আন্তর্জাতিক আদালত গাজা যুদ্ধে ইসরায়েলকে কী নির্দেশ দিয়েছে এবং পরবর্তীতে কী হতে যাচ্ছে?


আরেশা লোধি
Published: 2024-01-27 23:34:00 BdST | Updated: 2024-09-28 09:15:37 BdST

২৬ জানুয়ারী ২০২৪ : ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অফ জাস্টিস (আইসিজে) শুক্রবার গাজায় বোমা হামলার বিষয়ে ইসরাইলের প্রতি ছয়টি আদেশ জারি করেছে, কিন্তু পূর্ণ যুদ্ধবিরতির নির্দেশ দেয়নি।

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকার দায়ের করা এই গণহত্যা মামলায় আদালত তার আলোচনা শুরু করার সাথে সাথে জরুরি ব্যবস্থা ঘোষণা করে। যে জন্য আদালত এই মাসের শুরুতে এই বিষয়ে প্রমাণ সমূহের শুনানি করে। দক্ষিণ আফ্রিকা গাজায় ইসরায়েলের কাজকে গণহত্যা হিসাবে বর্ণনা করেছে। তবে ইসরায়েল অভিযোগটি প্রত্যাখ্যান করে দাবি করেছে যে গাজায় তাদের কার্যক্রম "আত্মরক্ষা" থেকে সূচনা হয়েছে এবং হামাসকে নির্মূল করার জন্য এটি প্রয়োজন। ইসরায়েলের বক্তব্যে আরও বলা হয়েছে যে লক্ষ্য অর্জন না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ শেষ হতে পারে না।

শুক্রবার হেগের আদালতে ৪৫ মিনিটের একটি রায়ে সভাপতিত্বকারী বিচারক জোয়ান ডনোগু ইসরায়েলের দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন। যেখানে ইসরাইল দাবী করছিল যে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকার দায়ের করা এই মামলা শুনানির এখতিয়ার আদালতের নেই।

ইসরায়েল বলেছে যে দক্ষিণ আফ্রিকা আবেদন দাখিল করার আগে তেল আবিবের সাথে পর্যাপ্তভাবে যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হয়েছে, যেটা আদালতের নিজস্ব নিয়ম অনুসারে প্রয়োজন। কিন্তু আদালত ইসরায়েলের এই যুক্তি প্রত্যাখ্যান করেছে, এই বলে যে, দক্ষিণ আফ্রিকা প্রিটোরিয়ায় ইসরায়েলি দূতাবাসে একটি অভিযোগ করেছে, যার উত্তর ইসরাইল স্পষ্টভাবে দিয়েছে। আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষ থেকে মামলা দাখিল করার স্পষ্ট যুক্তি রয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নয়টি জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আদালতকে অনুরোধ করেছিল। যার মধ্যে আইসিজে ইসরাইলকে ছয়টি রায় বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছে।

গাজার বিরুদ্ধে ইসরায়েলের যুদ্ধ ইতিমধ্যেই অবরুদ্ধ অঞ্চলের ২৬ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। গাজা উপত্যকার উপর ইসরায়েলের অবরোধ খাদ্য, পানীয়, জ্বালানী এবং চিকিৎসা সহায়তার প্রবেশকেও মারাত্মকভাবে সীমিত করে রেখেছে।

আইসিজে-এর রায়ে কী আছে?

আইসিজে নিশ্চিত করেছে যে দক্ষিণ আফ্রিকার দাখিল করা মামলার শুনানির এখতিয়ার রয়েছে এবং ইসরায়েলের প্রতি ছয়টি জরুরি আদেশ জারি করেছে। যা নিম্নরূপ:

