গাজাতে মুসলিম দেশগুলোর সামরিক হস্তক্ষেপ শরঈ কর্তব্য: ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অফ মুসলিম স্কলারসের ফতোয়া


ইসলামী বার্তা ডেস্ক
Published: 2023-11-02 02:50:13 BdST | Updated: 2024-09-28 09:17:59 BdST

প্রভাবশালী ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অফ মুসলিম স্কলারস একটি ফতোয়া জারি করেছে যে, গাজাকে গণহত্যা এবং ব্যাপক ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে আরব সরকার ও সেনাবাহিনীর জরুরীভাবে হস্তক্ষেপ করা ইসলামি শরীয়াহ অনুযায়ী কর্তব্য।

আলেমদের সংগঠনটি ফিলিস্তিনের সীমান্তবর্তী দেশগুলিকে চিহ্নিত করেছে - মিশর, জর্ডান, সিরিয়া এবং লেবানন - এবং বলেছে যে সামরিক হস্তক্ষেপ তাদের উপর একটি শরঈ বাধ্যবাধকতা।

এতে আরও বলা হয়েছে যে, গাজা ও ফিলিস্তিনকে নির্মূল ও ধ্বংস করার জন্য ছেড়ে দেওয়া আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সাঃ) এর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা এবং মহান আল্লাহর কাছে এটি অন্যতম বড় পাপ।

তারা আরও বলেন:  এটা অকল্পনীয় যে সরকারী সেনাবাহিনী, যার সংখ্যা চার মিলিয়ন, এবং যার জন্য বছরে ১৭০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করা হয়, তারা তাদের ব্যারাকে সীমাবদ্ধ থাকবে, তাদের অস্ত্রে মরিচা পড়ে যাবে, তাদের সিস্টেমগুলি ভেঙে পড়বে, জাতি ধ্বংস হবে  এবং বিশ্বের পতন হবে।

ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অফ মুসলিম স্কলারস শেখ ইউসুফ আল কারাযাভী দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং এর সদর দপ্তর কাতারে, তবে এটি সারা বিশ্বের নেতৃস্থানীয় আলেমদের নিয়ে গঠিত।

 

এখানে ফতোয়াটির একটি অনুবাদ রয়েছে:

 

গাজায় ইহুদিবাদী আগ্রাসনের প্রতি ইসলামী সরকারের কর্তব্য সংক্রান্ত ফতোয়া

 

পরম করুণাময়, দয়াময় আল্লাহর নামে।

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি মুজাহিদদের সমর্থক, নিপীড়িতদের সাহায্যকারী, দুস্থদের প্রার্থনার উত্তরদাতা, নারী ও শিশু, এতিম ও অভাবীদের প্রতি করুণাময়, দখলদার অত্যাচারী শাসকদের পরাজিতকারী, যিনি নাড়া দেন আগ্রাসী কাফেরদের ভিত্তি, মুনাফিক ও নিরুৎসাহিতদের আশা নিরাশকারী এবং বিবেকবানদের বিবেককে পুনরুজ্জীবিতকারী:

 

নিম্নলিখিত অনুসারে:

আন্তর্জাতিক মুসলিম স্কলারদের ইজতিহাদ ও ফতোয়া কমিটি গাজার জনগণের বিরুদ্ধে অপরাধী জায়নবাদী এই নৃশংস আগ্রাসনকে ফলো আপ করার জন্য একটি স্থায়ী ও চলমান অধিবেশনে বসেছে। সত্য ঘোষণা করা এবং গাজায় আমাদের জনগণের সাথে যা ঘটছে তার প্রতি উম্মাহর কর্তব্য ব্যাখ্যা করার জন্য এবং উম্মাহর প্রধান সমস্যা, ফিলিস্তিন ইস্যুতে আলেমদের সেই আইনি দায়িত্বের ভিত্তিতে এটি নিম্নরূপ একটি ফতোয়া জারি করেছে:

