নিশ্চয় আল্লাহ কোন জাতির অবস্থা ততক্ষণ পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন করার চেষ্টা করে। (আল কোরআন, আয়াত ১৩:১১)

২৩শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
রবিবার

প্রকৃত মুসলিমরা কেন ভ্যালেন্টাইনস ডে উদযাপন করে না?

ইসলামী বার্তা ডেস্ক

প্রশ্ন: ভালোবাসা দিবস মুসলিমরা কেন উদযাপন করে না, যখন এটি ভালোবাসার প্রতীক? আমার মনে হয়, সব ধর্মেই ভালোবাসাকে ভালো হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

উত্তর: ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা, যা একজন মুসলিমের চিন্তাভাবনা, বিশ্বাস ও দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডকে প্রভাবিত করে। 

ভালোবাসা দিবসের ইতিহাস, এর উৎপত্তি এবং আজকের দিনে এই উদযাপন যে মূল্যবোধকে প্রচার করে, তা যদি আপনি বিশ্লেষণ করেন, তাহলে আপনার প্রশ্নের উত্তর স্পষ্ট হয়ে যাবে। মুসলিমরা কোনো কিছু অন্ধভাবে অনুসরণ করে না। ইসলাম মানুষের মধ্যে ভালোবাসাকে উৎসাহিত করে এবং উপহার বিনিময় ভালোবাসা ও সুসম্পর্ক বৃদ্ধির একটি উপায়। তবে ভালোবাসা প্রকাশের বিষয়টি কোনো নির্দিষ্ট দিনে সীমাবদ্ধ নয়; বরং তা সারাবছরই হওয়া উচিত।

কোনো দ্বন্দ্ব নেই
একজন মুসলিমের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে, তার বাহ্যিক কর্মকাণ্ড এবং বিশ্বাসের মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব না থাকে। মুসলিমরা সর্বদা রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর অনুসরণে আল্লাহর প্রতি আনুগত্য প্রকাশের চেষ্টা করে। ইসলাম শুধু কিছু উপাসনার বিধান নয়; বরং এটি নির্দেশিকা ও সামাজিক দায়িত্ববোধের সমষ্টি, যা মুসলিমদের আচার-আচরণ, মিথস্ক্রিয়া ও সামাজিক দায়বদ্ধতাকে প্রভাবিত করে। “মুসলিম” শব্দের অর্থ হলো, “যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করে”। তাই একজন প্রকৃত মুসলিম তার ব্যক্তিগত ইচ্ছার চেয়ে আল্লাহর বিধানের প্রতি বেশি গুরুত্ব দেয়। আল্লাহ মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ থাকার নির্দেশ দিয়েছেন এবং কাফেরদের পথ অনুসরণ করতে নিষেধ করেছেন। ফলে, প্রকৃত মুসলিম এমন কোনো উৎসব বা রীতি অনুসরণ করে না, যার ইসলামে ভিত্তি নেই।

ভুল জনতার অনুসরণ করো না
একজন মুসলিম যেকোনো উদযাপনের আগে ভাবে— আমার কি করা উচিত? আল্লাহ কি এতে খুশি হবেন? নবী (সাঃ) বলেছেন: “যে ব্যক্তি কোনো জাতির অনুকরণ করে, সে তাদেরই একজন।” (আবু দাউদ) ফলে, মুসলমানরা এমন কোনো উৎসব উদযাপন করে না, যা রাসুল (সাঃ) এবং সাহাবিরা পালন করেননি।

ভ্যালেন্টাইনস ডে: ইতিহাস ও বর্তমান প্রেক্ষাপট
ভ্যালেন্টাইনস ডে মূলত একটি রোমান উৎসব, যা “ভ্যালেন্টাইন” নামে এক ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ডের সঙ্গে সম্পর্কিত। এটি খ্রিস্টপূর্ব ৪র্থ শতাব্দীতে রোমান দেবতা লুপারকাস-এর সম্মানে পালন করা হতো। এ সময় যুবক-যুবতীদের মধ্যে লটারি করে জোড়া বানানো হতো, যা অনৈতিক সম্পর্কের দিকে পরিচালিত করত। আজকের যুগেও, ভ্যালেন্টাইনস ডে বিবাহপূর্ব ও অনৈতিক সম্পর্ককে উৎসাহিত করে, যা ইসলামের দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য নয়। এটি অপ্রয়োজনীয় ব্যয়ের দিকে ঠেলে দেয় এবং সমাজে অসন্তোষ সৃষ্টি করতে পারে।

ইসলামে ভালোবাসার প্রকৃত ধারণা
ইসলাম পারিবারিক বন্ধন, সামাজিক ভ্রাতৃত্ব এবং সবার প্রতি সদ্ভাব বজায় রাখাকে উৎসাহিত করে। ভালোবাসা প্রকাশের জন্য কোনো নির্দিষ্ট দিনের প্রয়োজন নেই, বরং তা প্রতিদিনই হওয়া উচিত। নবী (সাঃ) বলেছেন: “তোমরা উপহার বিনিময় করো, এতে পারস্পরিক ভালোবাসা বৃদ্ধি পায়।” (বুখারি) ভ্যালেন্টাইনস ডে মূলত বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে প্রচারিত একটি সংস্কৃতি, যার পেছনে মূলত ব্যবসায়িক স্বার্থ কাজ করে। তাই একজন সচেতন মুসলিমের উচিত এই উৎসব থেকে দূরে থাকা।

সাদাফ ফারুকী সম্পর্কে:
সাদাফ ফারুকী করাচি, পাকিস্তানের একজন ব্লগার ও ফ্রিল্যান্স লেখক। তিনি ৩০০-এর বেশি নিবন্ধ লিখেছেন, যা তার ব্লগ Sadaf’s Space (sadaffarooqi.wordpress.com)-এ পাওয়া যায়। তার লেখা ইসলামিক নন-ফিকশন বইগুলো অ্যামাজন ও কিন্ডলেও পাওয়া যায়। লিংক (www.amazon.com/author/sadaffarooqi)।

সাম্প্রতিক পোষ্ট

পোষ্টটি শেয়ার করুন
Scroll to Top