১. ১৯৪৮ সালের গণহত্যা কনভেনশনের অনুচ্ছেদ ২-এ বর্ণিত কাজ সমূহ রোধ করার জন্য ইসরায়েলকে অবশ্যই সমস্ত সম্ভাব্য ব্যবস্থা নিতে হবে। একটি নির্দিষ্ট জাতিগোষ্ঠীর সদস্যদের (এই ক্ষেত্রে, ফিলিস্তিনিদের) হত্যা না করা, সেই জাতি গোষ্ঠির সদস্যদের শারীরিক বা মানসিক ক্ষতি না করা, জীবনযাত্রার অবস্থার উপর আঘাত না করা, যে আঘাত একটি জনতার অস্তিত্বের অবসান ঘটাতে করা হয়। এবং এমন কিছু না করা যা সেই জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে জন্ম রোধ করার জন্য পরিকল্পিত ভাবে সম্পাদন করা হয়। এই আদেশটি ১৫-২ ভোটে অনুমোদিত হয়। এতে ভিন্নমত পোষণকারী বিচারক: উগান্ডার বিচারক জুলিয়া সেবুটিন্ডে এবং ইসরায়েলি প্রতিনিধি বিচারক আহারন বারাক।

২. ইসরায়েলকে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে তার সামরিক বাহিনী উপরোক্ত কোনো কর্মকাণ্ড চালাবে না। এই আদেশটি ১৫-২ ভোটে অনুমোদিত হয়। এতে ভিন্নমত পোষণকারী বিচারক: উগান্ডার বিচারক সেবুটিন্ডে এবং ইসরায়েলি বিচারক বারাক।

৩. ইসরায়েলকে অবশ্যই "গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনিদের উপর গণহত্যা করার জন্য প্রত্যক্ষ ও প্রকাশ্য প্ররোচনা দানকে প্রতিরোধ এবং সেজন্য শাস্তি দিতে হবে৷ আদেশটি ১৬-১ ভোটে অনুমোদিত হয়। ভিন্নমত পোষণকারী বিচারক: উগান্ডার বিচারক সেবুটিন্ডে।

৪. ইসরায়েলকে অবশ্যই গাজার বেসামরিক নাগরিকদের জন্য মৌলিক পরিষেবা এবং প্রয়োজনীয় মানবিক সহায়তা প্রদান নিশ্চিত করতে হবে। এই আদেশটি ১৬-১ ভোটে অনুমোদিত হয়। ভিন্নমত পোষণকারী বিচারক: উগান্ডার বিচারক সেবুটিন্ডে।

৫. ইসরায়েলকে অবশ্যই গাজায় যুদ্ধাপরাধের প্রমাণ ধ্বংস করা রোধ করতে হবে এবং ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশনকে সেখানে প্রবেশের অনুমতি দিতে হবে। আদেশটি ১৫-২ ভোটে অনুমোদিত হয়। ভিন্নমত পোষণকারী বিচারক: উগান্ডার বিচারক সেবুটিন্ডে এবং ইসরায়েলি  বিচারক বারাক।

৬. ইসরায়েলকে অবশ্যই রায়ের এক মাসের মধ্যে আদালতের দ্বারা আরোপিত ব্যবস্থা সমূহ মেনে চলার জন্য গৃহিত সমস্ত পদক্ষেপের একটি প্রতিবেদন জমা দিতে হবে। দক্ষিণ আফ্রিকা সেই প্রতিবেদনের উপর প্রতিক্রিয়া জানানোর সুযোগ পাবে। এই আদেশটি ১৫-২ ভোটে অনুমোদিত হয়। ভিন্নমত পোষণকারী বিচারক: উগান্ডার বিচারক সেবুটিন্ডে এবং ইসরায়েলি  বিচারক বারাক।

দক্ষিণ আফ্রিকা কী জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করেছিল?