১. গাজাকে গণহত্যা ও সামগ্রিক ধ্বংসযজ্ঞ থেকে বাঁচানোর জন্য শাসক সরকার এবং সরকারী সেনাবাহিনীর জন্য জরুরীভাবে হস্তক্ষেপ করা শরীয়াগতভাবে আবশ্যক।  ফিলিস্তিনকে ধর্মীয়, রাজনৈতিক, আইনগত এবং নৈতিকভাবে পূর্ণ সমর্থনের প্রতিশ্রুতি ও দায়িত্বের অংশ হিসবে এবং  আন্তর্জাতিক চুক্তি ও এ অঞ্চলে উম্মাহর কৌশলগত অধিকার এবং জনগণের উপর তাদের বৈধ ম্যান্ডেট অনুসারে এটা অবশ্যকর্তব্য।

২. সামরিক হস্তক্ষেপ এবং সামরিক সরঞ্জাম এবং দক্ষতা সরবরাহের দায়িত্ব নিম্নলিখিত অনুসারে শরীয়াগতভাবে বাধ্যতামূলক:

ক) প্রথমত, ফিলিস্তিনি অভ্যন্তরীণ: ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (PA) স্তরে এবং পশ্চিম তীর এবং ১৯৪৮ সালের অঞ্চলে সমস্ত প্রতিরোধ দল।

খ) পার্শ্ববর্তী দেশগুলিতে, মিশর থেকে শুরু করে, তারপরে জর্ডান, সিরিয়া এবং লেবানন।

গ) সমস্ত আরব এবং ইসলামিক দেশের উপর, ফিলিস্তিনের অভ্যন্তরীণ এবং চারপাশের চারটি রাষ্ট্রের সাথে সমন্বয় করে একটি জরুরি জোটের মাধ্যমে যা কয়েক দশক ধরে চলে আসা দ্বিধা ও দুর্বলতার অবস্থাকে কাটিয়ে তুলতে পারে, যার ফলে দখলদার তার সীমাহীন অপরাধ চালিয়ে যাচ্ছে - যা বর্তমানে একটি সাধারণ ও ব্যাপক গণহত্যার এবং এ অঞ্চল ও তার আশেপাশে একটি ব্যাপক পতনের নির্দেশক হয়ে উঠেছে।

৩. তাদের দায়িত্ব পালনের জন্য জরুরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা আলেম, অভিজাতশ্রেনি এবং সকল প্রকার সংস্থার আইনগত দায়িত্ব -  শাসক সরকার, সরকারী সেনাবাহিনী, আইনসভা, সংসদীয় এবং বিচার বিভাগীয় রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলির উপর চাপ প্রয়োগ, জরুরীভাবে হস্তক্ষেপ করা এবং দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া এবং তাদের ধর্মীয়, ঐতিহাসিক, সাংবিধানিক এবং কৌশলগত দায়িত্ব পালন করা।

৪. সবচেয়ে বিপজ্জনক জিনিস যা মানুষকে পীড়িত করে তা হল তাদের অধিকার অর্জন এবং তাদের বিরুদ্ধে অবিচার প্রতিহত করার ক্ষেত্রে হতাশার অবস্থা, যা সাধারণ অস্থিরতার সূচনা করতে পারে যার মাত্রা এবং ফলাফল শুধুমাত্র আল্লাহই জানেন। বিশেষ করে সাম্প্রতিক জায়নবাদী আগ্রাসনের মুখে যাতে রয়েছে কলঙ্কজনক ও উস্কানিমূলক পশ্চিমা সমর্থন, এবং ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ ও লক্ষ লক্ষ লোক যারা এটিকে সমর্থন করে তাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা  এবং প্রতিটি সংগঠনকে উপড়ে ফেলা, প্রতিটি কণ্ঠকে বন্দী করা ও প্রতিটি আত্মাকে নীরব করা - সাধারণ নির্মূল, ব্যাপক ধ্বংস এবং ভূমিকে অন্য কিছু দিয়ে প্রতিস্থাপনের উদ্দেশ্যে; সেইসাথে অসারতা, বিলম্ব, মিথ্যা, এবং বিশ্বাসঘাতকতা - কয়েক দশক ধরে, যাতে কোন লাভ হয়নি, আরও ধ্বংস, বাস্তুচ্যুতি, বসতি এবং ক্রমাগত আগ্রাসন ও দুর্নীতি ছাড়া।

