Questioner
মুহাম্মদ ওসমান
Question

অনুগ্রহ পূর্বক হাম্বলী মাজহাব অনুসারে জবাব দিবেন।আমি হাম্বলী মুকাল্লিদ। ১)তাকবীরে তাহরিমার সময় হাত কতুটুকু পর্যন্ত তুলব? ২)আমিন জোরে নাকি আস্তে বলব নামাজে? ৩)হাম্বলী হানাবেলারা আকিদাগত ভাবে কয় দলে বিভক্ত?ফুজালায়ে হানাবেলারা যদিহক হয় তাহলে ফুজালায়ে হানাবিলার অনুসারী ইমাম দের নাম বলুন। আর গুনাবাতে হানাবিলা যদি দেহবাদী হয়ে থাকে তাহলে এই দেহবাদী আকিদার হাম্বলী আলেমদের নাম বলুন।

Counselor
ইসলামী বার্তা ডেস্ক
Answer

১) তাকবীরে তাহরিমার সময় হাত কতুটুকু পর্যন্ত তুলব?

হাম্বলী মাজহাব অনুযায়ী, তাকবীরে তাহরিমার সময় হাত তোলার পদ্ধতি হল কাঁধ পর্যন্ত বা কান পর্যন্ত হাত তোলা। ইমাম আহমদ (র.) এর মতে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তাকবীরে তাহরিমার সময় কাঁধ বা কান পর্যন্ত হাত তুলতেন। সুতরাং, হাম্বলী মাজহাবে উভয় পদ্ধতি গ্রহণযোগ্য, তবে সাধারণভাবে কাঁধ পর্যন্ত হাত তোলাই বেশি প্রচলিত।

২) নামাজে আমিন জোরে নাকি আস্তে বলব ?

হাম্বলী মাজহাবে, আমিন উচ্চারণের ক্ষেত্রে কিছু পার্থক্য রয়েছে। যোহর ও আসরের নামাজের মতো নীরব নামাজে আমিন আস্তে বলা হয়। তবে, মাগরিব, এশা, এবং ফজরের মতো জোরে পড়া নামাজে ইমামের পেছনে জোরে আমিন বলা সুন্নত। অর্থাৎ, যখন ইমাম "গইরিল মাগদুবি আলাইহিম ওয়ালাদ্দালিন" বলে শেষ করেন, তখন মুছল্লিরা আমিন উচ্চস্বরে বলবে।

৩) হাম্বলী হানাবেলারা আকিদাগত ভাবে কয় দলে বিভক্ত?

হানাবেলাদের আকিদাগত দিক থেকে প্রধানত দুটি দলে বিভক্ত করা যায়:

১. ফুজালায়ে হানাবিলা : ফুজালায়ে হানাবিলা মূলত হাম্বলী মাজহাবের প্রাথমিক এবং মধ্য যুগের আলেমদের অন্তর্ভুক্ত, যারা আকীদাতে আসারি পদ্ধতি অনুসরণ করতেন। তারা আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাআহের মূল আকীদা মেনে চলতেন এবং আল্লাহর সিফাতসমূহের ক্ষেত্রে তাশবিহ (সৃষ্টির সাথে তুলনা) থেকে বেঁচে থাকতেন।

২. গুনাবাতে হানাবিলা : গুনাবাতে হানাবিলা কিছু চরমপন্থী দল, যারা আল্লাহর সিফাতকে দেহধারী সত্তার সাথে তুলনা করতেন। তাদের আকীদা তাশবিহের দিকে ঝুঁকে যায়। এই দলকে পরে "মুজাসসিমা" বলা হয়, অর্থাৎ যারা আল্লাহকে সৃষ্টির মতো একটি দেহধারী সত্তা মনে করে।

ফুজালায়ে হানাবিলার বিখ্যাত আলেমদের মধ্যে রয়েছেন:

ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহঃ): হাম্বলী মাজহাবের প্রতিষ্ঠাতা, যারা আকিদায় আসারি মতবাদ অনুসরণ করতেন।

ইমাম ইবনু কুদামা (রহঃ): তিনি ছিলেন হাম্বলী মাজহাবের একজন বিশিষ্ট ফকিহ ও মুতাকাল্লিম, এবং তিনি "আল-মুঘনি" নামে একটি বিখ্যাত ফিকহি গ্রন্থ রচনা করেছেন।

ইবনে তাইমিয়াহ (রহঃ): হানাবিলা আকিদার অন্যতম প্রভাবশালী আলেম, যদিও তিনি কিছু বিতর্কিত মতামত রেখেছেন। তবে, তিনি সাধারণত আসারি আকিদার প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন।

গুনাবাতে হানাবিলার চরমপন্থী আলেমদের মধ্যে রয়েছেন:

কারামী ও তার অনুসারীরা: তারা আল্লাহর সিফাতকে দেহের সাথে তুলনা করত।

বাকিল্লানী ও অন্যান্য মুজাসসিমা: তারা হাম্বলী মাজহাবের কিছু বিদ্বানদের ভিন্ন মতাবলম্বী হিসেবে পরিচিত ছিলেন, যারা আল্লাহর সিফাতের ব্যাপারে চরমপন্থী ধ্যান ধারণা পোষণ করতেন।

অতএব, হাম্বলী মাজহাবে মূলধারার ফুজালায়ে হানাবিলা হলো সেই দল, যারা আকীদার ক্ষেত্রে সঠিক এবং ভারসাম্যপূর্ণ পদ্ধতি অনুসরণ করেন, এবং গুনাবাতে হানাবিলা হলো সেই চরমপন্থী দল, যারা তাশবিহ ও দেহবাদীতার দিকে ঝুঁকে পড়েছেন।

সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।