২৯ ডিসেম্বর, ২০২৩-এ দায়ের করা দক্ষিণ আফ্রিকার ৮৪ পৃষ্ঠার মামলায় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া গাজা যুদ্ধে ১৯৪৮ সালের গণহত্যা কনভেনশন লঙ্ঘনের জন্য ইসরাইলকে অভিযুক্ত করে। এতে দক্ষিণ আফ্রিকা আদালতকে নিম্নোক্ত বিষয়ে ইসরাইলকে নির্দেশ দিতে বলেছে:

-গাজা ভূখন্ডে এবং গাজার বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান স্থগিত করা (আদালতের প্রাথমিক আদেশে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি)

-সামরিক অভিযান আর বাড়ানো যাবে না (আদালতের প্রাথমিক আদেশে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি)

-পর্যাপ্ত খাবার, পানি, জ্বালানি, আশ্রয়, স্বাস্থ্যবিধি এবং স্যানিটেশন সেবা প্রবেশের অনুমতি দেওয়া।

-মানসিক ক্ষতি সহ গাজায় ফিলিস্তিনিদের জীবন ধ্বংস রোধ করা

-গণহত্যার অভিযোগকে সমর্থন করে এমন প্রমাণ ধ্বংস করা যাবে না। অথবা এই প্রমাণ সংরক্ষণে সহায়তা করার জন্য তথ্য অনুসন্ধান মিশন ও গাজায় প্রবেশের যোগ্য আন্তর্জাতিক সংস্থা সমূহের প্রবেশ রোধ না করা।

-জেনোসাইড কনভেনশনের নিয়ম মেনে চলা।

-যারা গণহত্যার সাথে জড়িত তাদের শাস্তি দেওয়ার পদক্ষেপ নেওয়া। (আদালতের প্রাথমিক আদেশে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি)।

-মামলাটিকে জটিল বা দীর্ঘায়িত করে এমন কাজ এড়িয়ে চলা (প্রাথমিক আদেশে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি)।

-আদেশে দেওয়া ব্যবস্থা সমূহ বাস্তবায়নের অগ্রগতির বিষয়ে নিয়মিতভাবে কাউন্সিলের কাছে রিপোর্ট করা।

অন্তর্বর্তীকালীন রায় কি বাধ্যতামূলক এবং কে তা কার্যকর করবে?

জাতিসংঘের সদস্য হিসাবে দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ইসরায়েল উভয়ই আদালতের রায় মানতে বাধ্য এবং আইসিজের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ নেই। অপরদিকে আইসিজে নিজেই তার আদেশ কার্যকর করবে এমন কোন ব্যবস্থা নেই।

এই রায়ের উপর ভিত্তি করে দক্ষিণ আফ্রিকা বা অন্যান্য যে কোন দেশ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে (ইউএনএসসি) এ বিষয়ে প্রস্তাব উপস্থাপন করতে পারে, যেখানে জাতিসংঘের সদস্য দেশ সমূহকে ইসরায়েলকে আইসিজে দ্বারা নির্দেশিত জরুরি ব্যবস্থা মেনে চলার জন্য ভোট দিতে বলা হবে।

গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে পূর্ববর্তী বিভিন্ন সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধবিরতি এবং তার ঘনিষ্ঠ মিত্র ইসরায়েলের জবাবদিহিতার জন্য আনা প্রস্তাব সমূহকে থামিয়ে দিতে তার ভেটো ক্ষমতা ব্যবহার করেছে। এজন্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে আইসিজে-অনুমোদিত সিদ্ধান্তে ওয়াশিংটনের ভেটো আন্তর্জাতিক নিয়ম-ভিত্তিক আদেশ বজায় রাখার জন্য চীন এবং রাশিয়ার মতো প্রতিদ্বন্দ্বী সহ অন্যদের জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আহ্বানকে ক্ষতিগ্রস্থ এবং দুর্বল করতে পারে।

হেগ থেকে আল জাজিরা ইংরেজী বিভাগের কূটনৈতিক সম্পাদক জেমস বেস বলেছেন, "এই রায় মার্কিন প্রশাসনে একটি বাস্তব পার্থক্য তৈরি করতে পারে এবং অবশ্যই এ জন্য সেখানে একটি সত্যিকারে দ্বিধা তৈরি হতে পারে।"

ইউএনএসসি যদি ইসরায়েলকে আইসিজে-এর আদেশ মেনে চলার জন্য একটি প্রস্তাব পাস করে, তাহলে তার ইসরায়েলের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা থাকবে। এরূপ অতীত উদাহরণ সমূহের মধ্যে অর্থনৈতিক বা বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা, অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা এবং ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

