ফিলিস্তিনিদের জন্য মুসলিম উম্মাহর যে ১৩টি কাজ করা উচিত: ড. জাকির নায়েক


অনুবাদ: তারেক হাসান
Published: 2023-10-23 09:47:02 BdST | Updated: 2024-09-28 09:19:10 BdST

ড. জাকির নায়েকের সাম্প্রতিক একটি বক্তব্য ইসলামী বার্তার পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো:

ফিলিস্তিনে কী ঘটছে তা আমাদের অধিকাংশের জানা। এ পরিস্থিতিতে আমাদের মুসলিমদের অবস্থান কি? প্রথমেই মুসলিম হিসেবে আমাদের বুঝতে হবে যে আজ প্রায় ৫২ লাখের বেশি (৫.২১১ মিলিয়ন) ফিলিস্তিনি মুসলিম রয়েছে যাদের মধ্যে ২০ লাখের বেশি অবস্থান করছে গাজা উপত্যকায়, এবং বর্তমানে বিশ্বের মোট মুসলিম জনসংখ্যা ২০০ কোটির বেশি। আমার মতে, এই ফিলিস্তিনিরা গত কয়েক দশক ধরে মুসলিমদের করণীয় একটি  ফরজে কেফায়া দায়িত্ব পালন করছে। তারা ইসলামের তৃতীয় পবিত্র স্থান রক্ষা করছে, তারা মসজিদুল আকসাকে রক্ষা করছে। তারা যা করছে তা ফরজে কেফায়া, যেটা প্রত্যেক মুসলিমের কর্তব্য। তারা সেখানে না থাকলে তা রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য ছিল। তাই ফিলিস্তিনিরা যা করছে তা হল জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মুসলিম উম্মাহর পক্ষে একটি ফরয দায়িত্ব পালন করছে। বর্তমানে মুসলিম উম্মাহ বিশ্বের জনসংখ্যার ২৫% এরও বেশি।  পৃথিবীতে ৭৮০ কোটির বেশি মানুষ রয়েছে যার মধ্যে ২০০ কোটির বেশি মুসলিম। এটা লজ্জাজনক যে আমরা সমস্ত মুসলিম (যা বিশ্বের জনসংখ্যার ২৫% এরও বেশি) একসাথে  মসজিদুল আকসাকে রক্ষা করতে পারছিনা। তাই প্রথম কথা হলো, এই ফিলিস্তিনি ভাই বোনেরা একাই ইসলামের তৃতীয় পবিত্রতম স্থান মসজিদকে রক্ষা করে সেই ফরযে কেফায়া দায়িত্ব পালন করছে, যা প্রতিটি মুসলিমদের করা উচিত ছিল। এখানে আমি সংক্ষেপে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট উল্লেখ করব। আমি সংক্ষেপে ১৩ টি পয়েন্ট উল্লেখ করব, যা প্রতিটি মুসলিমদের করা উচিত। যার মধ্যে প্রথম সাতটি প্রত্যেক মুসলিম করতে পারে এবং করা উচিত। আর বাকি গুলো সকলের পক্ষে সম্ভব নাও হতে পারে, তবে আল্লাহ যাদেরকে সেগুলো করার তৌফিক দিয়েছেন তারা করতে পারবেন।

