বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দুইজন ইসলামি স্কলারের বক্তব্য
তারেক হাসান
Published: 2024-08-22 19:30:46 BdST | Updated: 2024-10-16 06:32:36 BdST
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত ইসলামি স্কলার ড. ইয়াসির কাযি এবং ড. ওমর সুলাইমান মুসলিম বিশ্বে ব্যাপকভাবে পরিচিত। সম্প্রতি তাঁরা বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান নিয়ে অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য দিয়েছেন। তাঁদের বক্তব্যের সারসংক্ষেপ নিম্নে তুলে ধরা হল:
ড. ইয়াসির কাযির বক্তব্য:
ড. ইয়াসির কাযি একজন আমেরিকান ইসলামি স্কলার। তিনি টেক্সাসের প্লানোতে ইস্ট প্লানো ইসলামিক সেন্টারের একজন ফেলো এবং উত্তর আমেরিকান ফিকহ কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
ড. ইয়াসির কাযি তাঁর বক্তব্যে তিনি বলেন, আমরা সকলেই অবগত আছি যে বাংলাদেশ থেকে আমরা একটি ভাল সংবাদ পেয়েছি। আমাদের হৃদয়ের প্রার্থনা এ দেশের মানুষের জন্য- আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তাদেরকে নেয়ামত ও বরকত দান করুন এবং এই বিপ্লবের ক্রান্তিকালীন সময়কে তাদের জন্য সহজ করুন।
প্রায় ৩৩ মিনিটের বক্তব্যে শায়খ ড. কাযি বাংলাদেশে ইসলামি ইতিহাসের কিছু আকর্ষণীয় উপাখ্যান এবং ঐতিহাসিক বিষয় সংক্ষেপে বর্ণনা করেন। ইসলাম কিভাবে বাংলাদেশে আসে এবং প্রধানত হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মের জনগোষ্ঠি ইসলামে প্রবেশ করে। বখতিয়ার খিলজির বাংলা বিজয়, শাহ জালাল ইয়েমেনির অবদান থেকে শুরু করে দিল্লি সালতানাতের শাসন, ঢাকার ইসলামী স্থাপত্য, মুঘল শাসনামলে ঢাকা যেভাবে একটি প্রধান শহর হিসেবে আবির্ভূত হয়, মুঘল সাম্রাজ্যের পতন, ইউরোপীয় উপনিবেশ, ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির এই অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তার, ১৯৫৭ সালে পলাশীর কুখ্যাত যুদ্ধ, বাংলার উপর ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রণের সূচনা, এই অঞ্চলকে ধ্বংস করা, অর্থনৈতিক পতন, দুর্ভিক্ষ এবং দুর্ভোগ, ব্রিটিশদের ব্রিটেনকে সমৃদ্ধ করার জন্য বাংলার সম্পদ শোষণ, এই অঞ্চলটিকে দরিদ্র করে রাখা, প্রায় ২০০ বছরের ব্রিটিশ শাসন, ভারতীয় উপমহাদেশের ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা লাভ, ভারত ও পাকিস্তানের বিভক্তি, পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ, অপরিসীম দুর্ভোগ ও আত্মত্যাগের ফলে একটি স্বাধীন বাংলাদেশ সৃষ্টি ইত্যাদি বিষয় সহ তিনি সংক্ষেপে বাংলার সাড়ে তিন হাজার বছরের ইতিহাস তুলে ধরে বলেন আজ, বাংলাদেশ একটি প্রাণবন্ত এবং স্থিতিশীল দেশ, এদেশের রয়েছে একটি সমৃদ্ধ ইতিহাস, যে ইতিহাস ইসলাম, উপনিবেশ এবং স্বাধীনতার মাধ্যমে তার যাত্রাকে তুলে ধরে। এর অতীত থেকে শিক্ষা তার বর্তমান এবং ভবিষ্যতকে গঠন করে চলেছে। এটি মুসলিম বিশ্বের একটি অনন্য এবং উল্লেখযোগ্য অঞ্চলে পরিণত হয়েছে।
ড. ওমর সুলাইমানের বক্তব্য:
ড. ওমর সুলাইমান অপর একজন আমেরিকান ইসলামিক স্কলার এবং মানবাধিকার কর্মী। তিনি ইয়াকিন ইনস্টিটিউট ফর ইসলামিক রিসার্চ এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি।
প্রায় ২৬ মিনিটের বক্তব্যে ড. ওমর সুলাইমান বলেন আপনারা আপনাদের এই বিপ্লব এবং এই অর্জন কাউকে চুরি করতে দেবেন না। ডঃ ওমর সুলেমান বাংলাদেশ এবং ফিলিস্তিনের সংগ্রামের মধ্যে সমান্তরাল চিত্র আঁকেন, এবং নিপীড়নের মুখে ঐক্য ও অধ্যবসায়ের গুরুত্ব আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেন। তিনি বলেন আপনাদের বিপ্লব চুরি করতে দেবেন না - দৃঢ় থাকুন, এবং একতাবদ্ধ থাকুন।
তিনি বলেন, প্রিয় ভাই ও বোনেরা, আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বাংলাদেশে আমাদের ভাই বোনদেরকে যে বিজয় দিয়েছেন তার জন্য আনন্দের একটি অপ্রতিরোধ্য বোধ আমরা অনুভব করছি। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বিপ্লবে নিহতদের সবাইকে শহীদ হিসেবে কবুল করুন এবং তিনি যেন এই বিপ্লব অপশক্তিকে নষ্ট করতে না দেন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বাংলাদেশ এবং সারা বিশ্বের মুক্তিযোদ্ধাদের অধ্যবসায় দান করুন এবং তিনি আমাদেরকে যেন এভাবে ফিলিস্তিনে বিজয় উদযাপন করার সুযোগ প্রদান করেন যেভাবে আমরা বাংলাদেশে বিজয় উদযাপন করছি।
আমি আপনাকে সেই মুহূর্তের কথা স্মরন করিয়ে দিতে চাই, যখন মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মক্কায় এসেছিলেন যখন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তাঁকে বিজয় দান করেছিলেন।
বক্তব্যে তিনি রাসূল (সা.) বদর যুদ্ধ থেকে শুরু করে কুরাইশদের বর্বর আচরন, মুসলিমদের বিজয় এবং বিজয়ের পর ক্ষমা ও উদারতাকে স্মরণ করেন। মক্কাবাসীরা শুধু প্রতিশোধ চেয়েছিল; তারা এই পৃথিবীর বাইরে বিজয়ে বিশ্বাস করে না কারণ তারা পুনরুত্থানে বিশ্বাস করে না।
তিনি আরো বলেন, মুসলিমরা এই পৃথিবীতে শুধুমাত্র তাৎক্ষণিক সাফল্যের জন্য নয়, বরং আখিরাতের জন্যও চেষ্টা করে। নবী মুহাম্মদ (সাঃ) মদিনায় এসে একটি আদর্শ রাষ্ট্র গড়ার প্রচেষ্টা করেছিলেন, যা শুধুমাত্র আত্মরক্ষার জন্য নয়, বরং ন্যায় ও সত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ছিল। তারা সবসময় আল্লাহর সাহায্যের উপর নির্ভর করে এবং এই পৃথিবীর বিজয়কে আখিরাতের সাফল্যের জন্য মাধ্যম হিসেবে দেখেছে। তিনি আমাদেরকে মনে করিয়ে দেন যে, প্রকৃত বিজয় হলো আখিরাতে। তাই দুআ করা চালিয়ে যেতে হবে এবং আল্লাহর পথে অবিচল থাকতে হবে।
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: