গাজায় দেড় মাসে ইসরায়েলী হামলায় ক্ষয় ক্ষতির হিসাব


ইসলামী বার্তা ডেস্ক
Published: 2023-11-28 16:05:19 BdST | Updated: 2024-09-28 09:16:11 BdST

আল জাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী গাজার ২৩ লাখ জনসংখ্যার মধ্যে আনুমানিক ১৭ লাখ লোক বাস্তুচ্যুত হয়েছে। যাদের অনেকেই গাজা উপত্যকার উত্তর অংশ থেকে দক্ষিণে চলে গেছে।

গত ৭ অক্টোবর থেকে ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত গাজায় দেড় মাসে মাসে ইসরাইয়েলী হামলায় ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। ২৪ তারিখ থেকে ৪ দিনের যুদ্ধ বিরতি চলছে। কাতার জানিয়েছে আরো ২ দিনের যুদ্ধবিরতির কথা হয়েছে। যুদ্ধ বিরতি আরো বাড়তে পারে এই আশার আলো দেখা যাচ্ছে। উভয় পক্ষের বেশ কয়েকজন বন্দী মুক্তি পেয়েছে। আরো বন্দীদের মুক্তি দেওয়া হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ইসরায়েলী বন্দীদের সাথে হামাস যে সদাচরন করেছে তা যেমন বিশ্ববাসী প্রত্যক্ষ করছে তেমনি ফিলিস্তিনি বন্দীরা প্রতিদিন কি নির্মমতার মুখোমুিখি হচ্ছে ইসরায়েলী কারাগারে তাও বেরিয়ে এসেছে মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দীদের বর্ণনায়। প্রায় ৫ হাজারেরও বেশি বন্দী এখনো রয়ে গেছে ইসরায়েলী কারাগারে যাদেরকে কথিত বিভিন্ন অজুহাতে গ্রেফতার করা হয়েছিল। 

যুদ্ধবিরতির মধ্যে গাজা ও পশ্চিম তীরের বর্তমান অবস্থা ও ক্ষয় ক্ষতির পরিসংখ্যান নিয়ে এই প্রতিবেদন। 

ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়

যুদ্ধ-বিধ্বস্ত গাজা উপত্যকায়  ইসরায়েলি হামলায় ৬ হাজার এরও বেশি শিশু সহ প্রায় ১৫ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে৷ গাজার কর্মকর্তাদের মতে, গাজায় সাত সপ্তাহের লাগামহীন ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ১৪,৮৫৪ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যাদের এক তৃতীয়াংশেরও বেশি শিশু। গাজার ২৩ লাখ জনসংখ্যার মধ্যে আনুমানিক ১৭ লাখ লোক বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

পশ্চিম তীরেও আগ্রাসন বন্ধ থাকেনি

আল-জাজিরার আরেকটি রিপোর্ট অনুযায়ী ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, ৭ অক্টোবর থেকে পশ্চিম তীরে নিহত ফিলিস্তিনিদের মোট সংখ্যা ২৩৯। ইসরায়েলি বাহিনী অধিকৃত পশ্চিম তীরে ৫২ শিশু সহ কমপক্ষে ২৩৯ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে, এবং ৩ হাজার জনেরও বেশি লোককে গ্রেপ্তার করেছে। গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করার পর থেকে পশ্চিম তীরেও অভিযান জোরদার করেছে৷

যুদ্ধ বিরতির মধ্যেও পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের হত্যা করা হয়েছ

গাজা যুদ্ধবিরতির মধ্যে ইসরায়েলি বাহিনী পশ্চিম তীরে মারাত্মক অভিযান চালায়। জেনিনে পাঁচজন ফিলিস্তিনিকে গুলি করে হত্যা করা হয়, এবং অধিকৃত পশ্চিম তীরে অন্য তিনজনকে হত্যা করা হয়। ইসরায়েলি বাহিনী শনিবার গভীর রাতে এবং রবিবার ভোরে জেনিন শহরে পাঁচ ফিলিস্তিনিকে গুলি করে এবং পশ্চিম তীরের অন্যত্র তিনজনকে হত্যা করে, রবিবার মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। জেনিনে ইসরায়েলি হামলায় আহত হয়েছেন আরও ছয় ফিলিস্তিনি। ফিলিস্তিনি বার্তা সংস্থা ওয়াফা জানিয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনী জেনিনকে "বিভিন্ন দিক থেকে গুলি করে এবং সরকারি হাসপাতাল এবং রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সদর দফতরে গুলি চালায়।

