নিশ্চয় আল্লাহ কোন জাতির অবস্থা ততক্ষণ পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন করার চেষ্টা করে। (আল কোরআন, আয়াত ১৩:১১)

২২শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
রবিবার

বাংলাদেশে ইসলামী ব্যাংকিং: ইতিহাস ও বিকাশ

বাংলাদেশে ইসলামী ব্যাংকিংয়ের ইতিহাস শুরু হয় ১৯৮৩ সালে, যখন ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড (IBBL) প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি বাংলাদেশে এবং দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম পূর্ণাঙ্গ ইসলামী ব্যাংক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ইসলামী ব্যাংকিং সিস্টেমের মূলনীতি হলো সুদ (রিবা) পরিহার করে শরীয়াহ অনুযায়ী অর্থনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করা। ইসলামী ব্যাংকিংয়ের ধারায় ব্যাংকগুলো সুদের পরিবর্তে লাভ-ক্ষতির অংশীদারিত্ব, মুরাবাহা, মুদারাবা এবং ইজারাসহ বিভিন্ন ইসলামিক আর্থিক পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকে।

ইসলামী ব্যাংকিং-এর সূচনা ও উন্নয়ন

বাংলাদেশে ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালুর উদ্যোগ আসে মূলত ১৯৭০-এর দশকের শেষদিকে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে ইসলামী ব্যাংকিং সিস্টেমের জনপ্রিয়তা বাড়ার পর বাংলাদেশেও এ বিষয়ে আগ্রহ সৃষ্টি হয়। এরপর ১৯৮০ সালে, ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (IDB) এবং স্থানীয় উদ্যোক্তাদের সহায়তায় ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড প্রতিষ্ঠিত হয়। ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড ১৯৮৩ সালের ৩০ মার্চ প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু করে।

ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থার বিস্তার

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের সফলতার পর বাংলাদেশে আরও কয়েকটি ব্যাংক ইসলামী ব্যাংকিং সিস্টেম গ্রহণ করতে শুরু করে। বর্তমানে বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি পূর্ণাঙ্গ ইসলামী ব্যাংক রয়েছে, যেমন:

  • আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড
  • এক্সিম ব্যাংক লিমিটেড
  • সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড (SIBL)
  • শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড

এছাড়াও, বেশ কয়েকটি প্রচলিত ব্যাংক তাদের অধীনে ইসলামী ব্যাংকিং শাখা চালু করেছে, যেমন সোনালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক এবং ডাচ-বাংলা ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক ইসলামী ব্যাংকিং-এর জন্য আলাদা নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা তৈরি করেছে এবং শরীয়াহ সুপারভাইজারি বোর্ডের মাধ্যমে এসব ব্যাংকের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে।

ইসলামী ব্যাংকিংয়ের মূলনীতি

বাংলাদেশে ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থা শরীয়াহ নীতির ভিত্তিতে পরিচালিত হয়। এ পদ্ধতিতে সুদ গ্রহণ এবং প্রদান নিষিদ্ধ, বরং ব্যাংকগুলো মুনাফা-ক্ষতির ভিত্তিতে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে বিনিয়োগ করে। এ ব্যবস্থায় ব্যবহৃত কিছু জনপ্রিয় পদ্ধতি হলো:

  • মুরাবাহা: পণ্য ক্রয় করে মুনাফাসহ বিক্রয় করা।
  • মুদারাবা: অংশীদারিত্ব ভিত্তিক বিনিয়োগ, যেখানে একজন মূলধন সরবরাহকারী এবং অন্যজন শ্রম বা ব্যবস্থাপনা দায়িত্ব পালন করে।
  • ইজারা: নির্দিষ্ট সময়ের জন্য পণ্য বা সম্পত্তি ভাড়া প্রদান।

চ্যালেঞ্জ এবং ভবিষ্যৎ

ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থা বাংলাদেশে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেলেও এখনো কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। সুদের নির্ভর অর্থনীতিতে ইসলামী ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করা অনেক সময় চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়ায়। এছাড়া, দক্ষ শরীয়াহ পরামর্শকের অভাব এবং আন্তর্জাতিক স্তরে ইসলামী ব্যাংকিংয়ের সাথে সম্পর্কিত মানদণ্ডের অভাবও একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

তবে বাংলাদেশের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর আগ্রহ ও গ্রহণযোগ্যতার কারণে ভবিষ্যতে ইসলামী ব্যাংকিং খাত আরও বিকাশ লাভ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সাম্প্রতিক পোষ্ট

পোষ্টটি শেয়ার করুন
Scroll to Top