বিষ মাখা পুষ্পহাতিম আত-তায়ী


আব্দুল্লাহ মাহমুদ নজীব
Published: 2017-12-11 09:55:41 BdST | Updated: 2024-05-17 20:48:13 BdST

Photo Credit: UpClosed

খুব মনে পড়ে, শুল্কপক্ষের রাতে বাড়ির ছাদের ওপর চাটাই বিছিয়ে দাদুভাই গল্প শোনাতেন। শ্রোতা বলতে তখন আমি, রুবাইয়া আর নাসিম- তিন ভাই-বোন। হাজী মুহম্মদ মুহসীনের কথা ক্লাসে প্রথম শোনার পর বাড়িতে সবাইকে খুব উৎসাহ নিয়ে শুনাতে লাগলাম। দাদুভাই সে সময় একদিন খুব সুন্দর করে হাতেম তায়ীর গল্প বলেছিলেন। তাঁর শেষ পরিণতি শুনে তো কতো বার কেঁদে বুক ভাসিয়েছি! তখন থেকে আমি আর রুবাইয়া একটা অঘোষিত প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েছিলাম মুহসীন আর হাতেম তায়ী হবার জন্যে! যত বড় হয়েছি, এই দুটো মানুষের প্রতি ঈর্ষার পরিমাণটাও বেড়েছে ক্রমশ। সম্ভবত সেই ঈর্ষা জড়ানো ভালোবাসা থেকেই ফররুখ আহমদের সার্থক কাব্যনাট্য ‘নৌফেল ও হাতেম’ হাতে পেয়ে এক বসাতে শেষ করলাম! সম্প্রতি তাফসীর কুরতুবীতে হাতেম তায়ীর উদ্ধৃত কবিতা দেখে আবিষ্কার করলাম এই মহানুভব মানুষটির বিস্ময়কর কাব্য প্রতিভা! মনে মনে খুব খুশি হলাম তাঁর আরেকটা গুণের পরিচয় পেয়ে। আল্লাহর কি ইচ্ছা, আরবী কবিতার বই ঘাঁটতে গিয়ে হঠাৎ পেয়ে গেলাম তাঁর কাব্য সংকলন ‘দিওয়ান হাতিম আত-তায়ী’! অনেক প্রাচীন সাহিত্য- যথেষ্ট মনোযোগ এবং পরিশ্রম দিয়ে খুটিয়ে খুটিয়ে পড়া শুরু করেছি, এমন সময় ইচ্ছে হলো তাঁর সম্পর্কে একটু অথেনটিক সোর্স থেকে জেনে নিই।

পরিচয়:

পুরোনাম: হাতিম ইবন ’আব্দিল্লাহ ইবন সা’দ ইবন আল-হাশরাজ ইবন ইমরা’ আল-ক্বায়স ইবন ’আদী। কন্যার নামানুসারে তিনি আবূ সুফানাহ বলে পরিচিত ছিলেন। তাঁর পুত্র ’আদী ইবন হাতিম রাসূলুল্লাহ’র (সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সাহাবীদের (রদ্বিয়াল্লাহু ’আনহুম) একজন। ইতিহাসে ’আদী বিখ্যাত হয়েছেন সমঝোতার প্রস্তাব নিয়ে ’আলী (রদ্বিয়াল্লাহু ’আনহু) কর্তৃক মু’আওয়িয়াহ (রদ্বিয়াল্লাহু ’আনহু)’র নিকট প্রেরিত হয়ে।

পণ্ডিতগণ বলে থাকেন, তাঈ বংশ থেকে নিজ নিজ ক্ষেত্রে তিনজন অতুলনীয় ব্যক্তির আবির্ভাব হয়েছে: দানশীলতায় হাতিম আত-তায়ী, দুনিয়াবিমুখ একান্ত ’ইবাদাতে দাঊদ ইবন নাসীর আত-তায়ী এবং কবিতার ক্ষেত্রে আবূ তামাম।

দ্বীন:

