২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
বৃহস্পতিবার
Marquee Tags

ইসলামী বার্তার নতুন সংস্করণের কাজ চলছে। ফলে কিছু বৈশিষ্ট্য বা বিভাগ সাময়িকভাবে সীমিত রয়েছে। ইনশাআল্লাহ খুব শ্রীঘ্রই পূর্ণাঙ্গ সংস্করণ চালু হবে।

ইবনে সিনার কানুন ফি আল-তিব্ব: আধুনিক চিকিৎসার ভিত্তি

ইবনে সিনা, যিনি আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম, তাঁর রচনা “কানুন ফি আল-তিব্ব” (Medicine) চিকিৎসাশাস্ত্রের ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক। দশম শতাব্দীতে লিখিত এই গ্রন্থটি শুধু মুসলিম বিশ্বেই নয়, বরং পশ্চিমা চিকিৎসা বিজ্ঞানেও ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। ইবনে সিনার এই কৃতিত্ব তাঁকে ইতিহাসের এক বিশিষ্ট চিকিৎসক এবং দার্শনিক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

ইবনে সিনার জীবন ও কার্যকলাপ

ইবনে সিনা (আবু আলি আলহুসাইন ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে সিনা) নব্বই সালে বর্তমান উজবেকিস্তানের বুখারা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন একজন মেধাবী চিকিৎসক, দার্শনিক, এবং বিজ্ঞানী। মাত্র ষোল বছর বয়সে তিনি চিকিৎসা শাস্ত্রে প্রাথমিক জ্ঞান অর্জন করেন এবং দ্রুতই তিনি চিকিৎসা বিজ্ঞানের একজন প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ব হয়ে ওঠেন। তাঁর প্রজ্ঞা ও জ্ঞানের জন্য তিনি “শেখ আল-রাইস” (প্রথম শিক্ষক) নামে পরিচিত হন।

“কানুন ফি আল-তিব্ব” এর বিষয়বস্তু

“কানুন ফি আল-তিব্ব” মূলত তিনটি অংশে বিভক্ত:

১. ব্যাধির চিহ্ন এবং লক্ষণ: এই অংশে বিভিন্ন রোগের উপসর্গ এবং লক্ষণ বিশ্লেষণ করা হয়েছে। ইবনে সিনা রোগী নির্ণয়ের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন পরীক্ষা এবং পর্যবেক্ষণের প্রক্রিয়া বর্ণনা করেছেন।

২. রোগের কারণ এবং চিকিৎসা: এখানে বিভিন্ন রোগের কারণ এবং তাঁদের চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। তিনি চারটি মৌলিক উপাদান—আগ্নি, বাতাস, জল এবং মাটি—কে মানবদেহের স্বাস্থ্য ও রোগের মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেন।

৩. ফার্মাকোলজি: এই অংশে বিভিন্ন ঔষধি গাছ ও তাদের ব্যবহার সম্পর্কিত তথ্য প্রদান করা হয়েছে। তিনি প্রাকৃতিক উপাদান থেকে তৈরি ঔষধের গুণাবলী এবং প্রয়োগের পদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।

আধুনিক চিকিৎসা শাস্ত্রে ইবনে সিনার অবদান

ইবনে সিনার “কানুন ফি আল-তিব্ব” আধুনিক চিকিৎসা শাস্ত্রে এক বিশাল ভিত্তি গড়ে তুলেছে। তাঁর চিকিৎসাবিজ্ঞান কেবল তত্ত্বের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না; বরং তিনি প্রমাণিত চিকিৎসা পদ্ধতিতে বিশ্বাসী ছিলেন। তাঁর কয়েকটি মূল অবদান হলো:

১. রোগ নির্ণয় ও লক্ষণ: রোগ নির্ণয়ে লক্ষণ বিশ্লেষণের গুরুত্ব তিনি প্রথমেই উল্লেখ করেন, যা আধুনিক চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক।

২. ব্যাধির শ্রেণীবিভাগ: ইবনে সিনা রোগকে শ্রেণীবদ্ধ করেছেন এবং তাদের চিকিৎসার জন্য পৃথক পৃথক পদ্ধতির পরামর্শ দিয়েছেন।

৩. ক্লিনিকাল প্র্যাকটিস: তাঁর রচনাগুলি চিকিৎসা শিক্ষায় আধুনিক ক্লিনিকাল প্র্যাকটিসের ভিত্তি রচনা করে।

