নিশ্চয় আল্লাহ কোন জাতির অবস্থা ততক্ষণ পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন করার চেষ্টা করে। (আল কোরআন, আয়াত ১৩:১১)

২২শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
রবিবার

গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ পদ্ধতি ‘গণহত্যার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ’: জাতিসংঘ কমিটি

জাতিসংঘের বিশেষ কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েল ‘ক্ষুধা ও অনাহারকে যুদ্ধের পদ্ধতি হিসেবে ব্যবহার করছে এবং ফিলিস্তিনি জনগণকে সম্মিলিতভাবে আঘাত করছে। গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের যুদ্ধ গণহত্যার বৈশিষ্ট্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে, জাতিসংঘের UN Special Committee to Investigate Israeli Practices ইসরায়েলকে “যুদ্ধের পদ্ধতি হিসেবে ক্ষুধাকে ব্যবহার করার” জন্য অভিযুক্ত করেছে, যার ফলে ফিলিস্তিনিদের জীবনে “বড় মাপের বেসামরিক হতাহতের ঘটনা এবং জীবন-নাশের হুমকির পরিস্থিতি” সৃষ্টি হয়েছে।

“যুদ্ধের শুরুর পর থেকে, ইসরায়েলি কর্মকর্তারা প্রকাশ্যে এমন নীতিসমূহে সমর্থন করেছেন যার ফলে ফিলিস্তিনিদের জীবন টিকিয়ে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিস – খাদ্য, জল এবং জ্বালানি থেকে বঞ্চিত করছে।  মানবিক সাহায্যের উপর পদ্ধতিগত এবং বেআইনি হস্তক্ষেপ, রাজনৈতিক এবং সামরিক লাভের জন্য জীবনরক্ষাকারী সরবরাহকে রোধ করাকে যন্ত্র হিসেবে ব্যবহারের ইসরায়েলের অভিপ্রায়কে স্পষ্ট করে।”

৭ অক্টোবর, ২০২৩ সাল থেকে, গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধে কমপক্ষে ৪৩,৭৩৬ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১,০৩,৩৭০ জন আহত হয়েছে, বৃহস্পতিবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।

মার্চ মাসে অধিকৃত ফিলিস্তিনি অঞ্চলে জাতিসংঘের বিশেষ রিপোর্টার ফ্রান্সেস্কা আলবানিজ দ্বারা প্রকাশিত সর্বশেষ জাতিসংঘের প্রতিবেদনটি বলে যে, প্রতিবেদক এই উপসংহারে এসেছিলেন যে গাজায় ইসরায়েল গণহত্যা করছে বলে বিশ্বাস করার “যুক্তিসংগত ভিত্তি” রয়েছে।  প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে বারবার জাতিসংঘের অনুরোধের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বিচার আদালত এবং জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের রেজুলেশানের বাধ্যতামূলক আদেশ সত্ত্বেও ইসরায়েল ফিলিস্তিনি জনগণের উপর “সম্মিলিত গণহত্যা” অব্যাহত রেখেছে।  গাজায় ইসরায়েলের বিস্তৃত বোমা হামলায় “প্রয়োজনীয় পরিষেবাসমূহ ধ্বংস হয়েছে” এবং “একটি পরিবেশগত বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে যা দীর্ঘস্থায়ী ভাবে স্বাস্থ্যের প্রভাব ফেলবে।”।

২০২৪ সালের প্রথম দিকে, ২৫,০০০ টনেরও বেশি বিস্ফোরক – যা দুটি পারমাণবিক বোমার সমতুল্য – গাজায় ফেলা হয়েছিল, “বিশাল ধ্বংস এবং পানি ও স্যানিটেশন সিস্টেমের পতন, কৃষি ধ্বংস এবং বিষাক্ত দূষণের কারণ হয়েছে,” রিপোর্টে বলা হয়।

আল জাজিরার একটি তদন্তে দেখা গেছে যে যুদ্ধের এক বছরের মধ্যে, গাজায় বিস্ফোরকের পরিমাণ বেড়েছে আনুমানিক ৭৫,০০০ টন, যা ৪২ মিলিয়ন টন ধ্বংসাবশেষ তৈরি করেছে। একই সময়ে, বোমা হামলায় ১১৪টি হাসপাতাল ও ক্লিনিক ধ্বংস হয়ে গেছে এবং ১৬৫ জন ডাক্তার, ২৬০ জন নার্স, ১৮৪ জন স্বাস্থ্য সহযোগী, ৭৬ জন ফার্মাসিস্ট এবং ৩০০ জন ম্যানেজমেন্ট ও সাপোর্ট স্টাফসহ ৯৮৬ জনেরও বেশি চিকিৎসা কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে এবং সেইসাথে ৮৫ জন ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্স কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে যুদ্ধে ইসরায়েলের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার সম্পর্কে “গুরুতর উদ্বেগ” উত্থাপন করা হয়েছে, যা কেবল হামাস যোদ্ধাদেরই নয়, অনেক নারী ও শিশু সহ বেসামরিক নাগরিকদেরও হত্যা করেছে।

এদিকে, জাতিসংঘ কমিটি ইসরায়েলকে মিডিয়া সেন্সরশিপ বাড়ানোর এবং যুদ্ধের সময় ভিন্নমত দমন করার জন্য অভিযুক্ত করেছে। এটি আরো বলে যে, গাজার মাটিতে যা ঘটছে সে সম্পর্কে তার “সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করে এবং বিশ্বব্যাপী তথ্যের অ্যাক্সেস ব্লক করার ইচ্ছাকৃত প্রচেষ্টা” রয়েছে। “বিভ্রান্তিমূলক তথ্য এবং মানবিক কর্মীদের উপর আক্রমণ, জাতিসংঘের গুরুত্বপূর্ণ কাজকে দুর্বল করার, গাজার উদ্দেশ্যে যাওয়া সাহায্যের লাইফলাইনকে বিচ্ছিন্ন করার এবং আন্তর্জাতিক আইনি ব্যবস্থাকে ভেঙে ফেলার একটি সুস্পষ্ট কৌশল।”

প্রতিবেদনে জাতিসংঘের সকল সদস্য রাষ্ট্রকে তাদের আইনি বাধ্যবাধকতা বজায় রাখতে এবং ইসরায়েলের আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন বন্ধ করে তাকে জবাবদিহি করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

সূত্র: আল জাজিরা

সাম্প্রতিক পোষ্ট

পোষ্টটি শেয়ার করুন
Scroll to Top