ফিলিস্তিনের স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সৌদি আরব বুধবার রিয়াদে বৈশ্বিক জোটের প্রথম বৈঠকের আয়োজন করেছে, যেখানে আরব, ইসলামিক এবং ইউরোপীয় দেশগুলোর অংশগ্রহণে একটি দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের জন্য সমন্বিত প্রয়াসের কথা তুলে ধরা হয়। সৌদি প্রেস এজেন্সির (এসপিএ) তথ্য অনুযায়ী, এই বৈঠকে ফিলিস্তিনের জনগণের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে স্থায়ী শান্তির প্রয়োজনীয়তার কথা জোরালোভাবে তুলে ধরা হয়।
সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান বিন আবদুল্লাহ বৈঠকের উদ্বোধনী ভাষণে বলেন, ফিলিস্তিন ও লেবাননে চলমান সহিংসতা এবং ইসরায়েলের অব্যাহত আক্রমণের পরিপ্রেক্ষিতে একটি কার্যকর প্রতিক্রিয়ার প্রয়োজন। তিনি বলেন, বর্তমান সংকটময় পরিস্থিতি ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য মানবিক বিপর্যয় তৈরি করেছে এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলছে। ফারহান আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের নীতিকে কার্যকর করতে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
দুদিনব্যাপী এই বৈঠকে আন্তর্জাতিক কূটনীতিক, মানবাধিকার কর্মী এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার বিশেষজ্ঞরা অংশগ্রহণ করেছেন, যেখানে আলোচনা মূলত দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের পথে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা এবং সংকট উত্তরণের কৌশল নিয়ে হয়েছে। সৌদি আরব, মিশর, জর্ডান, কাতার এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বেশ কয়েকটি আরব দেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে ইসরায়েলি সেনাদের আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত ফিলিস্তিনিদের জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তা জোরদার এবং জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে ফিলিস্তিনে পুনর্গঠন ও সহায়তা পৌঁছানোর বিষয় অন্তর্ভুক্ত ছিল।
সেপ্টেম্বরে সৌদি আরব যে বৈশ্বিক জোটের ঘোষণা দেয়, তা ফিলিস্তিন সংকটের স্থায়ী সমাধান এবং আঞ্চলিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় একটি ঐতিহাসিক উদ্যোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে ফিলিস্তিনের ন্যায্য অধিকার, বিশেষ করে পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য একীভূত প্রচেষ্টার মাধ্যমে একটি কার্যকর কূটনৈতিক রূপরেখা প্রস্তুত করার পরিকল্পনা রয়েছে।
বিশ্বের বিভিন্ন প্রভাবশালী রাষ্ট্রও এই উদ্যোগকে সমর্থন জানিয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এই বৈঠকে দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে এবং ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকার রক্ষায় তাদের সমর্থনের কথা জানায়। বৈঠকে মানবাধিকার সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে ফিলিস্তিনিদের উপর সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো তুলে ধরা হয় এবং ইসরায়েলের ‘আগ্রাসন’ বন্ধের জন্য বৈশ্বিক চাপ প্রয়োগের আহ্বান জানানো হয়।
বৈঠক শেষে একটি সমন্বিত বিবৃতি দেওয়ার কথা রয়েছে, যাতে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অঙ্গীকারকে আরও শক্তিশালী করার প্রস্তাব দেওয়া হতে পারে।