৪. এথিক্স ইন মেডিসিন: তিনি চিকিৎসার ক্ষেত্রে নৈতিকতার গুরুত্বও তুলে ধরেন, যা আধুনিক চিকিৎসা নীতিমালার একটি অংশ।

পশ্চিমা চিকিৎসা বিজ্ঞানে প্রভাব

ইবনে সিনার “কানুন ফি আল-তিব্ব” মধ্যযুগীয় ইউরোপে একটি অত্যন্ত প্রভাবশালী গ্রন্থ হিসেবে বিবেচিত হয়। এটি ল্যাটিন ভাষায় অনুবাদিত হয় এবং বারোশ শতাব্দী থেকে সতেরোশ শতাব্দী পর্যন্ত ইউরোপীয় মেডিকেল শিক্ষায় একটি প্রধান পাঠ্যবই হিসেবে ব্যবহৃত হয়। পশ্চিমা চিকিৎসাবিজ্ঞানী ও চিকিৎসকরা তাঁর কাজকে স্বীকৃতি দিয়েছেন এবং তাঁদের গবেষণায় এটি ব্যবহার করেছেন। বিশেষ করে, টমাস আকুইনাস এবং অন্যান্য পণ্ডিতরা ইবনে সিনার দার্শনিক চিন্তাধারাকে সমর্থন করে তাঁর কাজগুলোকে শ্রীবৃদ্ধি করেছেন।

সাম্প্রতিক পোষ্ট

ফাতিমা এলিজাবেথ: ইংল্যান্ডে ইসলাম গ্রহণকারী নারীদের অনুপ্রেরণা

ফাতিমা এলিজাবেথ কেটস (মূল নাম ফ্রান্সিস এলিজাবেথ কেটস) ছিলেন ইংল্যান্ডের প্রথম মুসলিম নারীদের একজন...

গাজা গণহত্যার অভিযোগ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন পোপ ফ্রান্সিস

১৭ নভেম্বর ২০২৪ পোপ ফ্রান্সিস সম্প্রতি গাজায় ইসরায়েলি সামরিক অভিযান নিয়ে তার সবচেয়ে স্পষ্ট এবং...

মহান ন্যায়বিচার : হযরত মুসা (আঃ) এর কাহিনী থেকে শিক্ষা

হানা আলাসরি : ১৫  নভেম্বর, ২০২৪ হে ঈমানদারগণ, তোমরা ন্যায়ের উপর (অন্যদের সাথে) অবিচল থাকো, আল্লাহর...

গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ পদ্ধতি ‘গণহত্যার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ’: জাতিসংঘ কমিটি

জাতিসংঘের বিশেষ কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েল ‘ক্ষুধা ও অনাহারকে যুদ্ধের পদ্ধতি হিসেবে...

শিশুরা কি তাদের কাজের জন্য পুরস্কৃত হবে বা শাস্তি পাবে?

প্রশ্ন: শিশুরা কি তাদের কাজের জন্য পুরস্কৃত হবে বা শাস্তি পাবে? জবাব: পরম করুণাময়, পরম দয়ালু...

কেমন আছেন? গাজায় এই প্রশ্নটির উত্তর অনেক কষ্টে দিতে হয়

খান ইউনিসে একজন ফিলিস্তিনি নারী ইসরায়েলি বাহিনীর আক্রমনের পর নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে যাচ্ছেন  ৯...

৫ শতাধিক স্কলারের মতামত : ইসরায়েলকে জাতিসংঘ থেকে বাদ দেওয়া উচিত

৫০০ জনেরও বেশি স্কলারের দ্বারা স্বাক্ষরিত একটি যৌথ চিঠিতে বলা হয়েছে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের উচিত...

মার্কিন কংগ্রেসে জয়ী হলেন ফিলিস্তিনি মুসলিম নারী সহ ৪ জন মুসলিম প্রতিনিধি

যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম মুসলিম নাগরিক অধিকার এবং অ্যাডভোকেসি সংস্থা দ্য কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক...

শিশুদের ইসলামি শিক্ষায় মাতা-পিতার ভূমিকা

শিশুদের ইসলামি শিক্ষায় মাতা ও পিতার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইসলামি শিক্ষা শিশুদের মৌলিক...
পোষ্টটি শেয়ার করুন
Scroll to Top