নিশ্চয় আল্লাহ কোন জাতির অবস্থা ততক্ষণ পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন করার চেষ্টা করে। (আল কোরআন, আয়াত ১৩:১১)

৩১শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
শুক্রবার

কোরআন ও সুন্নাহর আলোকে লায়লাতুল মিরাজ

ইসলামী বার্তা ডেস্ক

লায়লাতুল মিরাজ (মিরাজের রাত) হলো সেই মহান রাত, যেদিন আল্লাহর নবী মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরশে আজিমে গমন করেন এবং সেখান থেকে আল্লাহর সান্নিধ্যে পৌঁছান। এটি ইসলামের ইতিহাসে এক অনন্য ঘটনা, যা কোরআন ও হাদিসে বর্ণিত।

কোরআনের আলোকে মিরাজের বিবরণ

মিরাজের ঘটনা কোরআনে সরাসরি বর্ণিত হয়েছে দুটি সূরায়:

সূরা আল-ইসরা (বনী ইসরাইল): আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন: “পরম পবিত্র সে সত্তা, যিনি তাঁর বান্দাকে রাত্রিকালে ভ্রমণ করিয়েছেন মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত, যার পরিবেশ আমরা বরকতময় করেছি, যাতে আমরা তাকে আমাদের কিছু নিদর্শন দেখাই। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।” (সূরা আল-ইসরা: ১) 

এখানে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর মক্কার মসজিদুল হারাম থেকে জেরুজালেমের মসজিদুল আকসা পর্যন্ত রাতের সফরের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

সূরা আন-নাজম: মিরাজের আরো গভীর বর্ণনা এসেছে:
“আর নিশ্চয়ই তিনি তাকে (জিবরাইলকে) আরেকবার দেখেছিলেন সিদরাতুল মুনতাহার কাছে। এর নিকটে রয়েছে জান্নাতুল মাওয়া।” (সূরা আন-নাজম: ১৩-১৫)
এখানে রাসূল (সা.)-এর সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত গমন এবং জান্নাত দেখার কথা বলা হয়েছে।

সহীহ হাদীসের আলোকে মিরাজের বিবরণ

মিরাজের ঘটনাটি হাদিসে আরো বিস্তারিতভাবে বর্ণিত হয়েছে। সহীহ বোখারি ও সহীহ মুসলিমসহ বিভিন্ন হাদিসগ্রন্থে এটি বর্ণিত:

সাত আসমানের সফর: মিরাজে নবী (সা.) সাত আসমান পাড়ি দেন এবং বিভিন্ন আসমানে বিভিন্ন নবীর সাথে সাক্ষাৎ করেন:

  • প্রথম আসমানে: হযরত আদম (আ.)
  • দ্বিতীয় আসমানে: হযরত ঈসা (আ.) এবং হযরত ইয়াহইয়া (আ.)
  • তৃতীয় আসমানে: হযরত ইউসুফ (আ.)
  • চতুর্থ আসমানে: হযরত ইদ্রিস (আ.)
  • পঞ্চম আসমানে: হযরত হারুন (আ.)
  • ষষ্ঠ আসমানে: হযরত মুসা (আ.)
  • সপ্তম আসমানে: হযরত ইব্রাহিম (আ.)

সালাত ফরজ হওয়া: মিরাজে রাসূল (সা.) আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং এই রাতেই নামাজ মুসলমানদের জন্য ফরজ করা হয়। প্রথমে ৫০ ওয়াক্ত নামাজ নির্ধারিত হয়েছিল, পরে তা কমিয়ে ৫ ওয়াক্তে আনা হয়, যা ৫০ ওয়াক্তের সমতুল্য সাওয়াব অর্জনের ব্যবস্থা।

জান্নাত ও জাহান্নামের দৃশ্য দেখা: রাসূলুল্লাহ (সা.) মিরাজের সময় জান্নাত ও জাহান্নামের কিছু দৃশ্য প্রত্যক্ষ করেন।

লায়লাতুল মিরাজ উদযাপন: ইসলামি দৃষ্টিকোণ

মিরাজের রাতের বিশেষত্ব ও তাৎপর্য অস্বীকার করা যায় না, তবে ইসলামে এ রাত উদযাপনের জন্য কোনো নির্দিষ্ট বিধান বা পদ্ধতি নেই।

ইবাদত ও দোয়া: কোনো নির্দিষ্ট দিন বা রাতে ইবাদতের বিধান না থাকলেও মুমিনদের উচিত বেশি ইবাদত, কুরআন তিলাওয়াত, এবং আল্লাহর কাছে দোয়া করা।

বিদআত থেকে বাঁচা: সহীহ হাদিসে লায়লাতুল মিরাজ উদযাপন সম্পর্কে নির্দিষ্ট কোনো আমলের কথা বলা হয়নি। অতএব, উদযাপনের নামে কোনো নতুন বা কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী প্রথা বা কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হওয়া উচিত নয়।

লায়লাতুল মিরাজ হলো ইসলামের ইতিহাসে একটি অতুলনীয় ঘটনা, যা নবী করিম (সা.)-এর মর্যাদাকে তুলে ধরেছে। এটি আমাদের জন্য আল্লাহর কুদরত, নবীর (সা.) শ্রেষ্ঠত্ব এবং নামাজের গুরুত্ব উপলব্ধি করার একটি সুযোগ। তবে, মিরাজের রাতে নির্দিষ্টভাবে উদযাপন বা নতুন রীতি অনুসরণের কোনো বিধান নেই। সুতরাং, এই রাত স্মরণ করে নিজের ইবাদত-বন্দেগি এবং আল্লাহর কাছে নিকটবর্তী হওয়ার চেষ্টা করাই উত্তম।

সূত্র: এ্যাবাউট ইসলাম

সাম্প্রতিক পোষ্ট

পোষ্টটি শেয়ার করুন
Scroll to Top