ইসলাম আবির্ভাবের পূর্বেই হাতিম আত-তায়ী মারা যান। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর বয়স যখন আট বছর (৫৭৮ ঈসায়ী) তাঁর দাদা ’আব্দুল মুত্তালিব মারা যান এবং একই বছরে মারা যান হাতিম আত-তায়ী।৬ তিনি ছিলেন খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী (নাসারা)। আল্লাহর বিচার, তাক্বদীর এবং অন্যান্য ঐশী নির্দেশা বলীতে তিনি বিশ্বাসী ছিলেন।

আরেকটি মতানুসারে, হিজরী অষ্টম সনে তিনি মারা যান। এ বছরের জুল হিজ্জাহ মাসে মারিয়াহ ক্বিবতিয়াহ’র গর্ভে রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সন্তান ইবরাহীম জন্ম গ্রহণ করেন।১০

 

বদান্যতা ও দানশীলতা:

হাতিম আত-তায়ীর দানশীলতা ও পরোপকারিতার ব্যাপারে সকল ঐতিহাসিক একমত। আমরা দুটো বর্ণনা এখানে উল্লেখ করবো।

১. হাতিম আত-তায়ীর স্ত্রী নাওয়ারকে একবার হাতিম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো। তিনি বললেন:

“তাঁর প্রত্যেকটি কাজই ছিলো বিস্ময়কর। একবার আমাদের দুর্ভিক্ষ আক্রান্ত করলো। জমীন রুক্ষতায় ফেটে পড়ে এবং আকাশও হয়ে যায় ধূসরিত। দুগ্ধদানকারীনি মায়েরা সন্তানদেরকে দুধ পান করা থেকে সরে আসতে বাধ্য হন। উটগুলো অতিশয় কৃশকায় হয়ে পড়ে। সে সময় শীতের এক প্রখর রাতের অর্ধপ্রহরে আমাদের সন্তানগুলো ক্ষুধায় কান্না জুড়ে দেয়: আব্দুল্লাহ, ’আদ্দী এবং সুফানাহ। আল্লাহর শপথ, আমাদের এমন কিছু ছিলোনা যা দিয়ে তাদের সান্ত্বনা দেবো। হাতিম একজন সন্তানের দিকে এগিয়ে এসে কোলে তুলে নেন। আমি এক কন্যাকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলাম। আল্লাহর শপথ, রাত্রির একটি অংশ অতিবাহিত হওয়ার আগ পর্যন্ত তাদের কান্না থামেনি। এরপর আমরা আঁশযুক্ত সিরীয় চাদর দ্বারা বিছানা পেতে দিলাম। আমরা সন্তানদের ঘুম পাড়িয়ে দিলাম। আমি ঘুমিয়ে পড়লাম, হাতিমও অন্য পাশে ঘুমিয়ে পড়লেন আর সন্তানরা ছিলো আমাদের মাঝে। হাতিম অতঃপর আমার দিকে এগিয়ে আসলেন এবং সান্ত্বনা দিতে লাগলেন যাতে আমি ঘুমিয়ে পড়ি। আমি তাঁর উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে ঘুমের ভান ধরলাম। হাতিম বললেন, ‘কী হলো? ঘুমিয়ে পড়েছো?’ আমি নীরব থাকলাম। তিনি বললেন, ‘আমি তাকে ঘুমন্তই দেখতে পাচ্ছি।’ অথচ আমার চোখে কোন ঘুম ছিলো না। যখন রাত প্রায় শেষ হয়ে এলো, তারকারাজি নিবু নিবু হয়ে এলো এবং সমস্ত প্রকৃতিও নিঝুম-নিস্তব্ধতায় নিমগ্ন হলো; তখন তাঁবুর এক প্রান্ত হঠাৎ উঁচু হতে দেখা গেলো। হাতিম বললেন, ‘কে রে?’ অতঃপর আগন্তুক চলে গেলো। ইতোমধ্যে রাত প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। হাতিম [পুনরায়] জিজ্ঞেস করলেন, ‘এটা কে?’ [একজনমহিলা] বললেন, ‘আমি আপনার প্রতিবেশীনি অমুক, হে ’আদীর পিতা! আমি আপনাকে ছাড়া কাউকে ভরসা ও সাহায্যের আশ্রয়স্থল মনে করিনি। আমি ক্ষুধার যন্ত্রণায় নেকড়ে বাঘের মতো আর্তনাদ করতে থাকা কিছু শিশুর পক্ষ থেকে আপনার কাছে এলাম।’ হাতিম বললেন, ‘তাদেরকে আমার কাছে নিয়ে এসো।’ নাওয়ার বললেন, আমি লাফিয়ে উঠলাম এবং বললাম, ‘আপনি কী করলেন? ঘুমিয়ে পড়ুন! আল্লাহর কসম, আপনার সন্তানগুলো বিলাপ করছে আর তাদেরকে বুঝ দেয়ার মতো কিছু পেলেন না; অথচ এই মহিলা এবং তার সন্তানদের কিভাবে নিবৃত্ত করবেন?’ হাতিম বললেন, ‘থামো, আল্লাহর শপথ, আমি তোমাকেও তৃপ্ত করবো ইনশা-আল্লাহ।’ নাওয়ার বলেন, মহিলাটি দুই সন্তান কোলে এবং দুই পাশে চারজন সন্তানসহ আসছিলেন, মনে হচ্ছিলো যেনো কিছু বাচ্চা নিয়ে উটপাখি আসছে। হাতিম তার ঘোড়ার দিকে এগিয়ে এলেন এবং বর্শা দিয়ে গলায় আঘাত করলেন। অতঃপর চুলা জালিয়ে দিলেন। এবার ছুরি নিয়ে এসে চামড়া তুলে ফেললেন এবং ছুরিটা মহিলাকে ফিরিয়ে দিলেন। বললেন, তোমার সন্তানদের পাঠাও। মহিলা পাঠিয়ে দিলেন। হাতিম বললেন, এই মৃত জন্তু থেকে শুধু কি তোমরাই খাবে, ছড়িয়ে থাকা আরো অসংখ্য ক্ষুধার্তকে ছাড়া? হাতিম বেরিয়ে পড়লেন, অতঃপর লোকেরা সবাই দলে দলে আসতে লাগলো। হাতিম একটা কাপড় জড়িয়ে এক পাশে শুয়ে থাকলেন আর আমাদের দেখতে লাগলেন। আল্লাহর কসম, তিনি একটা ক্ষুদ্র অংশও সেখান থেকে গ্রহণ করলেন না; অথচ তিনিই [ক্ষুধার তীব্রতায়] সবার চেয়ে বেশি মুখাপেক্ষী ছিলেন [খাওয়ার জন্য]। এরই মধ্যে সকাল হয়ে এলো , দেখা গেলো কিছু হাড়গোড় ছাড়া খাদ্যের কোন কিছু আর অবশিষ্ট নেই।”১১

