৫০০ জনেরও বেশি স্কলারের দ্বারা স্বাক্ষরিত একটি যৌথ চিঠিতে বলা হয়েছে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের উচিত ইসরায়েলের পদ স্থগিত করা, যেমনটি ১৯৭৪ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার পদ বর্ণবাদের কারণে স্থগিত করা হয়েছিল।
আন্তর্জাতিক আইন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, সংঘাত অধ্যয়ন, রাজনীতি এবং গণহত্যা বিষয়ে বিশেষজ্ঞ এমন ৫০০ জনেরও বেশি স্কলার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ থেকে ইসরায়েলকে বাদ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ১৯৭৪ সালে বর্ণবাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ হিসাবে দক্ষিণ আফ্রিকাকে গণতন্ত্রে রূপান্তর না হওয়া পর্যন্ত পদ স্থগিত করে।
ইসরায়েলের পদ স্থগিত করার জন্য স্কলাররা যুক্তি দেন যে, জাতিসংঘের সনদ, নিরাপত্তা পরিষদের রেজুলেশন এবং আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) আদেশের লঙ্ঘনসহ সাত দশকেরও বেশি সময় ধরে আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি ক্রমাগত অবজ্ঞার কারণে এ দেশের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী মামলা রয়েছে ।
একটি যৌথ চিঠিতে স্বাক্ষরকারী স্কলাররা ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ইসরায়েল রাষ্ট্র কর্তৃক সংঘটিত বিস্তৃত অপরাধ তালিকাভুক্ত করেছেন, যে সকল অপরাধ আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী। চিঠিতে বলা হয়েছে যে ইসরায়েল তার ইতিহাস জুড়ে সাধারণ পরিষদের প্রস্তারের প্রতি “অপমান জনক আচরন প্রদর্শন করেছে”। এর মধ্যে রয়েছে ইসরায়েলের রেজুলেশন ১৯৪ (III) (১৯৪৮) লঙ্ঘন, ফিলিস্তিনিদের প্রত্যাবর্তনের অধিকার এবং রেজুলেশন ১৮১ (II) (১৯৪৭), ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বকে অন্তর্ভুক্ত করে। রেজুলিউশন ২৭৩ (III) (১৯৪৯) এর অধীনে দুটি প্রস্তাবকে জাতিসংঘে ইসরায়েলের ভর্তির শর্ত হিসেবে দেখা হয়েছিল। উপরন্তু, ৭ অক্টোবর ২০২৩ সাল থেকে ইসরায়েল ক্রমাগতভাবে আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের রেজুলেশন লঙ্ঘন করেছে, যার মধ্যে গাজা সংক্রান্ত রেজুলেশনও রয়েছে। এটি মূলত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের বেআইনি দখল নিয়ে ইসরায়েলের দ্বারা কয়েক দশক ধরে লঙ্ঘন করা নিরাপত্তা পরিষদের রেজুলেশনের তালিকায় যোগ করেছে। স্কলাররা বলেছেন, নিরাপত্তা পরিষদের রেজুলেশনের এই ধরনের অবমাননা জাতিসংঘের সনদের ২৫ অনুচ্ছেদের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন, যা জাতিসংঘ থেকে বহিষ্কারের পরোয়ানা দাবী করে।
জাতিসংঘ সনদের অনুচ্ছেদ ৬-এর অধীনে, সাধারণ পরিষদের নিরাপত্তা পরিষদের সুপারিশের ভিত্তিতে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রকে বহিষ্কার করার ক্ষমতা রয়েছে, যদি রাষ্ট্রটি সনদে অন্তর্ভুক্ত নীতি “নিরবচ্ছিন্নভাবে লঙ্ঘন” করে থাকে।
স্কলাররা আরো বলেন যে ২০০৪ সালে ইসরায়েলকে ফিলিস্তিনি জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারকে সম্মান করার আহ্বান জানিয়ে একটি উপদেষ্টা মতামত দেওয়ার পর, ২০২৪ সালের জুলাইয়ে তার দখলদারিত্বের অবৈধতা নিশ্চিত করে এবং ২০২৪ সালে ইসরায়েল আইসিজে দ্বারা অনুমোদিত আইনি মতামতকেও উপেক্ষা করেছে।
কলোরাডো ইউনিভার্সিটির আইনের অধ্যাপক মরিয়ম জামশিদি বলেছেন, “ইসরায়েলকে সাধারণ পরিষদ থেকে স্থগিত করার আইনি মামলা দক্ষিণ আফ্রিকার চেয়েও শক্তিশালী। ইসরায়েল কেবলমাত্র সেই অধিকার লঙ্ঘন করেনি। কয়েক দশক ধরে ফিলিস্তিনি জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণ, বর্ণবৈষম্যের অপরাধ সংঘটনের মাধ্যমে, আন্তর্জাতিক বিচার আদালতও স্পষ্ট করেছে যে সাধারণ পরিষদ এবং এর সদস্য রাষ্ট্রগুলিকে অবশ্যই সেই লঙ্ঘনের সমাধান করতে হবে,”
আন্তর্জাতিক আইনি বাধ্যবাধকতা লঙ্ঘনের পাশাপাশি, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের সংস্থা এবং শান্তিরক্ষীদের জন্য নিযুক্ত সুরক্ষা লঙ্ঘনের অভিযোগও রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ফিলিস্তিনিদের জন্য জাতিসংঘের ত্রাণ সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ) নিষিদ্ধ করা এবং গাজায় এর কর্মীদের হত্যা করা; লেবাননে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীদের উপর হামলা; জাতিসংঘ মহাসচিবকে ব্যক্তিত্বহীন ঘোষণা করা এবং ২০০৮ সাল থেকে অধিকৃত ফিলিস্তিনে জাতিসংঘের বিশেষ দূতদের প্রবেশে বাধা দেওয়া।
১৯৪৮ সালের গণহত্যা কনভেনশন লঙ্ঘনের জন্য গাজায় ইসরায়েলের চলমান আক্রমণের বিষয়ে ডিসেম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকার একটি মামলায় ইসরায়েল আইসিজে-এর সামনে অভিযোগের মুখোমুখি হচ্ছে। যে আবেদনে অভিযোগ করা হয়েছে যে ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের জাতিগত নির্মূল করার উদ্দেশ্যে গণহত্যা চালাচ্ছে।
সূত্র: মিডল ইস্ট আই