গাজার আল-আহলি হাসপাতালে বেচে যাওয়া ব্যক্তিরা ভয়ংকর পরাবাস্তব দৃশ্য বর্ণনা করছেন


আসিল মুসা, আহমেদ ড্রেমলি এবং মাহা হুসাইনি; অনুবাদ: তারেক হাসান
Published: 2023-10-18 23:42:45 BdST | Updated: 2024-09-28 09:20:39 BdST

গাজার আল-আহলি আরব হাসপাতালে ইসরায়েলি বিমান হামলার পরে যে পরাবাস্তব এবং ভয়ঙ্কর দৃশ্য দেখেছিলেন তা বর্ণনা করেছেন হাসপাতালের একজন চিকিত্সক। এই হামলায় গত রাতে সেখানে কমপক্ষে ৪৭১ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয়েছে।

চিকিত্সক মোহাম্মদ গনিম বলেন, আমরা যে নির্মমতা এবং আঘাতের প্রকৃতি দেখেছি তা এমন যা আমরা আগে কোনো হামলায় প্রত্যক্ষ করিনি।

ইসরায়েলি বাহিনীর নিক্ষিপ্ত বোমা হাসপাতালের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার পরে বহু মানুষকে হতাহত করে অনেক মৃতদেহ ছিটিয়ে রেখে গিয়েছিল।

তিনি বলেন, এটি এতই পরাবাস্তব, এটি মনে হতে পারে যেন একটি স্বপ্ন। এমনকি সিনেমাতেও যদি তারা একটি ভয়ঙ্কর দৃশ্য তৈরি করতে চায় তবে তারা এমন দৃশ্য তৈরি করতে পারবে না। আমরা এখনও বিশ্বাস করতে পারি না যে যা ঘটেছে তা বাস্তব। এটা একটা হাসপাতাল, যা আন্তর্জাতিক মানবিক আইন দ্বারা সুরক্ষিত। যে চিকিত্সা কর্মী বা কোনও বাস্তুচ্যুত ব্যক্তি যদি এখানে আশ্রয় নেয়, তাদের এখানে সুরক্ষিত থাকার কথা।

গতকালের গণহত্যায় চলমান সংঘাতে একক ভাবে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি ঘটেছে। গাজা এবং পশ্চিম তীরে ৩ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। ইসরায়েলের ওপর হামাসের নেতৃত্বে আশ্চর্যজনক হামলার পর ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি অবরোধ ও বিমান হামলা অব্যাহত রয়েছে। এসময় হাজার হাজার বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি গাজা শহরের আল-আহলি হাসপাতালের আঙ্গিনায় আশ্রয় নিচ্ছিল, তারা নিশ্চিত ছিল যে তারা নিরাপদ স্থানে রয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকেই এখন মারা গেছে বা গুরুতর আহত হয়েছে।

হাসপাতাল থেকে এক কিলোমিটার দূরে থাকেন হামলার এমন একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, বিস্ফোরণের শব্দ ছিল অত্যন্ত তীব্র এবং ভয়ঙ্কর। মনে হচ্ছিল এটা আমার বাড়িতেই হয়েছিল।

উক্ত স্থানীয় বাসিন্দা আরো বলেন যে তিনি দু'দিন আগে হাসপাতালে ছিলেন এবং দেখেছেন সেখানে বিপুল সংখ্যক লোক। অনেকে রোগী আর বাকীরা সেসব লোক যারা বাড়ি ছেড়ে হাসপাতালে আশ্রয় নিয়েছিল। হাসপাতালের আঙ্গিনা লোকে পরিপূর্ণ ছিল। বিস্ফোরণের শব্দ ছিল পাগল করার মত।

অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার একজন সাংবাদিক আমর আবু নাদা বলেন, গত রাতে আমি যা দেখেছি তার মতো কিছুই আমি কখনো দেখিনি। এটি ছিল সবচেয়ে জঘন্য গণহত্যা। নিহত শিশুদের অধিকাংশেরই দেহ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ছবি তোলার সময় আমি অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলাম। এটা খুবই ভয়ানক ছিল।

আবু নাদা বলেন যে আল-শিফা হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী ব্যক্তিরা সাংবাদিকদের সেখানকার মিডিয়ার স্থান খালি করতে বলেছিলেন যাতে আল-আহলিতে নিহত ব্যক্তিদের লাশ সেখানে রাখা যেতে পারে।

তিনি বলেন, এটি ছিল ভয়ঙ্কর, বিশেষ করে অভিভাবকদের জন্য যারা মৃতদের মধ্যে তাদের সন্তানদের খুঁজছিলেন। সবচেয়ে বেদনাদায়ক বিষয় ছিল আল-শিফায় আহত একজন রোগী যিনি আল-আহলি হাসপাতালে গিয়েছিলেন বিস্ফোরন তাকেও হত্যা করেছিল।

একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন যে ইসরায়েল তাদের আক্রমণের প্রথম দিনগুলিতে হাসপাতালে বোমা হামলার হুমকি দিয়েছিল, কিন্তু আমরা কখনই ভাবিনি যে তারা আসলে এটি করবে। বোমার বিস্ফোরণটি ছিল ব্যাপক এবং অপ্রত্যাশিত। তারা আগে থেকে এজন্য সতর্কও করেনি। হাসপাতালের আঙিনায় যখন বোমা পড়েছিল সেখানের শত শত লোক বাইরের বোমা হামলা থেকে আশ্রয় নিতে হাসপাতালের ভেতরে যাচ্ছিল। তারা ভেবেছিল হাসপাতাল একটি নিরাপদ জায়গা হবে।

 

গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে

ড. গনিম বলেন যে এই গণহত্যা গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ভেঙে দিয়েছে। গণহত্যার আগে আমাদের হাসপাতাল ইতিমধ্যেই পরিপূর্ণ ছিল। পূর্ববর্তী গণহত্যা থেকে যারা রক্ষা পেয়েছিল তাদের দ্বারা হাসাপাতালের কক্ষসমূহ পূর্ণ ছিল এবং প্রতিটি করিডোর ঘরবাড়ী হারানো লোকে ভরা ছিল, যেসব লোকেরা আশ্রয়ের জন্য একটি নিরাপদ জায়গা চেয়েছিল। এই হত্যাকাণ্ড আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে একেবারে ভেঙ্গে দিয়েছে। আমরা ইতিমধ্যে যেন একটি সুতোয় ঝুলে ছিলাম। বাধাপ্রাপ্ত চিকিৎসা সরবরাহ, শেষ হয়ে যাওয়া জ্বালানী এবং বিদ্যুৎ বিভ্রাট আমাদেরকে বিদ্যুৎ বা অক্সিজেন ছাড়াই রেখেছিল। এবং সেটা ছিল গণহত্যার নিমর্ম আঘাতের আগে।

একটি হাসপাতালের ছবি কল্পনা করুন যেটা ইতিমধ্যই ভর্তি ছিল। তারপর আহত এবং মৃতদের ৫০০ জনের একটি প্রবাহ এতে যোগ করুন। আমরা যা দেখেছি তা ছিল হৃদয় বিদারক। আঘাতের প্রকৃতি সত্যিই ভয়ঙ্কর ছিল। শিশুদের বিচ্ছিন্ন হওয়ব দেহের টুকরার মত দেখাচ্ছিল।

তিনি বলেন যে তিনি শিশুদের পেট ছিঁড়ে যেতে দেখেছেন। তাদের দেহ থেকে তাদের দেহাবশেষ বেরিয়ে এসেছে। এই ভয়াবহ আঘাত ঠিক তখন আসে যখন কর্মীরা ক্লান্ত এবং হাসপাতাল পরিপূর্ণ ছিল।

ড. গনিম বলেন, ইতিমধ্যেই হাসপাতালের সুবিধা সমূহ সংকুচিত হয়ে এসেছে। এখন আমাদের পথ একটাই যেখানেই একটু স্থান পাওয়া যায়, হাসপাতালের  ফ্লোরে, খালি মাটিতে, যতটুকু অল্প মাত্রার যন্ত্রপাতি ও ঔষধপত্র আছে তা দিয়ে আমাদেরকে আহতদের চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে।

 

অনুবাদক :তারেক হাসান

সূত্র : মিডল ইস্ট আই

 

সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


মুসলিম বিশ্ব বিভাগের সর্বাধিক পঠিত


শামীম সুলতানা একজন তরুণ মুসলিম মহিলা, সিঙ্গাপুরের নাগরিক এবং তিনি কায়...

মুসলিম বিশ্ব | 2023-06-21 22:32:39

তুর্কিয়ের ফার্স্ট লেডি এমিন এরদোগান জাতিসংঘের শিক্ষা, বৈজ্ঞানিক ও সাং...

মুসলিম বিশ্ব | 2023-05-23 09:44:54

১৯৯৫ সালে, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার স্রেব্রেনিকাতে প্রায় ৮ হাজার বসনিয়...

মুসলিম বিশ্ব | 2023-07-15 19:48:15

সুদান ভেঙ্গে আবারও নতুন দেশের উদয় হবে বলে ইসরাইল আশা করছে

মুসলিম বিশ্ব | 2023-04-29 02:07:05

রাশিয়ার বৃহত্তম ঋণদাতা Sberbank-এর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ওলেগ গনিয...

মুসলিম বিশ্ব | 2023-07-14 03:30:52

২৮ জুন স্টকহোম সেন্ট্রাল মসজিদের বাইরে কুরআন পোড়ানোর প্রতিবাদে বিশ্বব...

মুসলিম বিশ্ব | 2023-07-01 04:57:28

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF) ২০২৩ সালকে একটি একটি কঠিন অর্থনৈতিক বছর...

মুসলিম বিশ্ব | 2023-06-13 23:28:54

রাজধানী খার্তুম, দারফুর ও কর্ডোফান রাজ্যে হত্যা, লুটপাট এবং ধর্ষণ সহ ন...

মুসলিম বিশ্ব | 2023-08-30 12:58:03