জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিনে করণীয় ৯ টি আমল


ইসলামী বার্তা ডেক্স
Published: 2024-06-07 23:52:02 BdST | Updated: 2024-07-04 05:18:00 BdST

জিলহজ মাসের প্রথম দশ দিন হল বছরের সবচেয়ে ফজিলতপূর্ণ দিন, যে দিনগুলোতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তাঁর বান্দাদেরকে তাঁর অসীম রহমতের মাধ্যমে তাদের পুরস্কার বহুগুণ করার সুযোগ দিয়েছিলেন। এই দিনগুলি এতই পবিত্র যে, আল্লাহ তায়ালা শপথ করে বলেছেন: '‘শপথ ভোরবেলার! শপথ ১০ রাতের!’ [আল-কোরআন, ৮৯:১-২]। 

অপর আয়াতে মহান আল্লাহ আমাদের স্মরণ করিয়ে দেন, 'নির্ধারিত দিনে আল্লাহকে স্মরণ কর'। [আল-কোরআন, ২:২০৩]

তাই এই পবিত্র সময়ে আমাদের ইবাদত বাড়ানো উচিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, জিলহজের প্রথম ১০ দিনের আমলের তুলনায় কোনো আমল-ই অন্য কোনো সময় উত্তম নয় । [আবু দাউদ]

বছরের সেরা দশ দিনে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য এবং সর্বোচ্চ পুরস্কার পাওয়ার জন্য এখানে নয়টি আমলের বিষয়ে উল্লেখ করা হল:

১. যিকির করা

যিকির একটি সহজ কিন্তু কার্যকরী আমল। তাই এসময় যিকির করা বৃদ্ধি করুন। মক্কায় দিন-রাত প্রত্যেক হাজীর মুখে তালবিয়াহ থাকা উচিত। ঘরে থাকা ব্যক্তিদেরকেও এই দশ দিনে ক্রমাগত আল্লাহর প্রশংসা করার উপদেশ দেওয়া হয়েছে। ঈদের তাকবীর হল তাহলীল, তাকবীর এবং তাহমীদ - এটা হচ্ছে তিনটি বক্সে টিক চিহ্ন দেওয়ার একটি উদাহরণ। প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পরেও যিকির করতে পারেন - সুবহানাল্লাহ ৩৩ বার, আলহামদুলিল্লাহ ৩৩ বার এবং আল্লাহু আকবার ৩৪ বার। দিনে একশত বার সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি (আল্লাহর পবিত্রতা ও প্রশংসা) পাঠ করলে পাপসমূহ মুছে যাবে - তা যতই ভারী হোক না কেন। এই সহজ আমল নিশ্চিত করবে যে আপনি সারা দিন আল্লাহকে স্মরণ করছেন এবং জিলহজের বরকত থেকে উপকৃত হচ্ছেন।

২. প্রথম নয় দিন রোজা রাখা

জিলহজের প্রথম নয় দিনে রোজা রাখা সুন্নাত, কেননা রোজা সর্বোত্তম আমলের একটি। হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, 'আদম সন্তানের রোজা ব্যতীত সকল আমলই তার জন্য, কিন্তু রোজা আমার জন্য এবং আমি এর প্রতিদান দেব'। [আল-বুখারী]

আপনি যদি পুরো নয় দিন রোজা রাখতে সক্ষম না হন তবে শুধুমাত্র আরাফার দিন অর্থাৎ ৯ তারিখে রোজা রাখার চেষ্টা করুন। লাইলাতুল কদর যেমন বছরের সবচেয়ে বরকতময় রাত, তেমনি আরাফার দিন বছরের সবচেয়ে বরকতময় দিন। রাসুল (সাঃ) বলেছেন, এমন কোন দিন নেই যেদিন আল্লাহ আরাফার দিনের চেয়ে বেশি মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন। (আল-মুসলিম)

লাইলাতুল কদরের মতো, আমাদের এই দিনটিকে ক্ষমা প্রার্থনা এবং আল্লাহর অবিশ্বাস্য রহমত লাভের জন্য ব্যয় করা উচিত। এই দিনে অ-হাজীরা রোজা রেখে দুই বছরের পাপ মুছে ফেলার সুযোগ পান! রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘আরাফাহ দিবসের রোজা বিগত এক বছরের ও আগামী বছরের গুনাহ মাফ করে দেয়। [আল-মুসলিম]

৩. কোরআন তেলাওয়াত করা

আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে এবং তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কোরআন তিলাওয়াত হল একটি সর্বোত্তম ইবাদত। রাসুল (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর কিতাবের একটি অক্ষর পাঠ করবে, তার জন্য একটি সওয়াব রয়েছে। আর সেই সওয়াব হবে দশ গুণ। আমি বলছি না যে "আলিফ, লাম, মীম" একটি অক্ষর, বরং আমি বলছি যে "আলিফ" একটি অক্ষর, "লাম" একটি অক্ষর এবং "মীম" একটি অক্ষর'। [তিরমিযী]

সুবহানআল্লাহ, এই বরকতময় দিন সমূহে প্রতিটি অক্ষর পড়ার ফলে আপনি যে পুরষ্কার অর্জন করবেন তা কল্পনা করুন,  যেখানে আল্লাহ আপনার পুরস্কার বহুগুণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন!