২. ওয়াদ্দাহ ইবন মা’বাদ আত-তায়ী বর্ণনা করেন,

“হাতিম আত-তায়ী নু’মান ইবন মুনজির১২ এর নিকট আগমন করলে নু’মান তাঁকে সম্মান প্রদর্শন করেন এবং কাছে টেনে নেন। আসার সময় তাকে কিছু উপঢৌকন প্রদান করেন; নগরীর মূল্যবান বস্তু ছাড়াও এর মধ্যে ছিলো স্বর্ণ ও রৌপ্য বোঝাই দুটি বাহন। হাতিম আত-তায়ী তাঁর সম্প্রদায়ের নিকট আগমন করলে তাঈ বংশের বেদুঈন গরীবরা তাঁকে ঘিরে ধরে এবং বলে, ওহে হাতিম! তুমি বাদশাহর কাছ থেকে এসেছো সম্পদ নিয়ে আর আমরা আমাদের পরিজনদের কাছ থেকে এসেছি দারিদ্র্য নিয়ে। হাতিম বলেন, ‘আসো আসো! আমার সামনে যা কিছু আছে সব নাও!’ এই বলে তিনি তাদেরকে বণ্টন করে দিতে লাগলেন। অতঃপর তারা সবাই নু’মান কর্তৃক প্রেরিত উপঢৌকনাদির উপর ঝাঁপিয়ে পড়লো এবং নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিলো। এরই মধ্যে হাতিমের দাসী ত্বুরাইফা এগিয়ে এসে তাঁকে বললেন,