ইসরায়েলে ফিলিস্তিনি ছিটমহলের শ্রমিকদের প্রতি অমানবিকতা

ইসরায়েলে অবস্থিত গাজার ছিটমহলের শ্রমিকদের হঠাৎ করে ওয়ার্ক পারমিট প্রত্যাহার করে নেয় এবং তাদেরকে আটকে রাখার পর গাজার এই শ্রমিকরা নির্যাতনের ভয়াবহ কাহিনী বর্ণনা করে। ৭ অক্টোবরের ঘটনার পর দক্ষিণে ইসরায়েলে অবস্থিত ফিলিস্তিনি ছিটমহল কেরেম শালোম এলাকায় হাজার হাজার ফিলিস্তিনি যারা গাজার বাসিন্দা এবং ইসরায়েলে কর্মরত ছিল তাদেরকে হঠাৎ অবৈধ বলে চিহ্নিত করা হয় এবং বিনা অভিযোগে আটক করা শুরু হয়। তারা গালাগালি এবং প্রচন্ড মারধোরের শিকার হয়েছে । কারাগারেই মারা যান অনেক শ্রমিক। তাদের অনেককে এখন গাজায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে, কিন্তু তারা ভাবছে তাদের অনিশ্চিত ভবিষ্যত নিয়ে। 

স্থায়ী যুদ্ধবিরতি চাই

সাময়িক যুদ্ধ বিরতির সময় ফিলিস্তিনিরা বলছে 'আমরা স্থায়ী যুদ্ধবিরতি চাই'। চর দিনের মানবিক বিরতি গাজার আকাশকে শান্ত করেছে কিন্তু বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের দুর্দশাকে স্পষ্ট করে তুলেছে। আইমান হারব নামক একজন ফিলিস্তিনি যিনি বাস্তুচ্যুত মানুষদের একটি তাঁবুতে বসবাস করছেন। তিনি বলেন, "হ্যাঁ, বোমা হামলা বন্ধ হয়ে গেছে, তবে আমাদের স্থায়ী যুদ্ধবিরতি দরকার যা আমাদের বাড়িতে ফিরিয়ে দেবে, অন্যথায়, এটিতে কোন লাভ নেই। আমি বরং আমার বাড়িতে ফিরে গিয়ে সেখানেই মরতে চাই।

গাজার হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা সামগ্রীর তীব্র প্রয়োজন। প্রয়োজন খাদ্য পানি এবং জ্বালানী তেলের। হাসপাতালগুলো আহতদের নিয়ে ঠাসা, করিডোরে ও মর্গ উপচে পড়ছে। ডাক্তাররা অ্যানেসথেশিয়া ছাড়াই অস্ত্রোপচার করতে বাধ্য হচ্ছে। সর্বত্র, আতঙ্ক, মৃত্যু, ধ্বংসযজ্ঞ আর ক্ষয়ক্ষতি বিরাজমান।

বিভিন্ন স্থানে সড়ক সমূহ ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় সেখানকার হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা সামগ্রী সরবরাহ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। গাজায় ত্রাণ বিতরণে হামাসের বিঘ্ন সৃষ্টির প্রমাণ পায়নি জানিয়েছে মার্কিন দূত। তবে এসব ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। পানি সরবরাহ করতে পাম্প চালানো প্রয়োজন। আর পাম্প চালাতে জ্বালানির বিকল্প নেই। জ্বালানি সংকটের কারণে অনেক পানি শোধনাগার কেন্দ্র বন্ধ হয়ে আছে। 

যুদ্ধের আন্তর্জাতিক আইন লংঘন করে ফিলিস্তিনে হামলায় শতভাগ প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করছে ইসরায়েল। গত দেড় মাসে গাজায় ৪০ হাজার টন বিস্ফোরক ও বোমা ফেলেছে ইসরায়েলী বাহিনী। সাময়িক যুদ্ধ বিরতি হলেও যুদ্ধের পরবর্তী ধাপের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরায়েল। 

সূত্র : আল-জাজিরা । 

সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


মুসলিম বিশ্ব বিভাগের সর্বাধিক পঠিত


শামীম সুলতানা একজন তরুণ মুসলিম মহিলা, সিঙ্গাপুরের নাগরিক এবং তিনি কায়...

মুসলিম বিশ্ব | 2023-06-21 22:32:39

তুর্কিয়ের ফার্স্ট লেডি এমিন এরদোগান জাতিসংঘের শিক্ষা, বৈজ্ঞানিক ও সাং...

মুসলিম বিশ্ব | 2023-05-23 09:44:54

১৯৯৫ সালে, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার স্রেব্রেনিকাতে প্রায় ৮ হাজার বসনিয়...

মুসলিম বিশ্ব | 2023-07-15 19:48:15

সুদান ভেঙ্গে আবারও নতুন দেশের উদয় হবে বলে ইসরাইল আশা করছে

মুসলিম বিশ্ব | 2023-04-29 02:07:05

রাশিয়ার বৃহত্তম ঋণদাতা Sberbank-এর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ওলেগ গনিয...

মুসলিম বিশ্ব | 2023-07-14 03:30:52

২৮ জুন স্টকহোম সেন্ট্রাল মসজিদের বাইরে কুরআন পোড়ানোর প্রতিবাদে বিশ্বব...

মুসলিম বিশ্ব | 2023-07-01 04:57:28

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF) ২০২৩ সালকে একটি একটি কঠিন অর্থনৈতিক বছর...

মুসলিম বিশ্ব | 2023-06-13 23:28:54

রাজধানী খার্তুম, দারফুর ও কর্ডোফান রাজ্যে হত্যা, লুটপাট এবং ধর্ষণ সহ ন...

মুসলিম বিশ্ব | 2023-08-30 12:58:03