জাতিসংঘ সনদ নিরাপত্তা পরিষদকে আরও এক ধাপ এগিয়ে গিয়ে এতে বলপ্রয়োগ করে হস্তক্ষেপ করার অনুমতি দেয়। এর একটি উদাহরণ হচ্ছে ১৯৯১ সালে মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট যা ইরাকি নেতা সাদ্দাম হোসেনের কুয়েতে আগ্রাসনের মোকাবিলা করার জন্য তৈরি করা হয়েছিল। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তা পরিষদকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে এ ধরনের কোনো পদক্ষেপ নিতে দেবে এমন সম্ভাবনা খুবই কম।

লন্ডনের কুইন মেরি ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক আইনের অধ্যাপক নেভ গর্ডন বলেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশ সমূহকে এখন ইসরায়েলের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিককরণ বা এতে ভেটো ব্যবহার করার বিষয়ে গুরুত্ব সহকারে পুনর্বিবেচনা করতে হবে। তিনি বলেন, "এটি এখন একটি নতুন বলগেম, যেখানে বিশ্বের সর্বোচ্চ আদালত বলছে, প্রাথমিকভাবে এবং প্রথম ধারণায় ইসরাইল গণহত্যা করছে"।

আইসিজে তে এর পরে কি হবে?

শুক্রবারের রায়টি ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার অনুরোধ করা জরুরি অবস্থা মোকাবেলার জন্য একটি অন্তর্বর্তীকালীন রায়। ইসরায়েলকে ২৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে উপরোক্ত জরুরী আদেশ সমূহ সম্পাদন করার জন্য যে পদক্ষেপ সমূহ নিচ্ছে তার রিপোর্ট জমা দিতে হবে; অর্থাৎ শুক্রবারের রায় থেকে এক মাসের মধ্যে তা করতে হবে। এরপর দক্ষিণ আফ্রিকাকে সেই প্রতিবেদনের জবাব দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে।

আদালত তারপরে প্রতিবেদনটি মূল্যায়ন করবে এবং গাজার বাস্তব অবস্থার উপর অতিরিক্ত তথ্য দেবে। এটি যদি এই উপসংহারে আসে যে ইসরায়েল এই প্রাথমিক আদেশসমূহ মেনে চলছে না এবং নতুন ভাবে সমস্যা তৈরী করছে, তখন আদালত অতিরিক্ত শুনানি করবে এবং এই মাসের শুরুতে দক্ষিণ আফ্রিকা কর্তৃক ইসরায়েলের বিরুদ্ধে এবং ইসরায়েলের প্রতিরক্ষার অভিযোগকে সমর্থন করে আদালতে উপস্থাপিত প্রমাণের উপর আলোচনা একসাথে সাথে এগিয়ে যাবে। বিচারকরা পৃথকভাবে গাজায় গণহত্যা সম্পর্কিত দক্ষিণ আফ্রিকার মূল দাবি সমূহ মূল্যায়ন করবেন এবং আদালতের চূড়ান্ত রায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার দ্বারা নির্ধারিত হবে।

আদালত বলেছে যে মামলার প্রাথমিক আদেশসমূহ আদালতের সেই সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে ছিল যেখানে ইসরায়েল দ্বারা গণহত্যার অভিযোগে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রমাণ "প্রাইমা ফেসী বা প্রাথমিক দৃষ্টিতে" অস্বীকার করা যায় না। গর্ডন বলেন যে এটিই "প্রধান বিষয়"। অপরদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চুড়ান্ত রায় দিতে তিন বা চার বছর সময় লাগতে পারে।

বিচারক কারা এবং কারা আদেশের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন?