৪. প্রিয়জনকে স্মরন করা

আমাদের মধ্যে অনেকেই বিশেষভাবে হজ করার চেষ্টা করব প্রিয়জনের জন্য যারা মারা গেছেন। হজের সময় প্রিয়জনদের জন্য দুআ করা উচিত, যাতে আল্লাহ তাদের ক্ষমা করেন এবং বিচারের দিন তাদের প্রতি রহম করেন।

আপনি যদি প্রিয়জনের জন্য হজ করতে সক্ষম না হন, তবে আপনি এই বরকতময় দিনসমূহে তাদের নামে সাদাকাহ জারিয়াহ দিয়ে তাদের স্মরণ ও উপকার করতে পারেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, 'যখন কোনো ব্যক্তি মারা যায়, তখন তিনটি আমল ছাড়া অন্য সব আমলের দরজা বন্ধ হয়ে যায়, সে তিনটি হচ্ছে: সাদাকাহ জারিয়াহ, এমন জ্ঞান যা থেকে উপকার পাওয়া যায়, এবং একজন সৎ সন্তান যে তার জন্য দোয়া করে'। [আল-মুসলিম]

৫. তাহাজ্জুদ নামায পড়া

আমাদের মধ্যে অনেকেই রমজানের শেষ দশ রাতে অথবা অনেকে পুরো রমজান মাসে  রাতের ইবাদতের মাধ্যমে লায়লাতুল কদর খোঁজার 'আধ্যাত্মিক উচ্চতা' অর্জনের চেষ্টা করে। কিন্তু আপনি কি জানেন যে, জিলহজ মাসের প্রথম দশ রাতে নামাজ পড়া লাইলাতুল কদরের নামাজের সমতুল্য?

৬. সাদাকা দেওয়া

আমরা অনেকেই রমজানের শেষ দশ রাতে আমাদের সাদাকাকে সর্বাধিক করে থাকি, কিন্তু জিলহজের প্রথম দশ দিন ঠিক ততটাই মূল্যবান এবং সাধারণ ভালো কাজের জন্য অতিরিক্ত সওয়াব অর্জনের উপযুক্ত সুযোগ প্রদান করে। হাসান আল-বসরী (রহঃ) বলেছেন, 'একবার হজ করার পর আবার হজ করার চেয়ে তোমার ভাইয়ের প্রয়োজন মেটাতে যাওয়া তোমার জন্য উত্তম'।

আমাদের অভাবী ভাই ও বোনদের সাহায্য করা আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় কাজগুলির মধ্যে একটি এবং আপনার কাছে রয়েছে নিখুঁত হাতিয়ার যা আপনাকে জিলহজের বরকতময় দিনগুলিতে আপনার পুরষ্কার সর্বাধিক করতে সহায়তা করবে। সেরা এই ১০ দিন হাজীদেরকে ইয়েমেন এবং সিরিয়া সহ পাঁচটি মীকাতে আপনার অনুদান বাড়ানোর সুযোগ দেয়, যাতে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার সমূহকে খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং চিকিৎসা সরবরাহ করা যায়।

৭. তাওবা ইস্তেগফার করা

হজ হল চূড়ান্ত ইবাদাত যা আমরা মুসলিম হিসেবে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করার জন্য এবং আমাদের পাপের মোচনের জন্য করতে পারি, কিন্তু আমাদের অধিকাংশই ভাগ্যবান যদি আমরা আমাদের জীবনে অন্তত একবারও হজে যেতে পারি। এই কারণেই জিলহজ হল আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি নিখুঁত উপহার, যা আমাদেরকে অনুতপ্ত হতে এবং আমাদের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করার সুযোগ দেয়, যদিও আমরা হজযাত্রায় না থাকি। অনুতাপ আমাদেরকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে এবং আমাদের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আল্লাহ বলেন, 'তোমাদের পালনকর্তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর এবং তাঁর কাছে তাওবা কর, এবং তিনি তোমাদেরকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য উত্তম রিযিক ভোগ করতে দেবেন এবং প্রত্যেক অনুগ্রহকারীকে তার অনুগ্রহ দান করবেন। [আল-কোরআন, ১১:৩]

