ও মাহা এজ্জেদ্দীন
আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
কিয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা বলবেন, “হে আদম সন্তান, আমি অসুস্থ ছিলাম কিন্তু তুমি আমাকে দেখতে যাও নি’’ তখন আদম সন্তান বলবে, “হে আমার রব, আমি কীভাবে আপনার কাছে যেতে পারি, যখন আপনি বিশ্বজগতের প্রতিপালক?’’ আল্লাহ বলবেন, “তুমি কি জানো না, আমার একজন বান্দা অসুস্থ ছিল এবং তুমি তাকে দেখতে যাওনি? তুমি যদি তাকে দেখতে যেতে, তবে তুমি আমাকে সেখানে পেতে।’’
আল্লাহ আরও বলবেন, “হে আদম সন্তান, আমার খাবারের প্রয়োজন ছিল কিন্তু তুমি আমাকে খাওয়ালে না।’’ আদম সন্তান বলবে, “হে আমার প্রভু, আমি কিভাবে তোমাকে খাওয়াবো, যখন আপনি বিশ্বজগতের প্রতিপালক?’’ আল্লাহ বলবেন, “তুমি কি জানো না, আমার একজন বান্দা ক্ষুধার্ত ছিল এবং তুমি তাকে খাবার দাওনি? তুমি যদি তাকে খাওয়াতে, তবে তার প্রতিদান আমার কাছে পেতে।’’
আল্লাহ বলবেন, “হে আদম সন্তান, আমি তৃষ্ণার্ত ছিলাম, কিন্তু তুমি আমাকে কিছু পান করতে দাওনি।’’ আদম সন্তান বলবে, “হে আমার রব, আমি কিভাবে আপনাকে পান করাবো, যখন আপনি বিশ্বজগতের প্রতিপালক?’’ আল্লাহ বলবেন, “তুমি কি জানো না, আমার একজন বান্দা তৃষ্ণার্ত ছিল এবং তুমি তাকে পান করাওনি? তুমি যদি তাকে পানীয় দিতে, তবে তুমি আমার কাছে এর প্রতিদান পেতে।’’(আল-বুখারি)
মানবজাতির প্রতি করুণা
রাসূল (সাঃ)-কে যেমন মানবজাতির জন্য রহমত হিসেবে প্রেরণ করা হয়েছিল, তেমনি আমাদেরও উচিত যাদের জীবনে আমরা প্রভাব ফেলি, তাদের জন্য রহমত হওয়া। অন্যদের সেবা করা ও সাহায্য করার মাধ্যমে আমরা আমাদের প্রভুকে খুঁজে পাই।
তাঁর করুণা ও তাঁর নৈকট্যে যাওয়ার পথ হল শান্তি প্রতিষ্ঠা করা এবং পৃথিবীকে উন্নত করা। অন্যকে সাহায্য করলেই আমরা নিজেদেরকে সাহায্য করতে পারি। আমরা ভোগবিলাসী ও স্বার্থপর জীবন যাপন করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের আশা করতে পারি না।
আল্লাহর প্রজ্ঞার অংশ হিসেবে তিনি আমাদের তাঁর নৈকট্যে যাওয়ার পথ হিসেবে অন্যদের সেবা করা এবং একটি শান্তিময় পৃথিবী গড়ে তোলাকে নির্ধারণ করেছেন। দুঃখী ও বিপন্নদের সাহায্যের অনুরোধ আমাদের সৃষ্টিকর্তার কাছাকাছি যাওয়ার একটি আহ্বান।
সেবার সহজ আইন
এই হাদিসে রাসূল (সাঃ) আমাদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের সরাসরি পথ মানুষের সেবা করার মধ্যেই নিহিত।
আমাদের উচিত প্রতিদিনের ছোট ছোট সেবামূলক কাজকে গুরুত্ব দেওয়া। অসুস্থ, ক্ষুধার্ত, বা প্রয়োজনে থাকা মানুষের জন্য সাহায্যের হাত বাড়ানোর অনুপ্রেরণা এমনভাবে তৈরি করা উচিত যেন তা উপেক্ষা করা অসম্ভব হয়।
আমাদের অনেকেই দুঃখ-কষ্টের প্রতি সংবেদনশীলতা হারিয়ে ফেলেছি। আমরা শুধু মাত্র দান করার চিন্তা করি, কিন্তু দানের বাইরে আরও এগিয়ে গিয়ে সাহায্য করার মানসিকতা আমাদের থাকতে হবে। দরিদ্রদের খাওয়ানো, তৃষ্ণার্তদের পান করানো এবং অসুস্থদের সেবা করা ও সান্ত্বনা দেওয়ার মাধ্যমে আমরা আল্লাহর অসীম নৈকট্য অর্জন করতে পারি।
আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য
এই হাদিস আমাদের শিক্ষা দেয় যে মানুষের সেবা করার জন্য আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্যের প্রয়োজন নেই। আমাদের সেবামূলক কাজের জন্য কোনো প্রতিদানের আশা করা উচিত নয়। বরং এই কাজগুলোর মাধ্যমেই আমাদের আল্লাহকে খুঁজে পাওয়া উচিত।
ক্ষুধার্তকে খাওয়ানো, একজন নতুন মা হওয়া নারীকে রান্নায় সাহায্য করা, বা প্রতিবেশীর সমস্যায় পাশে দাঁড়ানোর জন্য ইসলামে প্রচার বা সামাজিক প্রভাব দেখানোর প্রয়োজন নেই। এগুলো কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য করা উচিত।
ব্যক্তি ও সমাজে শান্তি ও কল্যাণ ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য আমাদের উৎসর্গ করতে হবে। প্রতিটি প্রতিবেশী এবং শহর আমাদের উপস্থিতির মাধ্যমে আশীর্বাদ ও রহমতের ছোঁয়া পাবে, এমন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে।
লেখক: হাজেম সাঈদ ও মাহা এজ্জেদ্দীন
ড. হাজেম সাঈদ আমেরিকায় মুসলিমদের উন্নয়নে ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি ২০০৪ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত একটি জাতীয় যুব সংগঠন এমএএস ইয়ুথের সভাপতি ছিলেন। এছাড়া তিনি ইহসান নামক একটি অলাভজনক সংস্থা প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করেন এবং বর্তমানে এর ম্যানেজিং বোর্ড সভাপতি।
মাহা এজ্জেদ্দীন মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ পার্ক থেকে সাংবাদিকতা ও ইতিহাসে স্নাতক এবং স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন। তিনি ২০০৬ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত এমএএস ইয়ুথের জাতীয় নির্বাহী দলের সদস্য ছিলেন এবং বেশ কয়েকটি প্রকাশনা সম্পাদনা করেছেন।
সূত্র: এ্যাবাউট ইসলাম