ইসলামী বার্তা ডেস্ক
ভারী বৃষ্টিতে প্লাবিত দক্ষিণ গাজার খান ইউনিস হাসপাতাল [ছবি: মোহাম্মদ সালেম, রয়টার্স]
যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার দুর্দশা আরও বাড়াচ্ছে ভারী বৃষ্টি। ইসরায়েলি গণহত্যার প্রেক্ষিতে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলো শীতের ঠান্ডায় তাদের শিশুদের উষ্ণ রাখার জন্য সংগ্রাম করছে।
একটানা কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টিতে গাজার শত শত অস্থায়ী আশ্রয় শিবির প্লাবিত হয়েছে। এতে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের দুর্ভোগ আরও বেড়েছে, কারণ ইসরায়েল এখনও মানবিক সহায়তা প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রেখেছে। গাজাজুড়ে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলো তাদের শিশুদের উষ্ণ রাখার পাশাপাশি বেঁচে থাকার সামান্য জিনিসপত্র রক্ষা করার জন্য লড়াই করছে।
আবহাওয়া আগামী কয়েক দিনে উন্নতি হওয়ার আশা থাকলেও অনেকের জন্য তা অনেক দেরি হয়ে গেছে। গত সপ্তাহে অন্তত সাতজন হাইপোথার্মিয়ায় মারা গেছে। যার মধ্যে ছয় জনই শিশু।
শীতল আবহাওয়া গাজার ইতোমধ্যেই ভেঙে পড়া স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাকে আরও চাপের মুখে ফেলেছে। ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছে, প্লাবিত আশ্রয় শিবিরগুলোর তাঁবুগুলোর পানির স্তর ৩০ সেন্টিমিটার (১২ ইঞ্চি)-এরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা ঠান্ডার মধ্যে অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে গেছে এবং তাদের জিনিসপত্র এবং গদি নষ্ট হয়েছে। জরুরি পরিষেবা বিভাগ জানিয়েছে, উত্তর গাজা সিটি, দক্ষিণ খান ইউনিস এবং কেন্দ্রীয় দেইর আল-বালাহ এলাকাসহ অনেক স্থানে তাঁবুগুলো প্লাবনের কারণে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। গাজার ২৪ লাখ অধিবাসীর জন্য পানযোগ্য পানি, খাদ্য ও ওষুধের চরম ঘাটতির মধ্যে, লক্ষাধিক বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি দেইর আল-বালাহ, খান ইউনিস এবং রাফাহ এলাকায় দ্রুত তৈরি করা অনুপযুক্ত তাঁবুতে গাদাগাদি করে বসবাস করছে।
গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যায় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে অন্তত ৪৫,৫৪১ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১,০৮,৩৩৮ জন আহত হয়েছে।
সূত্র: আল-জাজিরা
মুসলিম উম্মাহর প্রতি আহ্বান
ইসলাম কোনো ব্যক্তিগত ধর্ম নয়। মুমিন ব্যক্তিকে অবশ্যই তার প্রতিবেশী ব্যক্তি, দেশ, এবং বিশেষত ফিলিস্তিন ও গাজাবাীদের সাহায্যে যথাসাধ্য চেষ্টা করতে হবে। যেমন রাসূল (সা.) বলেছেন, “সে ব্যক্তি মুমিন নয় যে, নিজে পেট ভরে খায় অথচ তার প্রতিবেশী ক্ষুধার্ত অবস্থায় থাকে।” (আল-মুসলিম)
ইসলামই একমাত্র সত্য ও মানবতাবাদী জীবনব্যবস্থা যেখানে বিপন্ন ও দূর্দশাগ্রস্ত মানুষের সাহায্য করাকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সওয়াবের কাজ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। এবং নিজের মুমিন ভাইকে সাহায্য করা আবশ্যক বলে নির্দেশ দিয়েছে। কোরআন ও হাদিসে এই বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।
রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি দয়া করবে না, আল্লাহও তার প্রতি দয়া করবেন না।” (বুখারি ৬০১৩, ৭৩৭৬, মুসলিম ২৩১৯)
নবী (সা.) আরো বলেন: “একজন মুসলমান তার ভাইয়ের সাহায্যে থাকে, যতক্ষণ না সে তার জন্য সাহায্য করে। এবং যে ব্যক্তি অন্যের সমস্যা সমাধান করবে, আল্লাহ তার সমস্যাগুলি সমাধান করবেন।” (সহীহ মুসলিম)
দোয়া ও দোয়া কবুলের অন্যতম শর্ত
আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া এবং বিশেষত বিপন্ন মুসলিম দেশ সমূহের জন্য দোয়া করা প্রতিটি মুসলমানের কর্তব্য। আল্লাহ বলেছেন, “তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব।” (সূরা আল-গাফির, ৪০:৬০)
দোয়া কবুলের অন্যতম শর্ত হলো দয়া মনোভাব ও সহযোগীতা মূলক কর্মসূচী।
আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রা) থেকে বর্ণিত হয়েছে, নবী (সাঃ) বলেছেন: “রহমান-আল্লাহ দয়াশীলদের প্রতি দয়া করেন। তোমরা যমীনবাসীদের প্রতি দয়া কর, যিনি আসমানের উপরে তিনি তোমাদের প্রতি দয়া করবেন।” (সুনানে আবু দাউদ – ৪৯৪১)
বিভেদ ভুলে ঐক্য ও সংহতি স্থাপন
মুসলিম জাতির মধ্যে শিয়া-সুন্নি বিভেদ ও মতবিরোধ দূর করে ঐক্যবদ্ধ হওয়া খুব প্রয়োজন। এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহ তায়ালা নির্দেশ দিয়েছে : “তোমরা সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে আল্লাহর রশি শক্ত করে ধরো এবং বিভেদ সৃষ্টি করো না।” (সূরা আল-ইমরান, ৩:১০৩)
যাকাত ও সদকার মাধ্যমে সহায়তা
অর্থনৈতিকভাবে দূর্দশাগ্রস্ত গাজাবাসীদের সাহায্যের জন্য যাকাত ও সদকা অন্যতম মাধ্যম।
প্রতিটি দেশে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা
মুসলিম জাতির দুর্দশার একটি বড় কারণ হলো সামাজিক ও রাজনৈতিক অবিচার। মুসলিম জাতিকে সাহায্য করার জন্য ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা অত্যন্ত জরুরি।
প্রবিত্র রআনে বলা হয়েছে : “তোমরা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করো, এটি আল্লাহর কাছাকাছি নিয়ে যায়।” (সূরা আল-মায়িদা, ৫:৮)
আরও বলা হয়েছে: “তোমরা মানুষের মধ্যে কল্যাণের দিকে আহ্বান করো এবং ভালো কাজের আদেশ দাও।” (সূরা আল-ইমরান, ৩:১০৪)
মানবিক সাহায্য ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা
মানবিক সংগঠন, চ্যারিটি এবং দাতব্য প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে যুদ্ধবিধ্বস্ত ও বিপন্ন গাজাবসীদের সাহায্য করা প্রয়োজন । খাদ্য, বাসস্থান, চিকিৎসা এবং শিক্ষার মতো প্রাথমিক চাহিদাগুলিতে সহায়তা করা দরকার। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মুসলিম সংগঠন সমূহের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করে তাদের সমস্যাগুলির সমাধানে অংশীদারিত্ব করা জরুরি।
বাস্তুচ্যুত মুসলিমদের জন্য ত্রাণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা ও বিশ্বে মুসলিমদের উপর অন্যায় ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে কথা বলা এবং তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করার ক্ষেত্রে মুসলিম জাতির সমস্যাগুলি বোঝা এবং বাস্তবসম্মত সমাধানে সক্রিয় ভূমিকা পালন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।