১. এক নম্বর হচ্ছে যে কোনো মুসলিমের নূ্নতম যা করা সম্ভব এবং করা উচিত তা হল ফিলিস্তিনিদের জন্য এবং মসজিদুল আকসার জন্য দুআ করা। আমি মনে করি আমাদের ফিলিস্তিনি ভাই ও বোনদের জন্য প্রার্থনা করা প্রত্যেকটা মুসলিমের উচিত। তাদের নিরাপত্তার জন্য প্রার্থনা করা উচিত, বিজয়ের জন্য প্রার্থনা করা উচিত। আমাদের প্রার্থনা করা উচিত যেন আল্লাহ তাদেরকে শান্তি ও সক্ষমতা দান করেন, আমাদের প্রার্থনা করা উচিত যেন ফিলিস্তিনিরা যারা শহীদ হয়েছেন, আল্লাহ যেন তাদেরকে জান্নাতুল ফেরদাউস দান করেন। আমার পরামর্শ হচ্ছে আমাদের ফিলিস্তিনি ভাইদের জন্য দোয়ার সর্বোত্তম সময়- তাহাজ্জুদ নামাজের সময় । কারণ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা রাতের শেষ এক তৃতীয়াংশে অবতরণ করেন এবং আপনি যদি তাহাজ্জুদের সালাতের মধ্যে দুআ করেন এটি হবে সর্বোত্তম। আমরা মুসলিমরা যারা নিয়মিত তাহাজ্জুদের জন্য উঠি, তাদের দোয়া করা উচিত। আর যারা এতে অভ্যস্ত নয় অন্তত এটা আপনার জন্য একটি অজুহাত বা উদ্যোগ হতে পারে যাতে আপনি রাতের শেষ এক তৃতীয়াংশে উঠে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করেন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার কাছে এই সালাতে আপনি আমাদের ফিলিস্তিনি ভাই বোনদের নিরাপত্তার জন্য, বিজয়ের জন্য, শান্তির জন্য এবং যারা শহীদ হয়েছেন তাদের জন্য জান্নাতুল ফেরদাউসের জন্য দোয়া করুন। আপনি হয়তো জানেন না যে এই কারণে তাহাজ্জুদের জন্য উঠা আপনার অভ্যাসে পরিণত হতে পারে। এটাই সর্বোত্তম সময় যেখানে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা মুমিনদের প্রার্থনার উত্তর দেন এবং তিনি বলেন, এমন কে আছে যে চাইতে পছন্দ করে এবং আমি তার প্রার্থনার উত্তর দেব। তাই আমাদের প্রথম কাজ হচ্ছে ফিলিস্তিনের মুসলিম ভাই বোনদের জন্য অন্তত একজন মুসলিম হিসাবে আমরা দুআ করতে পারি।

২. এরপর, যা করা উচিত, ফিলিস্তিনিদের উপর ইসরায়েলিরা যে নৃশংসতা করছে, মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে, আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করছে, সেটা আপনাকে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে প্রচার করা উচিত। সেটা সোশ্যাল মিডিয়াতে - তা ফেসবুকে হোক, ইনস্টাগ্রামে, টুইটারে (বর্তমানে X) বা হোয়াটসঅ্যাপেই হোক।

 ৩. নিরীহ ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলিদের নৃশংসতা সম্পর্কে সাহিত্যের মাধ্যেমে বিশ্বকে সচেতন করা উচিত।  আমাদের সাহিত্য সর্বত্র ছড়িয়ে দেওয়া উচিত। হোক তা পুস্তিকা বা  বই অথবা ইবুক। যাতে বিশ্ব ফিলিস্তিনে কী ঘটছে সে সম্পর্কে সচেতন হয়।

৪. আমাদের প্রচার করা উচিত বিলবোর্ডে বা পোষ্টারের মাধ্যমে। তা হতে পারে বিল্ডিং, বাড়ী বা হোল্ডিং, অথবা বিভিন্ন স্থানের বাসে, যাতে আপনি আপনার শহরে, আপনার দেশে, ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে ফিলিস্তিনি ভাই-বোনের উপর সংঘটিত নৃশংসতা সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করতে পারেন।

৫. মুসলিমদের দ্বারা সারা বিশ্বে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ হওয়া উচিত, তবে এই বিক্ষোভগুলি যাতে শান্তিপূর্ণ হয় তা লক্ষ্য রাখুন। আর আপনি যদি একটি অমুসলিম দেশে বাস করেন তবে আপনি সে দেশের আইন মেনে চলুন। কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিন, প্রতিবাদ করুন। সেখানে ইসরায়েলের হাইকমিশনে বা দূতাবাসে স্মারকলিপি দিন, যদি সেদেশে তা থাকে।

৬. সমগ্র বিশ্ব জুড়ে মুসলিমদের সকল ইসরায়েলি পণ্য বর্জন করা উচিত, সমস্ত ইসরায়েলি পণ্য গ্রহণ করা বর্জন করা দরকার। নিশ্চিতভাবে বিশ্বের জনসংখ্যার ২৫% আমরা মুসলিম যদি ১০০% ইসরায়েলি পণ্য বর্জন করি, তবে এটি ইসরায়েলীদের জন্য অবশ্যই একটি অনুস্মারক হবে এবং এতে তাদের একটি ভাল শিক্ষা হবে।