৫. এ ব্যাপারে রয়েছে ব্যাপক পশ্চিমা সমর্থন - সামরিক, আর্থিক, মিডিয়া, কূটনৈতিক এবং কৌশলগত। এটা আরব ও ইসলামিক দেশগুলোর জন্য অপরিহার্য যে তারা সামরিক, অর্থনৈতিক, মিডিয়া, কূটনৈতিক এবং কৌশলগতভাবে এর জবাব দেবে, যাতে আন্তর্জাতিক ভারসাম্য অর্জন করা যায় এবং অত্যাচার প্রতিরোধ করা যায়, যে অত্যাচার অশান্তি তৈরি করে ধবংস ডেকে আনছে। এটা অকল্পনীয় যে সরকারী সেনাবাহিনী, যার সংখ্যা চার মিলিয়ন, এবং যার জন্য বছরে ১৭০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করা হয়, তারা তাদের ব্যারাকে সীমাবদ্ধ থাকবে, তাদের অস্ত্রে মরিচা পড়ে যাবে, তাদের সিস্টেমগুলি ভেঙে পড়বে, জাতি ধ্বংস হবে  এবং বিশ্বের পতন হবে।

৬. ফিলিস্তিনে জিহাদ এবং সরঞ্জাম সরবরাহ একটি বৈধ দায়িত্ব এবং একটি ইসলামী ও মানবিক কর্তব্য। আগ্রাসন সম্পর্কে নীরব থাকা এবং শাসক সরকার ও সরকারী সেনাবাহিনীর গতিবিধির মাধ্যমে তা প্রতিহত না করা ইসলামী আইন দ্বারা নিষিদ্ধ। নির্মূল ও ধ্বংসের জন্য গাজা, আল-আকসা, জেরুজালেম এবং ফিলিস্তিন ত্যাগ করা আল্লাহ, তাঁর রসূল এবং মুমিনদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা এবং সবচেয়ে বড় গুনাহ এবং সবচেয়ে বড় পাপের অন্তর্ভুক্ত। 

সর্বশক্তিমান আল্লাহর নামে।

ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অফ মুসলিম স্কলারের ইজতিহাদ ও ফতোয়া কমিটি দ্বার জারিকৃত।

 

সূত্র: ফাইভ পিলার্স ইউকে

অনুবাদ করেছেন এস আব্দুল্লাহ।

 

সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


ইসলামী বিষয়াবলী বিভাগের সর্বাধিক পঠিত


অনেক মুখমন্ডল সেদিন হবে সজীব, তাদের কর্মের কারণে সন্তুষ্ট, তারা থাকবে...

ইসলামী বিষয়াবলী | 2018-04-23 23:36:39

রাসূল স. বলেছেনঃ বেশি বেশি কোর’আন তেলা’ওয়াত কর, কেননা হাশরের দিন এ কো...

ইসলামী বিষয়াবলী | 2018-08-15 23:24:11

হযরত মুয়াজ (রা.) রাসূল (সা.) এর কাছ থেকে কিয়ামতের দিন প্রথম তিনজন জাহা...

ইসলামী বিষয়াবলী | 2018-02-22 00:11:13

মুসলিম উম্মাহর সদস্য হিসেবে আপনার উচিত সর্বদা জ্ঞান অর্জনে লিপ্ত থাকা।...

ইসলামী বিষয়াবলী | 2018-06-29 08:34:21

"হে আল্লাহ্, আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই দুশ্চিন্তা, দুঃখ, অক্ষমতা, অলসত...

ইসলামী বিষয়াবলী | 2018-05-06 13:46:07

হজ্জ্ব ইসলামের একটি মৌলিক ইবাদত। হিজরী ক্যালেন্ডার অনুসারে প্রতিবছর জি...

ইসলামী বিষয়াবলী | 2018-08-16 23:47:11

হযরত আবু যর (রা.) থেকে বর্ণিত, সহীহ বুখারী ও মুসলিম উভয় হাদীসগ্রন্থেই...

ইসলামী বিষয়াবলী | 2018-06-22 23:12:36

মুসলিম হওয়া যে জন্মগত কোনো ব্যাপার না, এই কথাটা চোখে আঙুল দিয়ে প্রমাণ...

ইসলামী বিষয়াবলী | 2019-02-19 23:09:08