নিশ্চয় আল্লাহ কোন জাতির অবস্থা ততক্ষণ পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন করার চেষ্টা করে। (আল কোরআন, আয়াত ১৩:১১)

২৩শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
রবিবার

গাজা থেকে ক্যালিফোর্নিয়া: যে আগুন যুক্ত করছে আমাদের সবাইকে

আহমাদ ইবসাইস

পালিসেডসের অগ্নিকাণ্ডের একটি দৃশ্য, যা লস অ্যাঞ্জেলেস শহরে শুরু হয়েছিল, ৭ জানুয়ারি ২০২৫ থেকে। (ছবি: ক্যালিফোর্নিয়া ডিপার্টমেন্ট অফ ফরেস্ট্রি অ্যান্ড ফায়ার প্রোটেকশন )

ফিলিস্তিন এবং লস অ্যাঞ্জেলেসে চলমান দাবানল একই রোগের লক্ষণ। যেটা এমন একটি ব্যবস্থা যা সংরক্ষণের চেয়ে বিজয়ী হওয়া, মানুষের চেয়ে মুনাফা লাভ করা, এবং অস্তিত্বের চেয়ে সম্প্রসারণকে বেশি মূল্য দেয়।

গত কয়েকদিন ধরে আমি আমার ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে দেখছি কিভাবে ঘরবাড়ি, ইতিহাস এবং স্মৃতিগুলো পুড়ে যাচ্ছে। কিন্তু এইবার এটি গাজার আগুন নয়। আমি ক্যানিফোর্নিয়ার পালিসেডসকে পুড়তে দেখছি। পাহাড়গুলো যেন আগুনে বেঁচে আছে, আরেকটি ধ্বংসযজ্ঞের প্রতিধ্বনি যা হাজার মাইল দূরে চলমান। গত পনেরো মাস ধরে আমি টিভির পর্দায় ও খবরের শিরোনামে গাজার ভূমি ও মানুষকে পুড়তে দেখেছি। এখন আমি যখন একটি আমেরিকান শহরের আকাশ ধোঁয়ায় ভরে যেতে দেখি, তখন এই বিপর্যয়গুলোর মধ্যকার দূরত্বকে এক করে একটি তীব্র সত্যে পরিণত হতে দেখি: এই আগুন ধ্বংসের একই ভাষায় কথা বলে – তা হচ্ছে ঔপনিবেশিকতা।

পালিসেডসের আগুন শুধু ক্যালিফোর্নিয়ার বন্য আগুন নয় – এটি একটি আয়না যা সংযুক্ত বিপর্যয়ের বৈশ্বিক সংকটকে প্রতিফলিত করে। যখন আমি চোখ বন্ধ করি, চিত্রগুলো একসাথে মিলে যায়: ক্যালিফোর্নিয়ার জ্বলন্ত পাহাড়, গাজা এবং ঐতিহাসিক ফিলিস্তিনের জ্বলন্ত জলপাই বাগান, ধোঁয়ায় ঢাকা দিগন্ত যা কোনো সীমান্ত চেনে না।

ল্যাঙ্কাস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা দেখিয়েছে যে ৭ অক্টোবরের পরের প্রথম ষাট দিনে গাজার সামরিক প্রতিক্রিয়া এমন গ্রিনহাউস গ্যাস উৎপন্ন করেছিল যা বিশটি জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ দেশের বার্ষিক নির্গমনের সমান। শুধু অক্টোবর ২০২৩-এ, ইসরায়েল গাজায় ২৫ হাজার টন বোমা ফেলেছিল, যা ১,৫০,০০০ টন কয়লা পোড়ানোর সমতুল্য গ্রিনহাউস গ্যাস উৎপন্ন করেছে। ডিসেম্বরের মধ্যে অস্ত্র সরবরাহকারী মার্কিন কার্গো ফ্লাইট সমূহ ৫০ মিলিয়ন লিটার জেট জ্বালানি খরচ করেছিল, যা ১,৩৩,০০০ টন CO2 নির্গত করেছিল – যা গ্রেনাডার বার্ষিক নির্গমনের চেয়েও বেশি।

এই পরিবেশগত বিপর্যয় শুধু চলমান গণহত্যার মধ্য দিয়ে শুরু হয়নি। কয়েক দশক ধরে ফিলিস্তিনিরা তাদের পরিবেশের সাথে টেকসইভাবে বসবাস করছিল, আদিবাসী ভূদৃশ্য বজায় রেখে তরমুজ থেকে জলপাই পর্যন্ত বিভিন্ন ফসল উৎপাদন করছিল। ১৯৬৭ সাল থেকে, ইসরায়েল দখলকৃত ফিলিস্তিনি অঞ্চলে অন্তত ২৫ লাখ গাছ উপড়ে ফেলেছে, যার মধ্যে প্রায় ১০ লাখ জলপাই গাছ ছিল, যা অনেক ফিলিস্তিনির জন্য খাদ্য ও আয়ের প্রধান উৎস। ইসরায়েল এই গাছগুলোকে পরিবর্তন করেছে ইউরোপ থেকে আমদানিকৃত গাছ দিয়ে, যা সম্ভবত তাদের ইউরোপীয় শিকড়ের প্রতিফলন।

যখন আমরা যুদ্ধের পরিকাঠামোর জলবায়ু খরচ অন্তর্ভুক্ত করি – সুড়ঙ্গ, দেয়াল, সামরিক স্থাপনা ইত্যাদি সহ – ৪৫০,০০০ মেট্রিক টন CO2 সমতুল্য হয় তার মোট পরিমান, যা ৩৩টি দেশের বার্ষিক কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমনের চেয়েও বেশি।

গাজার কৃষকদের কথা ভাবি, যারা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে ১৭০ বর্গকিলোমিটার উর্বর জমি চাষ করতেন। এখন, স্যাটেলাইট চিত্রগুলোতে দেখা যায়- বাগানের জায়গায় ধ্বংসস্তূপ।

প্রকৃত পক্ষে পৃথিবীর যে কোান ক্ষত আমাদের নিজস্ব ক্ষত। গাজায় যা সহ্য করা হচ্ছে, তা সর্বত্র সহ্য করা হয় না। আজ তাদের ক্ষেতগুলো হাজার পাউন্ডের বোমার নিচে পুড়ছে; কাল আমাদের বনভূমি পুড়ছে। আমাদের মধ্যে সংযোগকারী এই আগুন এই সত্যটি দেখানোর দাবি করে যে,  আমরা হয় এই ধ্বংসের বিরুদ্ধে একসাথে দাঁড়াবো , অথবা আমরা আলাদা আলাদা ভাবে পুড়ব।

সাম্প্রতিক পোষ্ট

পোষ্টটি শেয়ার করুন
Scroll to Top