৭. আমাদের আর্থিকভাবে ফিলিস্তিনিদের জন্য অবদান রাখা উচিত। আমরা যা করতে পারি, যেমনটি আমি আমার অনেক আলোচনায় বলেছি, আপনি যখন দান করবেন, তখন দেখুন যেটুকু যাকাত ফরজ তার অতিরিক্তও আপনি যাতে দিতে পারেন। যাকাত যেটা দিতে হবে সেটা দিন। এরপর আপনি আপনার আয়ের শতকরা একটি ভাগ দান করুন। আপনার মাসিক আয় থেকে সেটা ১০%, ২০%, ৩০%, ৪০%, ৫০% আপনি যতটা বেশি করবেন, তা দানের জন্য উত্তম। আপনার মাসিক আয় থেকে আপনি যে দাতব্য সংস্থান করেন তাতে লক্ষ্য রাখুন যে আপনি ফিলিস্তিনের জন্য, ফিলিস্তিনের মুসলিম ভাই-বোনদের জন্য দিচ্ছেন। তা হয়তো হাসপাতাল নির্মাণের জন্য, স্কুল নির্মাণের জন্য, হয়তো তাদের ঘর নির্মাণের জন্য, হয়তো খাবারের জন্য। এভাবে একটি অংশ বরাদ্দ করুন। আমাদের দেখা উচিত যে আমরা যখন দান করি সর্বদা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা এর পরিমাণের দিকে তাকান না, তিনি দেখেন যা আল্লাহ আপনাকে দিয়েছেন তার থেকে আপনি কত শতাংশ দান করছেন। এবং আমি এর আগেও এটা বলেছিলাম যে, একজন ব্যক্তি যিনি মাসে ১,০০০ ডলার উপার্জন করেন যদি তিনি ১০০ ডলার দান করেন তবে তিনি একজন বিলিয়ন ডলার উপার্জনকারী ব্যক্তির চেয়ে বেশি সাওয়াব পাবেন যিনি এক মিলিয়ন ডলার দান করেন। কারণ এক বিলিয়ন ডলার থেকে ১ মিলিয়ন ডলার ১%, যেখানে ১,০০০ ডলার থেকে  ১০০ ডলার হল ১০%। তাই যে ব্যক্তি মাত্র ১,০০০ ডলার উপার্জন করে এবং ১০০ ডলার দান করে, সে একজন বিলিয়ন ডলার উপার্জনকারীর এক মিলিয়ন ডলার দান করার তুলনায় ১০০ গুণ বেশি সাওয়াব ও বিনিময় পাবে। মূলত আল্লাহ আপনার কাছে কত শতাংশ বাকী আছে তা দেখবেন, যে পরিমাণে আপনি দান করেননি। তাই আসুন আমরা অঙ্গীকার করি যে, আমরা আমাদের আয়ের শতকরা একটি ভাগ আল্লাহর পথে দান করি এবং এর থেকে আমরা ফিলিস্তিনিদের জন্য একটি অংশ বরাদ্দ করি।

উপরোক্ত সাতটি পয়েন্ট যা আমি উল্লেখ করেছি প্রত্যেক মুসলিম করতে পারে। প্রত্যেক সাধারণ মুসলিম করতে পারে ফিলিস্তিনের মুসলিম ভাই বোনদের জন্য। আমরা যা করতে পারি অন্তত করা উচিত। বাকি পয়েন্টগুলি কেউ কেউ করতে পারে। অল্প কিছু  মুষ্টিমেয় লোক করতে পারে, আল্লাহ যাদেরকে যে রকম ক্ষমতা দিয়েছেন তার উপর নির্ভর করে।