‘আল্লাহকে ভয় করুন! নিজের জন্যও কিছু জমা রাখুন! এসব লোকেরা তো কোন স্বর্ণমুদ্রা, রৌপ্যমুদ্রা আর অবশিষ্ট রাখলো না। আর না অবশিষ্ট রাখলো কোন বকরী অথবা উষ্ট্র।’ হাতিম আত-তায়ী তখন আবৃত্তি করে বললেন:

قالت طريفة ما تبقى دراهمنا … وما بنا سرف فيها ولا خرق

إن يفن ما عندنا فالله يرزقنا … ممن سوانا ولسنا نحن نرتزق

ما يألف الدّرهم الكاريّ خرقتنا … إلا يمرّ علينا ثمّ ينطلق

إنا إذا اجتمعت يوماً دراهمنا … ظلّت إلى سبل المعروف تستبق

[ত্বুরাইফা বলছে আমাদের কোন স্বর্ণমুদ্রা অবশিষ্ট থাকবে না। আমরা তো কোন অপচয়ও করি নি, অনর্থক খরচও করি নি।আমাদের নিকট যা আছে তা যদি শেষ হয়ে যায়, তাহলে আল্লাহই আমাদের দান করবেন অন্যদের কাছ থেকে। (আল্লাহ ব্যতীত) আমরা নিজেরা নিজেদের দান করতে সক্ষম নই। ‘কার’ দেশীয় স্বর্ণমুদ্রা আমাদের ঝাঁপিতে জমা হয় কেবল এইভাবে যে সেটা ঝাঁপি অতিক্রম করেই বণ্টিত হয়ে যায়। যখনই কোনদিন আমাদের স্বর্ণমুদ্রা জমা হবে, কল্যাণের পথে সেটা অগ্রগামী হতে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হবে।]”১৩

হাতিম নিরহংকার ছিলেন:

আবূ বাকার ইবন ’আইয়াশ বর্ণনা করেছেন: হাতিম আত-তায়ীকে জিজ্ঞেস করা হলো, আরবে আপনার চেয়ে দানশীল আর কেউ আছে কি? তিনি বললেন, প্রত্যেক আরবই আমার চেয়ে বেশি দানশীল।১৪

হাতিম প্রদর্শনেচ্ছু ছিলেন:

হাতিম আত-তায়ীর অনুপম দানশীলতা এবং মহানুভবতা সত্যিই বিস্ময়ের উদ্রেক করে। আর তাঁর দানের মহা কাব্যিক উপাখ্যান ভালোবাসা ও ভালো লাগার অনন্য উপাদান। কিন্তু নিদারুণ হতাশ হলাম, যখন জানতে পেরেছি, তাঁর এই পরোপকার আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ছিলো না। বরং কেবল খ্যাতি ও প্রশংসার জন্যই উদার হস্তে দান করেছিলেন। একটু খটকা লেগে গেলো, তবে শেষ মেষ তাঁর সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-এর অভিমত জানতে পেরে অনেক কষ্টে নিশ্চিত হলাম।

‘আদী (রদ্বিয়াল্লাহু ’আনহু) প্রিয় নবীকে জিজ্ঞেস করেছিলেন: ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমার বাবা রক্তের বন্ধন অটুট রেখেছিলেন, অতিথির যত্ন নিয়েছিলেন এবং এই এই ভালো কাজ করেছিলেন।’ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ‘তোমার বাবা যা চেয়েছিলেন১৫ , তা তো পেয়ে গেছেন।’১৬

শিক্ষা:

সামগ্রিক বিচারে আমরা হাতিম আত-তায়ীকে মহানুভবতার সুরভিত পুষ্প হিসেবে নিতে পারি। কিন্তু এ পুষ্পের সুবাসিত মদিরায় হৃদয় মাতানো যায় না, কারণ তার পাঁপড়িগুলো লৌকিকতার বিষে মাখা। নিয়্যাত পরিশুদ্ধ করার সীমাহীন গুরুত্বের কথাটা আমাদের আরও একবার স্মরণ করিয়ে দেয় হাতিম আত-তায়ী’র জীবনাচার। কেবল কল্যাণ ও পুণ্যের পথে নিবেদিত হওয়াই যে চূড়ান্ত সার্থকতা নয়, বরং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের নিখাদ উদ্দেশ্যই সফলতার পূর্বশর্ত হাতিম আত-তায়ী থেকে আমরা এ শিক্ষাই নিতে পারি।

