লন্ডনভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল তাদের নতুন এক প্রতিবেদনে দাবি করেছে যে ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরাইল পরিকল্পিত গণহত্যা চালাচ্ছে। একই সঙ্গে, এই নিপীড়নের বিরুদ্ধে বিশ্ব সম্প্রদায়কে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, স্যাটেলাইট চিত্র, ফিল্ডওয়ার্ক এবং গাজা থেকে সংগৃহীত তথ্য প্রমাণ করেছে যে ইসরাইলি সরকার এবং সামরিক কর্মকর্তারা সুপরিকল্পিতভাবে মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন করছে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মহাসচিব অ্যাগনেস ক্যালামার্ড এক বিবৃতিতে বলেছেন, “আমাদের হাতে থাকা তথ্য স্পষ্টভাবে দেখায় যে গাজায় যা ঘটছে তা গণহত্যার শামিল। এটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য জেগে ওঠার মুহূর্ত হওয়া উচিত। এই নৃশংসতা অবিলম্বে বন্ধ হওয়া প্রয়োজন।”
২৯৬-পৃষ্ঠার এই বিশদ প্রতিবেদনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ইসরাইলের উপর কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক চাপ প্রয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে। তবে গাজায় এক বছরেরও বেশি সময় ধরে আটক বেসামরিক নাগরিকদের মুক্তি দিতে হামাসের প্রতি কোনো আহ্বান জানানো হয়নি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে।
এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গাজার মানবিক সংকট নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
আমনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে যে, ইসরায়েলের কর্মসূচীর মধ্যে ফিলিস্তিনিদের ধ্বংস করার অভিপ্রায় স্পষ্ট, যা গণহত্যার অপরাধ প্রমাণের জন্য প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ করে। এই সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর জন্য, আমনেস্টি প্রথমে নির্ধারণ করেছে যে, ফিলিস্তিনিরা জাতীয়, জাতিগত, বর্ণগত বা ধর্মীয় বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে গণহত্যা কনভেনশনের অধীনে একটি সুরক্ষিত গোষ্ঠী। এরপর তারা বিশ্লেষণ করেছে যে, কনভেনশনের ধারা II-তে উল্লিখিত পাঁচটি কাজের মধ্যে তিনটি গাজায় সংঘটিত হয়েছে। এই কাজগুলোর মধ্যে রয়েছে ফিলিস্তিনিদের হত্যা, তাদের গুরুতর শারীরিক বা মানসিক ক্ষতি করা এবং এমন পরিস্থিতি তৈরি করা যা তাদের পুরো বা আংশিক ধ্বংস নিশ্চিত করে।
আমনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইসরায়েলের কার্যকলাপের নির্দিষ্ট ধ্বংসাত্মক অভিপ্রায় খুঁজে বের করার জন্য পরোক্ষ ও সরাসরি প্রমাণ পরীক্ষা করেছে। পরোক্ষ প্রমাণ হিসেবে গাজার ওপর ১৭ বছরের অবরোধ, অবৈধ দখলদারিত্ব এবং ফিলিস্তিনিদের প্রতি পরিচালিত কাঠামোগত বৈষম্যকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে, ইসরায়েলি সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের ঘৃণামূলক এবং বর্ণবাদী ভাষার ব্যবহারের বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। সরাসরি প্রমাণ হিসেবে তারা ইসরায়েলি নেতাদের ১০২টি প্রকাশ্য বিবৃতি বিশ্লেষণ করেছে, যেখানে ফিলিস্তিনিদের ধ্বংস করার অভিপ্রায় স্পষ্ট।
প্রতিবেদনে ইসরায়েলের সামরিক কার্যক্রমের বিকল্প বিশ্লেষণও করা হয়েছে। যদিও ইসরায়েল দাবি করে যে, তাদের কার্যক্রম কেবল সামরিক লক্ষ্য, যেমন হামাস নির্মূলের জন্য পরিচালিত, আমনেস্টি এই দাবিকে প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, ইসরায়েলের সামরিক কার্যক্রম এবং ফিলিস্তিনিদের প্রতি ধ্বংসাত্মক আচরণের একমাত্র যৌক্তিক ব্যাখ্যা হলো ফিলিস্তিনিদের ধ্বংস করার ইচ্ছা। আমনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের এই সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের গুরুতর মাত্রা তুলে ধরে এবং ইসরায়েলকে গণহত্যার জন্য দায়ী করার পথ প্রসারিত করে।
আমনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মতে, ইসরায়েলের সামরিক কার্যক্রম কেবল সামরিক লক্ষ্য নয়, বরং ফিলিস্তিনিদের ধ্বংস করার একটি অভিপ্রায় বহন করে।
এর ফলে তারা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃত গণহত্যার অভিযোগ উত্থাপন করেছে এবং এই বর্বরতার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি জেগে উঠার আহ্বান জানিয়েছে।