৮. মূলধারার মিডিয়া, প্রভাবশালী বা নিজস্ব মূলধারার মিডিয়াতে যাদের যোগাযোগ আছে, তাদের লক্ষ্য করা উচিত যে তারা যেন মূলধারার মিডিয়াতে ফিলিস্তিনিদের উপর ইসরায়েলিদের নৃশংসতার কথা জোরালোভাবে প্রচার করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, পিস টিভির উপর আমাদের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে এবং আলহামদুলিল্লাহ আপনি হয়তো জানেন যে পিস টিভির নাগালে রয়েছে ১৫০ থেকে ২০০ মিলিয়ন দর্শক । এই মুহূর্তে আমি নিশ্চিত, সারা বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ এর কার্যক্রম ফেসবুকে ও ইউটিউবে দেখছে। আরও কয়েক মিলিয়ন সোশ্যাল মিডিয়াতে দেখছে। তাই আমাদের লক্ষ্য করা উচিত যে আল্লাহ যা কিছু করার ক্ষমতা দিয়েছেন তার মাধ্যমে আপনি  মূলধারার মিডিয়াতে এর প্রচারনাতে অংশ নিন।

৯. আমাদের যাদের বিশেষ সংস্থা আছে, যারা আইন বিশেষজ্ঞ তারা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে আইনি মামলা করতে পারি।

১০. ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কূটনৈতিক প্রতিবাদ করা উচিত। মুসলিমরা কূটনৈতিক স্তরে কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবাদ জানাতে পারে। কোন দেশে তাদের দূতাবাস বা কনস্যুলেট থাকলে সেখানে ফিলিস্তিনিদের উপর ইসরায়েলি সরকারের নৃশংসতার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদূতকে চিঠি দিয়ে প্রতিবাদ জানানো যায়।

১১. যদি আমরা মুসলিমরা একত্রিত হয়ে ইসরায়েলের সাথে বাণিজ্য বয়কট করি, সম্পূর্ণ বাণিজ্য বর্জন করি, বিশ্বের সমস্ত মুসলিম এক সাথে যদি এটা করি - শুধুমাত্র পৃথকভাবে পণ্য বয়কট করা নয়, সমস্ত মুসলিম দেশ সম্মিলিত ভাবে যদি করি; আজ বিশ্বে ৫৭টি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ রয়েছে, আমরা যদি বাণিজ্য বয়কট করতে পারি যাতে কোনোভাবেই তাদের কোনো পণ্যের লেনদেন বা ইসরায়েলের সাথে যে কোন ধরনের কূটনৈতিক সম্পর্ক করা হবে না, তাহলে এটি একটি বড় কাজ হবে।

১২. ইসরায়েলের সাথে আমাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক কঠোর করা উচিত, এবং আলহামদুলিল্লাহ, বিশ্বের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ, তাদের অনেকে ইতিমধ্যে ইসরায়েলের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। দুর্ভাগ্যবশত, কিছু মুসলিম দেশ আছে যারা সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশ, এখনও কূটনৈতিক সম্পর্ক অব্যাহত রেখেছে বা শুরু করেছে। কিভাবে আমরা নিরপরাধ ফিলিস্তিনিদের হত্যাকারীদের সাথে হাত মেলাতে পারি এবং নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করা ইসলামে শিরকের পরে দ্বিতীয় প্রধান পাপ। দ্বিতীয় প্রধান পাপ হল নিরীহ মানুষকে হত্যা করা, এবং বিশেষ করে যদি এটি একজন মুসলিমের সাথে হয়। প্রিয় নবী (সা.) এর বিভিন্ন হাদিসে বলেছেন যে, কাবার চেয়েও একজন মুমিনের জীবন পবিত্র, আর কল্পনা করুন শত শত ফিলিস্তিনি মুসলিমকে হত্যা করা হচ্ছে, আর আমরা কি করে শত্রুদের সাথে হাত মেলাতে পারি, তারা শুধু মুসলিম নয় তারা ফিলিস্তিনি মুসলিম যারা মুসলিম উম্মাহর পক্ষ থেকে একটি ফরযে কেফায়া দায়িত্ব পালন করছে। ফিলিস্তিনের মুসলিমদের হত্যাকারীদের সাথে আমরা কিভাবে বন্ধুত্ব করতে পারি? তাই ইসরায়েলের সাথে আমাদের সকল কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করা উচিত এবং আমি বিশ্বের ৫৭টি সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশের সকলকে অনুরোধ করব, এমন একটি আইন পাস করুন যাতে যে কেউ বাস্তবে বা সোশ্যাল মিডিয়াতে ইসরায়েলকে সমর্থন করে,  ১০ বছর বা তা না হলে অন্তত ৫ বছর তাকে জেলে রাখা উচিত, তাদের যাতে কারাদণ্ড দেওয়া হয় সেটাকে আইনে পরিণত করুন। আমি জানি অনেকেই ভয় পাচ্ছেন, যে ইসরায়েল পরাশক্তি দ্বারা সমর্থিত, কিন্তু আমরা বুঝতে ব্যর্থ হই যে আমাদের সাথে আল্লাহ আছেন মহান আল্লাহ তিনি আমাদের সমর্থন করেন, এবং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা সর্বদা মুমিনদের সাথে থাকেন। দুর্ভাগ্যবশত, রাসূল (সঃ) এর হাদিস অনুসারে, এমন একটি সময় আসবে যখন মুসলিমরা বিপুল সংখ্যক হবে কিন্তু শক্তিহীনের মতো থাকবে, তারা শক্তিহীন থাকবে, কিন্তু তাদের সংখ্যা অনেক বেশি হবে।