আইসিজে হল একটি জাতিসংঘের দেওয়ানি আদালত যা দেশসমূহের মধ্যে বিরোধের বিচার করে, যাকে বিশ্ব আদালতও বলা হয়। এটি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) থেকে আলাদা। আইসিসি যুদ্ধাপরাধের জন্য অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচার করে।

আইসিজে ১৫ জন বিচারক নিয়ে গঠিত যারা জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ (ইউএনজিএ) এবং নিরাপত্তা পরিষদে (ইউএনএসসি) নির্বাচনের মাধ্যমে নয় বছরের জন্য নিযুক্ত হন। এই মামলার জন্য তাদের সাথে যোগ দিয়েছেন দুই বিশেষ প্রতিনিধি বিচারক। একজন দক্ষিণ আফ্রিকার ডেপুটি প্রধান বিচারপতি ডিকগ্যাং মোসেনেকে এবং অপর ইসরায়েলের সুপ্রিম কোর্টের প্রেসিডেন্ট আহারন বারাক।

বিচারকদের নিরপেক্ষ হওয়ার কথা কিন্তু অতীতে কেউ কেউ তাদের দেশের রাজনীতির সাথে সঙ্গতি রেখে ভোট দিয়েছেন। উদাহরণস্বরূপ, যখন ইউক্রেন রাশিয়ার বিরুদ্ধে অস্থায়ী ব্যবস্থার জন্য ক্রেমলিনকে যুদ্ধ বন্ধ করার আদেশ চেয়ে আইসিজে-এর কাছে আবেদন করেছিল, তখন ১৫ বিচারকের মধ্যে ১৩ জন কিয়েভের অনুরোধের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। কিন্তু রাশিয়া ও চীনের বিচারক ২জন বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন।

শুক্রবার আদালতের দ্বারা আরোপিত রায়ে ভিন্নমত পোষণকারী দুজন বিচারক ছিলেন উগান্ডার বিচারক জুলিয়া সেবুটিন্ডে, যিনি সমস্ত আদেশের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছিলেন এবং বিচারক আহারন বারাক, যিনি ছয়টি আদেশের মধ্যে চারটির বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছিলেন।

বিচারক সেবুটিন্ডে তার ভিন্নমত প্রকাশ করার বিষয়ে যুক্তি দিয়েছিলেন যে তিনি এ বিষয়ে একমত নন যে ইসরায়েল গণহত্যা করার "উদ্দেশ্য" দেখিয়েছিল। তাই তার মতে মামলাটি আইসিজেতে বিচার্য বিষয়ের মধ্যে পড়েনা।

ইসরায়েল এবং গাজার জন্য পরবর্তীতে কি রয়েছে?

যদিও আইসিজে শর্ত দিয়েছিল যে ইসরায়েলকে ১৯৪৮ সালের গণহত্যা কনভেনশন মেনে চলতে হবে। কিন্তু এটি যুদ্ধবিরতি বা সাংঘাত বন্ধ করার আহ্বান জানানো থেকে বিরত ছিল। মানবিক সহায়তা বৃদ্ধির মতো পদক্ষেপের জন্য যুদ্ধবিরতির প্রয়োজন হবে এটা উল্লেখ করে গর্ডন বলেন, ইসরায়েল শত্রুতা বন্ধ না করেই অন্যান্য অস্থায়ী আদেশ সমূহ মেনে চলবে- এরকম কোন উপায় আমি দেখি না।

পূর্ববর্তী কিছু প্রতিবেদনে দেখানো হয় যে ভাঙা রাস্তা এবং অব্যাহতভাবে ইসরায়েলি বোমাবর্ষণ গাজায় প্রয়োজনীয় ও কার্যকর সাহায্য বিতরণে বাধা সৃষ্টি করেছে। এছাড়াও যারা গাজায় গণহত্যায় উসকানি দেয় তাদের শাস্তি দেওয়ার আহ্বান জানানো প্রাথমিক আদেশ সম্ভবত ইসরায়েলের নেসেটের সদস্যদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না, কারণ তাদের সংসদীয় ইমিউনিটি রয়েছে। নেসেটকে তাদের শাস্তি দেওয়ার আগে একজন সদস্যের ইমিউনিটি প্রত্যাহার করতে ভোট দিতে হবে। এ বিষয়ে গর্ডন বলেছেন যে তাদের অধিকাংশই গাজার বিরুদ্ধে ইসরায়েলের যুদ্ধকে সমর্থন করে বলে মনে হয়না। তা সত্ত্বেও, ইসরায়েলকে ফিলিস্তিনিদের গণহত্যার জন্য আহ্বান জানানো বিবৃতির জন্য সেনা সদস্য এবং ভাষ্যকার সহ সংসদ সদস্য নয় এমন ব্যক্তিদের বিচার করতে হবে এবং শাস্তি দিতে হবে।