৮. ঈদের সালাত আদায় করা

ঈদের সালাত হল একটি সমাজ হিসাবে আমাদের ইসলামী পরিচয় দেখানোর একটি উপায় এবং সেইজন্য সকল মুসলিমের অংশ গ্রহণের জন্য এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) সর্বদাই ঈদের সালাতে উপস্থিত থাকতেন, যেমনটি তাঁর ইন্তেকালের পর তাঁর সাহাবীরা করেছিলেন। তিনি এতে প্রত্যেককে উপস্থিত থাকতে উৎসাহিত করেছেন, এমনকি ঋতুবর্তী মহিলাদেরও - যারা নিজে নামায পড়তে অক্ষম কিন্তু তবুও এই সমাবেশের বরকতে অংশ নিতে পারেন।

৯. কুরবানী করা

আবূ তালহা (রাঃ) বর্ণনা করেন, 'রাসূল (সাঃ) তাঁর উম্মতের মধ্য থেকে যে কুরবানী করতে পারেনি, অথচ সে আল্লাহর একত্ব ও তাঁর নবুওয়াতের সাক্ষ্য দেয় তার জন্য কুরবানী করেছেন। [তাবারানী ও আহমদ]

ঈদের সময়, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তাঁর উম্মতের ঐসকল ব্যক্তিদের পক্ষে অতিরিক্ত কুরবানী দিতেন যাদের সামর্থ্য নেই। আল্লাহ তায়ালা বলেন, 'তোমাদের কাছে তোমাদের মধ্য থেকেই আল্লাহর একজন রসূল এসেছেন, যিনি তোমাদের ক্ষতির কারণে ব্যথিত, যিনি তোমাদের কল্যাণ কামনা করেন এবং যারা বিশ্বাসী তাদের প্রতি কোমল ও করুণাময়'। [আল-কোরআন, ৯:১২৮]

সুবহানআল্লাহ, আমাদের প্রিয় রসূলের এই উদার কাজটি তাঁর উম্মতের প্রতি তাঁর করুণার একটি অবিশ্বাস্য উদাহরণ যা আল্লাহ উপরোক্ত আয়াতে উল্লেখ করেছেন, তাঁর উম্মতের জন্য কুরবানী করার এবং কিয়ামত পর্যন্ত তাদেরকে কল্যাণে আবৃত করার জন্য।

আপনিও এই সুন্দর সুন্নাহ অনুসরণ করতে পারেন এবং জিলহজের সময় আপনার সওয়াব বাড়াতে অতিরিক্ত কুরবানী দিতে পারেন। এতে আপনি শুধু একটি বিস্মৃত সুন্নাহকে পুনরুজ্জীবিত করবেন তা নয়, আপনি ঈদ-উল-আযহার দিনগুলিতে আরও বেশি অভাবী পরিবারকে জন্য আপনার কল্যাণময় কাজকে দ্বিগুণ করতে পারেন।


সূত্র : মুসলিম হ্যান্ডস

সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


ইসলামী বিষয়াবলী বিভাগের সর্বাধিক পঠিত


অনেক মুখমন্ডল সেদিন হবে সজীব, তাদের কর্মের কারণে সন্তুষ্ট, তারা থাকবে...

ইসলামী বিষয়াবলী | 2018-04-23 23:36:39

রাসূল স. বলেছেনঃ বেশি বেশি কোর’আন তেলা’ওয়াত কর, কেননা হাশরের দিন এ কো...

ইসলামী বিষয়াবলী | 2018-08-15 23:24:11

হযরত মুয়াজ (রা.) রাসূল (সা.) এর কাছ থেকে কিয়ামতের দিন প্রথম তিনজন জাহা...

ইসলামী বিষয়াবলী | 2018-02-22 00:11:13

মুসলিম উম্মাহর সদস্য হিসেবে আপনার উচিত সর্বদা জ্ঞান অর্জনে লিপ্ত থাকা।...

ইসলামী বিষয়াবলী | 2018-06-29 08:34:21

"হে আল্লাহ্, আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই দুশ্চিন্তা, দুঃখ, অক্ষমতা, অলসত...

ইসলামী বিষয়াবলী | 2018-05-06 13:46:07

হজ্জ্ব ইসলামের একটি মৌলিক ইবাদত। হিজরী ক্যালেন্ডার অনুসারে প্রতিবছর জি...

ইসলামী বিষয়াবলী | 2018-08-16 23:47:11

হযরত আবু যর (রা.) থেকে বর্ণিত, সহীহ বুখারী ও মুসলিম উভয় হাদীসগ্রন্থেই...

ইসলামী বিষয়াবলী | 2018-06-22 23:12:36

রাসূল (সা.) এর এক হাদীসে কেয়ামতের নিকটবর্তী হওয়ার লক্ষন হিসেবে দশটি নি...

ইসলামী বিষয়াবলী | 2019-04-10 23:46:12