আমাদের পূর্ববর্তী সালাফ আস-সালিহীন নিয়্যাত শুদ্ধ করার প্রতি এতোটাই গুরুত্বারোপ করতেন যে অনেকেই তাঁদের লিখিত গ্রন্থের শুরুতেই ‘হাদীস আন-নিয়্যাহ’ উল্লেখ করতেন। حديثالنية বা ‘নিয়্যাতের হাদীস’ বলতে বোঝায় আমাদের সকলের কাছে পরিচিত সাহীহ আল-বুখারীতে সর্ব প্রথম উল্লিখিত হাদীসটি:

‘উমার ইবন আল-খাত্তাব (রদ্বিয়াল্লাহু ’আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন:

“নিশ্চয়ই প্রতিটি কাজ নিয়্যাত অনুযায়ীই গৃহীত হয়। আর প্রত্যেক ব্যক্তি তাই-ই পায়, যা সে নিয়্যাত করে। সুতরাং যার হিজরত আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে হবে, তার হিজরত আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের জন্যই পরিগণিত হবে। আর যার হিজরত দুনিয়া লাভের বা কোনো নারীকে বিবাহ করার উদ্দেশ্যে হবে, তার হিজরত সে উদ্দেশ্যেই পরিগণিত হবে, যে উদ্দেশ্যে সে হিজরত করেছে।”১৭

নিয়্যাত পরিশুদ্ধ থাকলে স্বল্প ’আমলই মুক্তির কারণ হতে পারে, আবার বিপরীতে অধিক আমলও অর্থহীন হয়ে যেতে পারে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম মু’আজ ইবন জাবাল (রদ্বিয়াল্লাহু ’আনহুকে) ইয়ামানে প্রেরণের প্রাক্কালে উপদেশ দিচ্ছিলেন, “তোমার দ্বীনকে একনিষ্ঠ করো। অল্প ’আমালই তোমার জন্য যথেষ্ট হবে”।১৮

 