১৩. বিশ্বের সমস্ত মুসলিমকে আমাদের একত্রিত করা উচিত। বিশ্বের সমস্ত মুসলিম দেশকে আমাদের একত্রিত করা উচিত। যেমন আল্লাহ মহিমান্বিত কোরআনে সূরা আল ইমরান, ১০৩ নং আয়াতে বলেছেন, আল্লাহর রজ্জুকে সবাই সম্মিলিতভাবে দৃঢ় ও শক্তভাবে ধারণ কর।  এটাই মহিমান্বিত কুরআন ও হাদিস আমাদেরকে বলছে যে বিভক্ত হবে না। তাই আমাদের মুসলিমদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া উচিত। মুসলিমদের জন্য এক নম্বর একত্রিত হওয়ার ফ্যাক্টর হল মহিমান্বিত কুরআন। আজকের পরিস্থিতিতে আমাদের কাছে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট - বিশ্বের সকল মুসলিমকে একত্রিত করা। আপনি যে চিন্তাধারারই হোন না কেন, আপনি যে মাজহাবের হোন না কেন, আপনি যে দেশেরই হোন না কেন, ফিলিস্তিনিদের জন্য এবং  মাসজিদুল আকসার জন্য ঐক্যবদ্ধ হওয়া উচিত। বিশ্বের প্রতিটি মুসলিমের কাছে মসজিদুলআকসা গুরুত্বপূর্ণ। তারা সৌদি আরব বা মালয়েশিয়া বা ভারত বা পাকিস্তান বা তুরস্ক যে কোনো স্থানে বসবাস করুক না কেন, প্রত্যেকের মুসলিমের কাছে আল-আকসা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ফিলিস্তিনি মানুষদের নির্দয়ভাবে হত্যা করা হয় - যেখানে এই যুদ্ধে নিরীহ ফিলিস্তিনিদের হত্যা করা হচ্ছে, বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে, বেসামরিক ভবনগুলোকে জেট বিমান বোমা দিয়ে লক্ষ্যবস্তু করে ধ্বংস করা হচ্ছে, সেখানে বিশ্ব কী করছে?  হ্যাঁ কেউ কিছু কান্নাকাটি করছে, কেউ কিছু আপত্তি করছে। কিন্তু আমি মনে করি আরো অনেক কিছু হওয়া উচিত। এবং আলহামদুলিল্লাহ আপনি দেখতে পাচ্ছেন যে অনেক দেশ ফিলিস্তিনিদেরকে সমর্থন করছে কিন্তু এসব কেবল তখনই কার্যকর হব যদি আমরা একত্রিত হই, যদি সমস্ত মুসলিম দেশ একত্রিত হয় এবং আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে ফিলিস্তিনে আমাদের নিরপরাধ ভাই বোনদের জন্য দাঁড়াই।

