কেন হজে যাওয়া লোকেরা সাদা পোশাক পরে?

ইসলামে হজ একটি তাৎপর্যপূর্ণ ইবাদাত। হজের অন্যতম পূর্বশর্ত হচ্ছে ইহরাম । ইহরামে হজের জন্য একটি বিশেষ পোশাক পরতে হয় যা সাদা রঙের এবং প্রতিটি মুসলিম নর-নারীকে মীকাতের বিন্দু থেকে এটি পরিধান করতে হয়। মীকাত বিভিন্ন দেশ থেকে ভ্রমণকারী সকল হজযাত্রীদের জন্য পূর্বনির্ধারিত। আর্থিক অবস্থা, বর্ণ, উৎপত্তি দেশ এবং ভাষা নির্বিশেষে সকল মুসলিমের জন্য ইহরামের পোষাক একই।

হজের পাশাপাশি ওমরাহতেও ইহরামের গুরুত্ব রয়েছে। এটা বোধগম্য যে জীবনের অনেক ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা, পেশা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সমতা দেখানোর জন্য একটি নির্দিষ্ট ড্রেস কোড বা ইউনিফর্ম প্রয়োজন হয়। যেমনটি হাসপাতাল, স্কুল, কলেজ, সেনাবাহিনী, এয়ারলাইন্স, পুলিশ ইত্যাদি ক্ষেত্রে এই শৃঙ্খলা বা ইউনিফর্ম দেখা যায়। তাই ইহরামের বাধ্যতামূলক ব্যবস্থা বেশ বোধগম্য। ইসলামের সবচেয়ে বড় সমাবেশে সারা বিশ্বের লক্ষ লক্ষ মুসলিম সাদা পোশাকে আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য অনুরূপ ইবাদাত সম্পাদন করে।

ইহরামের তাৎপর্য
ইহরামের তাৎপর্য অনেক। প্রথমত, সাদা রঙ পবিত্রতা, ধার্মিকতা এবং পরিচ্ছন্নতার প্রতীক। ইসলাম বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ পরিচ্ছন্নতা, পবিত্রতা ও সরলতার বাণী প্রচার করে। এই অর্থে, হজের ড্রেস কোড সত্যিকার অর্থে ইসলামের চেতনাকে চিত্রিত করে।

ইহরামের গুরুত্ব বোঝা যায় এভাবে যে, ইহরামের পোষাক ময়লা হয়ে গেলে বা তাতে তরল সুগন্ধি ব্যবহার করা হলে হজের প্রক্রিয়া চালিয়ে যাওয়ার জন্য সে পোষাক পরিবর্তন করে নতুন ইহরাম বাঁধতে হয়। এই সাদা রঙ মনোযোগ পেতে এবং একটি সাধারণ পুরুষ বা মহিলার মত চেহারা এড়াতে সাহায্য করে। ইহরামের ব্যবস্থা না থাকলে লোকেরা বিভিন্ন ধরণের কাপড় এবং রঙ পরিধান করত। এতে বিভিন্ন রঙ ইবাদাতকারীদের মনোযোগ বিঘ্নিত করত। এটি তাদের অনেককে বিশিষ্ট বা লক্ষণীয় করে তুলত, যেমন যদি তারা তাদের সংস্কৃতি, দেশ এবং জাতি ইত্যাদি অনুসারে বিভিন্ন ধরণের পোশাক পরত।

ইহরামের আরেকটি সুবিধা হল এটি হজ পালনকারী ব্যক্তিদের আর্থিক অবস্থা প্রদর্শন করার সুযোগ দেয় না। ধনী বা গরীব, রাজপুত্র বা কেরানি, কোটিপতি বা ছোট ব্যবসায়ী, সবাই একই পোশাক পরে। এইভাবে, লোকেরা কোনও হীনমন্যতা বা শ্রেষ্ঠত্বের জটিলতা ছাড়াই অন্যদের মধ্যে আরও স্বাচ্ছন্দ্য এবং সমান বোধ করে ইবাদাতে মনোযোগ দিতে পারে। 

এটি আরও বুঝায় যে আল্লাহ মুসলিমদেরকে সম্পদের মূল্য দিয়ে মূল্যায়ন করেন না। মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে সবাই সমান, তবে তারাই তাঁর কাছে বেশি সন্মানিত যারা ধার্মিকতায় উৎকৃষ্ট এবং সৎ উদ্দেশ্যে কাজ করে। পবিত্র কোরআনেও এই সত্যটি বিশদভাবে বর্ণনা করা হয়েছে যে ধর্ম, বর্ণ, অর্থ ইত্যাদি মুসলিমদের যোগ্যতা নয়, যোগ্যতা হচ্ছে ইমান ও আমল।

উপসংহার
একই স্থানে লক্ষাধিক লোকের সাথে সমবেত হওয়া এবং একই কাজ করা, একইভাবে প্রার্থনা করা এবং একসাথে আল্লাহর কাছে ক্ষমা ও রহমত চাওয়ার সারমর্ম হল মুসলিমদের মধ্যে ঐক্য, শৃঙ্খলা ও ভ্রাতৃত্ববোধ জাগানো। যখন বহু মানুষ একই পোশাকে বহু দিন একত্রে অবস্থান করে এবং প্রার্থনা করে, তখন তা তাদের মধ্যে সম্প্রীতি ও শৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। একই পোষাক কোড এবং ইবাদাতের ধরণ যেভাবে মুসলিমরা অনুসরণ করে তা যে মহান শৃঙ্খলা প্রদর্শন করে, তা সবসময় বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়।

সূত্র : এ্যাবাউট ইসলাম