বাংলাদেশে ধর্মীয় সম্প্রীতি নস্যাতের গভীর ষড়যন্ত্র

[ছবি: বাংলাদেশের ঢাকায় ঢাকেশ্বরী হিন্দু মন্দিরের সামনে হামলা প্রতিরোধে মুসলিম স্বেচ্ছাসেবকরা পাহারা দিচ্ছে, ১১ আগস্ট, ২০২৪]

বাংলাদেশ একটি বহুমুখী সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের দেশ, যেখানে বিভিন্ন ধর্ম, বর্ণ এবং সম্প্রদায়ের মানুষ দীর্ঘকাল ধরে একসঙ্গে বসবাস করে আসছে। ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের সামাজিক কাঠামোতে সাম্প্রদায়িক ও ধর্মীয় সম্প্রীতির গুরুত্ব অত্যন্ত গভীর। এটি দেশের রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে অগ্রযাত্রায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

কিন্তু ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর হিন্দুদের উপর হামলা ও এ সম্পর্কিত সংবাদ সমূহ এক গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবে তৈরী করা হয়। যা বেশিরভাগই ভারত থেকে রচিত এবং আওয়ামী লীগের দ্বারা সম্পাদিত। 

দ্যা ডিপ্লোমেটের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, সংখ্যালঘুদের উপর হামলা সম্পর্কে বিভ্রান্তি বাংলাদেশে স্থিতিশীলতার প্রচেষ্টাকে হুমকির মুখে ফেলছে। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর, বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের, অর্থাৎ প্রধানত এর হিন্দুদেরকে লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে বলে দাবি করে একটি বিভ্রান্তির ঢেউ হাসিনার সমর্থক এবং ভারতের হিন্দু ডানপন্থীদের অংশ দ্বারা প্রচার করা হয়েছে ।

বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর কথিত "গণহত্যা" সম্পর্কে মিথ্যা বর্ণনা, যা প্রায়শই অনুরূপ কিন্তু প্রসঙ্গহীন ফুটেজের সাথে থাকে, মূলধারা এবং সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম জুড়ে আকর্ষণ অর্জন করেছে। যা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে আতঙ্ক বাড়িয়ে দিয়েছে। ফ্যাক্ট-চেকাররা অনলাইনে প্রচারিত পুরানো ছবি এবং অযাচাইকৃত দাবির অসংখ্য উদাহরণ শনাক্ত করেছে, যার মধ্যে বেশিরভাগ জাল খবর ভারতে উদ্ভূত মিডিয়া এবং ট্রল থেকে পাওয়া গেছে।

হিন্দুদের উপর হামলার পেছনে আওয়ামীগের হাত:

টিবিএস নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, হিন্দুদের উপর আক্রমণ বেশিরভাগই এর মূলে রাজনৈতিক, ব্যক্তিগত প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল। কোনো এলাকায় হামলার পেছনে আওয়ামী লীগের লোকজনের হাত রয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। অপর দিকে অনেক এলাকায়, স্থানীয় বাসিন্দারা বিশেষ করে ছাত্ররা, ধর্ম নির্বিশেষে, পুলিশ কর্মীদের অনুপস্থিতির কারণে রাতে টহল দিয়ে হিন্দু বাড়ি এবং মন্দির রক্ষা করার দায়িত্ব নিজেরাই নিয়েছে।

ভারতীয় মিডিয়া পোড়া রেস্তোরাঁকে মন্দির বলে চালিয়েছে:

সাতক্ষীরার কলারোয়ায় এক যুবলীগ নেতার পুড়ে যাওয়া রেস্তোরাঁ ভবনকে মন্দির বলে বিভ্রান্তিকর খবর দিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যম। এসব গুজবে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সাতক্ষীরা মন্দির সমিতির নেতারা। সাতক্ষীরা জেলা মন্দির সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিত্যানন্দ আমিন বলেন, "সাতক্ষীরার কোথাও মন্দির পোড়ানো বা ভাঙচুরের কোনো খবর আমরা পাইনি। প্রশ্নবিদ্ধ ভবনটি কলারোয়ায় রাজপ্রসাদ নামে একটি রেস্টুরেন্ট, যেটিকে ভুলভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। দয়া করে এই গুজবে কেউ বিভ্রান্ত হবেন না।"

ভারতের কিছু সংবাদ মাধ্যমের ইসলামফোবিয়া:

ইসলামোফোবিয়া আক্রান্ত ভারতের কিছু সংবাদ মাধ্যম বাংলাদেশের সংকটকে প্রচার করেছে যেন বাংলাদেশের বিক্ষোভের সাথে চীন ও পাকিস্তানি গোয়েন্দাদের যুক্ত করার দাবি করে এবং হিন্দুদের উপর হামলার মাত্রাকে অতিরঞ্জিত করে।

টাইমস গ্রুপের মালিকানাধীন মিরর নাউ এর ইউটিউব চ্যানেলের একটি ভিডিও, যার শিরোনাম বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর হামলা ও গণহত্যা,  চারটি বাড়িতে সহিংসতা এবং অগ্নিসংযোগের ফুটেজ দেখায়, তাদের মধ্যে দুটি মুসলিমদের মালিকানাধীন বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। ভিডিওটির শিরোনাম স্পষ্টতই বিভ্রান্তিকর কারণ এই ঘটনায় কোনো গণহত্যার খবর পাওয়া যায়নি। স্থানীয় প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে তার একটি বাড়ি বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রতীক শেখ মুজিবুর রহমানের। ভিডিওটিতে অপ্রমাণিত একটি দাবিও করে, যেমন "জনতা দ্বারা ২৪ জনকে জীবন্ত পুড়িয়ে দেওয়া হয়" এবং "আক্রমণের কেন্দ্রে সংখ্যালঘুরা"।

আল জাজিরা স্বাধীনভাবে যাচাই করেছে যে সোমবার হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকে মাত্র দুইজন হিন্দুকে হত্যা করা হয়েছে – কারণ তাদের একজন পুলিশ কর্মকর্তা এবং অপরজন হাসিনার আওয়ামী লীগ দলের কর্মী।

সূত্র : আল-জাজিরা, দ্যা ডিপ্লোমেট, টিবিএস নিউজ