আমরা তাদের জন্য দোয়া করি, ইনশাআল্লাহ তারা আরো কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে।  আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তালায়া শুধু আমাদের পরীক্ষা করছেন। তাঁর এজন্য আপনার এবং আমার সাহায্যের প্রয়োজন নেই, তাদের বিরুদ্ধে তিনি একাই যথেষ্ঠ এবং আল্লাহ কুরআনে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে তিনি জালিমকে অবশ্যই শিক্ষা দেবেন । আল্লাহ কুরআনে আরও বলেছেন যে তিনি তাদেরকে এদিক ওদিক যাওয়ার জন্য রশিতে ঢিল দেন, তিনি কেবল তাদের সময় দিচ্ছেন। আল্লাহর কাছে আপনার এবং আমার প্রয়োজন নেই। 

প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সব মুসলিম একটি দেহের মতো, একটি অঙ্গের কিছু হলে পুরো শরীর জ্বরে আক্রান্ত হয়। তাই আমি বিশ্বব্যাপী আমাদের মুসলিম ভাই বোনদের প্রতি অনুরোধ করছি, আমি যে কয়েকটি পরামর্শ দিয়েছি তা বাস্তবায়ন করুন এবং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কাছে প্রার্থনা করুন, আর আল্লাহর কাছে দোয়া করি তিনি যেন আমাদের ফিলিস্তিনি মুসলিমদের নিরাপদে রাখেন, তিনি যেন তাদের সাহায্য করেন, তিনি যেন তাদের বিজয় দান করেন, তিনি যেন ফিলিস্তিনের শহীদদের জান্নাতুল ফেরদৌসের সর্বোচ্চ মর্যাদা দান করেন এবং আমরা প্রত্যেকে অন্তরের অন্তস্থল থেকে তাদেরকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। প্রত্যেক মুসলিম ও মুসলিম উম্মাহর পক্ষ থেকে ফিলিস্তিনিদের ধন্যবাদ জানাই, মুসলিমদের তৃতীয় পবিত্রতম স্থান রক্ষা করার জন্য। আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি। আল্লাহ তা'আলা সমস্ত ফিলিস্তিনিদের এর প্রতিদান দেবেন ইনশাআল্লাহ।  

সূত্র : ইউটিউব - ড. জাকির নায়েক

 

সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


ইসলামী বিষয়াবলী বিভাগের সর্বাধিক পঠিত


অনেক মুখমন্ডল সেদিন হবে সজীব, তাদের কর্মের কারণে সন্তুষ্ট, তারা থাকবে...

ইসলামী বিষয়াবলী | 2018-04-23 23:36:39

রাসূল স. বলেছেনঃ বেশি বেশি কোর’আন তেলা’ওয়াত কর, কেননা হাশরের দিন এ কো...

ইসলামী বিষয়াবলী | 2018-08-15 23:24:11

হযরত মুয়াজ (রা.) রাসূল (সা.) এর কাছ থেকে কিয়ামতের দিন প্রথম তিনজন জাহা...

ইসলামী বিষয়াবলী | 2018-02-22 00:11:13

মুসলিম উম্মাহর সদস্য হিসেবে আপনার উচিত সর্বদা জ্ঞান অর্জনে লিপ্ত থাকা।...

ইসলামী বিষয়াবলী | 2018-06-29 08:34:21

"হে আল্লাহ্, আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই দুশ্চিন্তা, দুঃখ, অক্ষমতা, অলসত...

ইসলামী বিষয়াবলী | 2018-05-06 13:46:07

হজ্জ্ব ইসলামের একটি মৌলিক ইবাদত। হিজরী ক্যালেন্ডার অনুসারে প্রতিবছর জি...

ইসলামী বিষয়াবলী | 2018-08-16 23:47:11

হযরত আবু যর (রা.) থেকে বর্ণিত, সহীহ বুখারী ও মুসলিম উভয় হাদীসগ্রন্থেই...

ইসলামী বিষয়াবলী | 2018-06-22 23:12:36

মুসলিম হওয়া যে জন্মগত কোনো ব্যাপার না, এই কথাটা চোখে আঙুল দিয়ে প্রমাণ...

ইসলামী বিষয়াবলী | 2019-02-19 23:09:08