পাদটীকাঃ

[১] সূরা আন’আম (৬) এর ১১৮ নং আয়াত এর তাফসীর-আল-জামি’লি আহকাম আল-ক্বুরআন, আবূ ’আব্দিল্লাহ মুহাম্মাদ ইবন আহমাদ ইবন আবী বাকর ইবন ফারাহ আল-আনসারী আল-খাযরাজী শামসুদ্দীন আল-কুরতুবী, দ্বিতীয় সংস্করণ, খ- ৭ পৃ. ৭২
[২] আল-মুফাসসাল ফী তারীখ আল-’আরাব ক্বাবলা আল-ইসলাম, ড. জাওয়াদ ’আলী, দার আস-সাক্বী ৪র্থ সংস্করণ, খ- ১৮ পৃ. ৩৭৮
[৩] কিসসাহ আল-ফিতনাহ, ড. রাগিব আস-সারজানী, খ- ১ পৃ. ১৭৮।
[৪] আল-ওয়াফী বিল ওয়াফিয়াত, সালাহুদ্দীন খলীল ইবন আইবেক আস-সাফদী, খ- ৪ পৃ. ৮৬
[৫] আল-মুফাসসাল ফী তারীখ আল-’আরাব ক্বাবলা আল-ইসলাম, খ- ৭ পৃ. ২২১
[৬] মুহাম্মাদ রাসূলুল্লাহ, মুহাম্মাদ রাশীদ রিদ্বা, খ- ১ পৃ. ৩৩
[৭] আল-মুফাসসাল ফী তারীখ আল-’আরাব ক্বাবলা আল-ইসলাম, খ- ১১ পৃ. ১৫৪
[৮] আল-উনাস আল-জ্বালীল, মুজীরুদ্দীন আল-হানবালী আল-’আলীমি, খ- ১ পৃ. ২১১।
[৯] এক বছর দশ মাস বয়সে তিনি মারা যান। [আল-ফুসূল ফী সীরাহ আর-রাসূল সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আল-ইমাম আবূ আল-ফিদা ইসমাঈল ইবন কাসীর, খ- ১ পৃ. ১০৪]
[১০] আল-উনাস আল-জ্বালীল, খ- ১ পৃ. ২১১
[১১] আল-বিদায়া ওয়া আন-নিহায়া, ইমাম ইবন কাসীর, খ- ১ পৃ. ২২৮ [ইবন আবিদ্দুনয়ার উদ্ধৃতিতে বর্ণিত। বর্ণনা সূত্র: ’উমার ইবন বাকার < আবূ ’আব্দির রাহমান আত-তায়ী < ’উসমান < ’ইরকী ইবন হালীস আত-তায়ী < তাঁর বাবা < তাঁর দাদা— তিনি ছিলেন ’আদী ইবন হাতিম এর বৈপিত্রেয় ভাই।]
[১২] হীরা রাজ্যের অধিপতি।
[১৩] মুখতাসার তারীখ দিমাশক, মুহাম্মাদ ইবন মুকরিম ইবন মানযূর আল-আফরীকী আল-মিসরী, খ- ২ পৃ. ৩০৯।
[১৪] আল-বিদায়া ওয়া আন-নিহায়া, খ- ১ পৃ. ২৩০
[১৫] অর্থাৎ দানের প্রশংসা [আল বিদায়া ওয়া আন-নিহায়া, খন্ড ১ পৃ. ২২৭]
[১৬] মুসনাদ আহমাদ: খ- ৪, পৃ. ৩৭৭, হাদিস নং ১৯৩৯৩
[১৭] সাহীহ আল-বুখারী, মুহাম্মাদ ইবন ইসমাঈল ইবন আল-মুগীরাহ আল-বুখারী, দার আশ-শা’ব ১ম সংস্করণ, খ- ১ পৃ. ২ হাদীস নং ১; সাহীহ মুসলিম, আবুল হাসান মুসলিম ইবন আল-হাজ্জাজ ইবন মুসলিম আন-নিসাবুরী, খ- ৬ পৃ. ৪৮ হাদীস নং ৫০৩৬।
[১৮] শু’আব আল-ঈমান, আবূ বাকার আল-বায়হাক্বী, খ-৯ পৃ. ১৭৪ হাদীস নং ৬৪৪৩

 

 

সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


বিবিধ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত


মক্কার পবিত্র কাবার ঘরের সংলগ্ন উত্তরের কিছু অংশ অর্ধচন্দ্রাকার বৃত্ত...

বিবিধ | 2018-08-14 23:29:33

আমরা কোনো কঠিন মূহুর্ত বা বিপদের সম্মুখীন হলে খুব সহজেই ভেঙ্গে পড়ি। আল...

বিবিধ | 2021-06-24 04:03:23

ইসলাম ও খ্রিস্টধর্ম, উভয় ধর্মেই পৃথিবীর সমাপ্তির পর্বের মিথ্যা খোদা দা...

বিবিধ | 2021-09-05 19:36:28

গত ১৪ই জুন ক্রীড়াজগতের অন্যতম বৃহত্তম আসর বিশ্বকাপ ফুটবলের আনুষ্ঠানিক...

বিবিধ | 2018-06-22 22:32:19

রাত ১২টা বা ১টা পর্যন্ত জেগে থাকাটা ছিল আমার অন্যতম একটি বদভ্যাস। ছোট...

বিবিধ | 2018-03-26 09:49:08

ইসলাম ও খ্রিস্টধর্ম, উভয় ধর্মেই পৃথিবীর সমাপ্তির পর্বের মিথ্যা খোদা দা...

বিবিধ | 2019-02-17 23:09:17

ইবনে খালদুন আসাবিয়াতত্ত্ব বা গোষ্ঠী সংহতির উপর রাষ্ট্র দর্শনের ভিত্তিক...

বিবিধ | 2019-03-29 23:50:18

১. ধৈর্যশীল যিনি সব পরিস্থিতিতে ধৈর্যধারণে সক্ষম, কখনোই চিৎকার চেঁচাম...

বিবিধ | 2021-09-04 20:19:56