তদুপরি, আদালত তিনজন সিনিয়র ইসরায়েলি কর্মকর্তার করা মন্তব্য বিশেষভাবে উল্লেখ করেছে, যাদের মন্তব্য একটি গণহত্যার অভিপ্রায় প্রদর্শন করে বলে মনে হয়েছে। গর্ডন বলেন যে ইসরায়েলের রাষ্ট্রপতি আইজাক হারজোগ সহ কর্মকর্তাদের দেওয়া এই বিবৃতিসমূহের প্রতি আদালতের উল্লেখ ছিল "অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ"। তিনি বলেন, প্রকৃতপক্ষে দেখা গেছে যে আদালত "স্পষ্টভাবে" ইসরায়েলী ব্যাখ্যার সাথে একমত হয়নি। যেখানে ইসরায়েল দাবী করছিল যে এই ধরনের মন্তব্য বিক্ষিপ্ত এবং দেশের সামরিক অভিযানের সাথে কোন কার্যকরী সম্পর্ক নেই।

মানবাধিকার সংস্থা ওয়ার অন ওয়ান্টের প্যালেস্টাইন অঞ্চলের সিনিয়র ক্যাম্পেইনার নিল স্যামন্ডস বলেন, আদালতের নির্দেশিত ব্যবস্থা কার্যকর করা কঠিন হবে। এখানের সবকিছু ইসরায়েলের এখতিয়ারের জন্য রাখা হয়েছে। ইসরায়েলকে কীভাবে এতে নির্দেশ পালন করতে হবে সে সম্পর্কে কোনও সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। অপরদিকে নেতানিয়াহু ইতিমধ্যে বলেছেন যে ইসরাইল আদালতের রায় মেনে চলবে না।

সূত্র: আল জাজিরা

সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


মুসলিম বিশ্ব বিভাগের সর্বাধিক পঠিত


শামীম সুলতানা একজন তরুণ মুসলিম মহিলা, সিঙ্গাপুরের নাগরিক এবং তিনি কায়...

মুসলিম বিশ্ব | 2023-06-21 22:32:39

তুর্কিয়ের ফার্স্ট লেডি এমিন এরদোগান জাতিসংঘের শিক্ষা, বৈজ্ঞানিক ও সাং...

মুসলিম বিশ্ব | 2023-05-23 09:44:54

১৯৯৫ সালে, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার স্রেব্রেনিকাতে প্রায় ৮ হাজার বসনিয়...

মুসলিম বিশ্ব | 2023-07-15 19:48:15

সুদান ভেঙ্গে আবারও নতুন দেশের উদয় হবে বলে ইসরাইল আশা করছে

মুসলিম বিশ্ব | 2023-04-29 02:07:05

রাশিয়ার বৃহত্তম ঋণদাতা Sberbank-এর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ওলেগ গনিয...

মুসলিম বিশ্ব | 2023-07-14 03:30:52

২৮ জুন স্টকহোম সেন্ট্রাল মসজিদের বাইরে কুরআন পোড়ানোর প্রতিবাদে বিশ্বব...

মুসলিম বিশ্ব | 2023-07-01 04:57:28

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF) ২০২৩ সালকে একটি একটি কঠিন অর্থনৈতিক বছর...

মুসলিম বিশ্ব | 2023-06-13 23:28:54

রাজধানী খার্তুম, দারফুর ও কর্ডোফান রাজ্যে হত্যা, লুটপাট এবং ধর্ষণ সহ ন...

মুসলিম বিশ্ব | 2023-08-30 12:58:03