নিশ্চয় আল্লাহ কোন জাতির অবস্থা ততক্ষণ পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন করার চেষ্টা করে। (আল কোরআন, আয়াত ১৩:১১)

২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
সোমবার

কাশ্মীরের কান্না: মুসলিম শাসকদের উদার নীতি ও বর্তমান সংকট

কাশ্মীর উপত্যকা, যার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং ঐতিহাসিক ঐতিহ্য বিখ্যাত, আজ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংকটে বিপর্যস্ত। এই সংকটের পিছনে অনেকগুলো ঐতিহাসিক এবং রাজনৈতিক কারণ রয়েছে। কাশ্মীরের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে আলোচনা করতে গেলে মুসলিম শাসকদের শাসনকাল এবং তাঁদের বিভিন্ন নীতির দিকে নজর দিতে হয়। বিশেষত, ভিন্ন জাতি ও ধর্মের প্রতি মুসলিম শাসকদের নীতি এবং তাঁদের উদারতা কাশ্মীরের সামাজিক-সাংস্কৃতিক পরিবেশে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলেছে।

কাশ্মীরের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট

কাশ্মীরের ইতিহাসে মুসলিম শাসন শুরু হয় চতুর্দশ শতাব্দীতে। সুলতান শাহ মীর এই উপত্যকায় মুসলিম শাসনের সূচনা করেন এবং পরে বিভিন্ন মুসলিম শাসক কাশ্মীরে শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁদের শাসন নীতি ছিল উদার এবং সহনশীল। এই সময়ে হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করার জন্য নানা রকম উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। মুসলিম শাসকদের এই উদারতা ও ভিন্ন ধর্মের প্রতি সহনশীলতা কাশ্মীরের বহুজাতিক সমাজ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।

ভিন্ন জাতি ও ধর্মের প্রতি মুসলিম শাসকদের উদারতা

মুসলিম শাসকেরা কাশ্মীর উপত্যকায় ধর্মীয় স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। হিন্দু, বৌদ্ধ এবং অন্যান্য সম্প্রদায়ের মানুষও মুসলিম শাসকদের অধীনে তাঁদের নিজস্ব ধর্ম ও সংস্কৃতিকে অবাধে চর্চা করতে পারতেন। ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং ভিন্ন জাতির প্রতি উদার দৃষ্টিভঙ্গি কাশ্মীরের ঐক্য ও সামাজিক স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে সহায়ক ছিল।

কিছু মুসলিম শাসক, যেমন জয়ন-উল-আবিদীন, যিনি “বুদ শাহ” নামে পরিচিত, তাঁর শাসনকালে ধর্মীয় সহনশীলতার উদাহরণ সৃষ্টি করেন। তিনি হিন্দু ব্রাহ্মণদেরকে প্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দেন এবং তাঁদের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে সমর্থন দেন। এই ধরনের উদার নীতি কাশ্মীরের সমাজে শান্তি ও সম্প্রীতির পরিবেশ বজায় রেখেছিল।

ভিন্ন জাতি তোষণের প্রভাব এবং বর্তমান সংকট

মুসলিম শাসকদের ভিন্ন জাতি ও ধর্মের প্রতি উদার মনোভাবের ফলে কাশ্মীরের সমাজে একটি বহুজাতিক সংস্কৃতির বিকাশ ঘটে। তবে, সময়ের সাথে সাথে বহিরাগত প্রভাব এবং রাজনৈতিক ঘটনাবলীর কারণে কাশ্মীরের স্থিতিশীলতা ব্যাহত হয়। উপমহাদেশ বিভক্তির পর কাশ্মীর একটি বিতর্কিত অঞ্চল হয়ে ওঠে এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক শক্তির প্রভাবের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়।

বর্তমান সময়ে কাশ্মীরের সামাজিক ও রাজনৈতিক সংকটের মূলে রয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক এজেন্ডা এবং ক্ষমতার লড়াই। অনেকের মতে, কাশ্মীরের বর্তমান সংকটের মূল কারণগুলোর মধ্যে একটি হলো বহিরাগত শক্তির হস্তক্ষেপ এবং কাশ্মীরের জনগণের দীর্ঘস্থায়ী আত্মপরিচয়ের জন্য লড়াই।

কাশ্মীরের কান্না শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক বা ধর্মীয় সংকট নয়; এটি একটি মানবিক সংকটও। মুসলিম শাসকদের উদার শাসননীতি এবং ভিন্ন জাতি ও ধর্মের প্রতি সহনশীল মনোভাব কাশ্মীরের ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বর্তমান সংকটের সমাধান খুঁজে পেতে হলে কাশ্মীরের এই ঐতিহ্যকে সম্মান দিতে হবে এবং বহুজাতিক ঐক্যের ধারণাকে পুনরুজ্জীবিত করতে হবে। শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজন সকল পক্ষের মধ্যে সংলাপ এবং সহযোগিতা।

পোষ্টটি শেয়ার করুন
Scroll to Top