২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
বৃহস্পতিবার
Marquee Tags

ইসলামী বার্তার নতুন সংস্করণের কাজ চলছে। ফলে কিছু বৈশিষ্ট্য বা বিভাগ সাময়িকভাবে সীমিত রয়েছে। ইনশাআল্লাহ খুব শ্রীঘ্রই পূর্ণাঙ্গ সংস্করণ চালু হবে।

মুহম্মদ বিন কাসিমের সিন্ধু বিজয়: উপমহাদেশে ইসলামের সূচনা

মুহম্মদ বিন কাসিমের সিন্ধু বিজয় : উপমহাদেশে ইসলামের সূচনা

মুহম্মদ বিন কাসিম ছিলেন একজন আরব সেনাপতি, যিনি খলিফা আল-ওয়ালিদ ইবনে আবদুল মালিকের শাসনামলে (৭০৫–৭১৫ খ্রি.) সিন্ধু অঞ্চল আক্রমণ করেছিলেন। মুহম্মদ বিন কাসিমের সিন্ধু বিজয় ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হয়। তার অভিযানের ফলস্বরূপ ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলামের প্রভাব বৃদ্ধি পায় এবং অঞ্চলটির রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পরিবেশে পরিবর্তন ঘটে।

সিন্ধু বিজয়ের পটভূমি

খলিফা ওমর ইবনে খাত্তাবের সময় থেকে মুসলিমরা সিন্ধু অঞ্চলের প্রতি আগ্রহ দেখায়। সিন্ধু অঞ্চল ছিল ভারতবর্ষের এক ধনী অঞ্চল, যার অবস্থান কৌশলগত দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। বিভিন্ন বাণিজ্য পথ এবং সমুদ্রবন্দর হওয়ায় এখানে বিভিন্ন সংস্কৃতি ও বাণিজ্যের মেলবন্ধন ছিল। আরবরা বিভিন্ন সময় সিন্ধু অঞ্চলে অভিযান পরিচালনা করলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সফলতা পায়নি। তবে একটানা কয়েকটি ঘটনার ফলে খলিফা আল-ওয়ালিদ ইবনে আবদুল মালিক সিন্ধু আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেন এবং মুহম্মদ বিন কাসিমকে এই অভিযানের দায়িত্ব দেন।

মুহম্মদ বিন কাসিমের আগমন ও যুদ্ধের প্রস্তুতি

মুহম্মদ বিন কাসিম ছিলেন মাত্র সতেরো বছর বয়সে একজন মেধাবী ও অভিজ্ঞ সেনাপতি। তিনি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে সেনাবাহিনী পরিচালনা করতে পারতেন। খলিফা আল-হজ্জাজ ইবনে ইউসুফের নির্দেশে, তিনি সিন্ধু অঞ্চলে প্রায় ৬ হাজার সৈন্য নিয়ে অভিযানে আসেন। সেই সঙ্গে ছিল কয়েকশো উট ও ঘোড়া এবং যুদ্ধের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম।

মুহম্মদ বিন কাসিম প্রথমে মাকরান অঞ্চল দখল করেন এবং ধীরে ধীরে সিন্ধু নদী অঞ্চলের দিকে এগিয়ে যান। সেনাপতি রাজা দাহিরের বাহিনী শক্তিশালী হলেও মুসলিম বাহিনীর সামনে টিকে থাকতে পারেনি। সিন্ধুর বিভিন্ন এলাকায় ছোটখাটো যুদ্ধের মাধ্যমে মুহম্মদ বিন কাসিম দ্রুত দখল প্রতিষ্ঠা করেন।

দেবালের যুদ্ধ ও সিন্ধুর পতন

দেবাল শহরের যুদ্ধ ছিল মুহম্মদ বিন কাসিমের সিন্ধু বিজয়ের এক অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। দেবাল ছিল সিন্ধু অঞ্চলের অন্যতম প্রধান বন্দর শহর। এখানে রাজা দাহিরের সেনাবাহিনী শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিল। তবে কৌশল ও বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে মুহম্মদ বিন কাসিম দেবাল দখল করতে সক্ষম হন।

এরপর মুহম্মদ বিন কাসিম সিন্ধুর রাজধানী আরোরের দিকে অগ্রসর হন এবং সেখানে চূড়ান্ত যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধে রাজা দাহির নিহত হন, এবং এর ফলে পুরো সিন্ধু অঞ্চলের প্রতিরোধ ভেঙে যায়। মুহম্মদ বিন কাসিমের সেনাবাহিনী দ্রুত শহরগুলো দখল করে নেয় এবং সেগুলোতে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা করে।

সিন্ধু বিজয়ের ফলাফল ও প্রভাব

মুহম্মদ বিন কাসিমের সিন্ধু বিজয় ছিল ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলামের প্রথম সাফল্যমণ্ডিত আগমন। এই বিজয়ের মাধ্যমে সেখানে ইসলামের প্রসার ঘটে এবং শাসন কাঠামোয় মুসলিমদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। মুহম্মদ বিন কাসিম বিজিত অঞ্চলে বেশ কয়েকটি নীতি প্রয়োগ করেন, যার মধ্যে ছিল হিন্দু ও বৌদ্ধদের ধর্মাচরণের স্বাধীনতা প্রদান এবং স্থানীয় জনগণের কর হ্রাস। তার এই উদার ও সহনশীল নীতির ফলে স্থানীয় জনগণ ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হয়।

উপসংহার

মুহম্মদ বিন কাসিমের সিন্ধু বিজয় ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলামের এক নতুন যুগের সূচনা করেছিল। এই বিজয়ের মাধ্যমে আরবদের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাব প্রতিষ্ঠিত হয়, যা পরবর্তীতে ভারতীয় ইতিহাসে ব্যাপক প্রভাব ফেলে।

পোষ্টটি শেয়ার করুন
Scroll to Top