একাধারে দার্শনিক ও চিকিৎসাবিজ্ঞানীইবনে রুশদ


সূত্র: ইন্টারনেট
Published: 2017-12-01 00:44:18 BdST | Updated: 2024-04-29 06:14:33 BdST

Photo Credit: new-muslims guide

 

ইবনে রুশদ ছিলেন আধুনিক সার্জারির জনক সেই সাথে ছিলেন একজন বড় মাপের আধ্যাত্মিক পুরুষ কাজে কর্মে ছিলেন সৰ্বশক্তিমান আল্লাহর দাস তাঁর বিশ্বাস :

‘I give bandage, Allah will heal the wound- আমি ক্ষতস্থান বেঁধে দেবো, ক্ষত সারাবেন আল্লাহ’

এই বিশ্বাসই তাকে অনেক অনেক ওপরে ওঠার সুযোগ করে দেয় হয়ে ওঠেন আল্লাহর প্রিয় পাত্র তাঁর পুরো নাম ‘আবুল ওয়ালিদ মোহাম্মদ ইবনে আহমেদ ইবনে মোহাম্মদ ইবনে রুশদ’ তিনি পাশ্চাত্যে সমধিক পরিচিত ছিলেন Aveross নামে জন্ম কর্ডোভায় ১১২৮ খৃষ্টাব্দে সেখানে তাঁর বাবা ছিলেন বিচারক। দাদা মালেকী সম্প্রদায়ের ইসলামী আইন বিষয়ে সুপণ্ডিত ছিলেন তিনি ছিলেন কর্ডোভার জামিয়া মসজিদের ইমাম

যুবক ইবনে রুশদ প্রাথমিক পর্যায়ের লেখাপড়া করেন কর্ডোভাতে তিনি জ্ঞান আহরণে ছিলেন পুরোপুরি আত্মনিবেদিত তিনি ব্যাপকভাবে লেখাপড়া করেন দর্শন ও ভেষজ বিষয়ে লেখাপড়া করার সুযোগ পেয়েছেন দুই বিখ্যাত শিক্ষকের কাছে এরা হচ্ছেন: আবু জাফর হারুন এবং ইবনে বাজা তিনি সুযোগ পান কর্ডোভা পাঠাগারে পড়াশোনার এই পাঠাগারে ছিল ৫ লাখ বইয়ের সমাহার এই বিপুল সংগ্রহের অনেক মৌলিক বই তিনি সেখানে পাঠ করেন এই লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করেন আল হাকাম তিনি ছিলেন স্পেনের উমাইয়া বংশীয় বিখ্যাত খলীফাতাঁর আনুষ্ঠানিক শিক্ষা শেষ হলে তাকে ডেকে নেয়া হয় মরক্কোতে আল ইয়াকুব সেখানে তাকে তাঁর চিকিৎসক পদে নিয়োগ দেন তিনি ইবনে তোফায়েলের স্থলাভিষিক্ত হন

আসলে সেখানেই সূচনা ঘটে ইবনে রুশদের বিজয় অভিযান সে সূত্রে তিনি হতে সক্ষম হন সার্জারীর জনকতিনি এ দায়িত্ব অব্যাহত রাখেন খলীফা ইয়াকুব আল মনসুর-এর ব্যক্তিগত চিকিৎসক হিসেবে আল মনসুর ছিলেন খলীফা ইবনে ইয়াকুবের পুত্র তবে অভিযান খুব একটা সহজ ছিল না পরিণত হয়ে ওঠলে ধর্মতত্ত্ব ও দর্শন বিষয়ে তিনি তাঁর মতামত প্রকাশ করতে শুরু করেন তার মতামত প্ৰকাশ করতে গিয়ে তাঁর জীবনে নেমে আসে অভিশাপ তিনি নির্বাসনে গেলেন লুসিয়ানায় শুধু একান্ত বিজ্ঞান বিষয়ক বইগুলো ছাড়া তাঁর বাকি বইগুলো পুড়িয়ে দেয়া হল তিনি নির্বাসনে কাটান চার বছর এরই মধ্যে তাঁর ব্যাপারটি নিয়ে মধ্যস্থতায় নামলেন বেশ ক’জন শীর্ষস্থানীয় পণ্ডিতবর তাদের কালতিতে ইবনে রুশদের ওপর থেকে নির্বাসন আদেশ প্রত্যাহার করে নেন মরক্কোর শাসক ১১৯৮ খৃষ্টাব্দে তাকে ডেকে আনা হলো মরক্কোতে কিন্তু তিনি তার নির্বাসন আঘাতের ধাক্কা পুরোপুরি সামলাতে পারলেন না তাঁর স্বাস্থ্য ভেঙে পড়লো এ বছরেরই শেষ দিকে তিনি ইন্তেকাল করেন

ইবনে রুশদ মানব জাতিকে উপহার দিয়ে গেছেন তার বিখ্যাত গ্ৰন্থ : ‘কিতাব আল কুলিয়াত ফি আল তিব্বি’’ চিকিৎসা শাস্ত্রে এটি একটি মাস্টার ওয়ার্ক এতে রয়েছে চিকিৎসা শাস্ত্রের তিনটি মৌল বিষয় : রোগ বিশ্লেষণ (ডায়োগনেসিস), নিরাময় (কিউরী) এবং প্রতিরোধ (প্রিভেনশন)।।বইটিতে ইবনে সিনার ‘আল-কানুন’ সম্পর্কে সর্বশেষ উল্লেখ রয়েছে এতে ইবনে রুশদের আসল পর্যবেক্ষণের বিষয় বিধৃত আছে ইবনে রুশদ এই বইটি লিখেন ১১৬২ খৃস্টাব্দের আগে

একজন আদর্শ দার্শনিক হিসেবে ইবনে রুশদ বিভিন্ন বিষয়ে স্বতন্ত্র মতবাদ পোষণ করতেন তাঁর চিন্তা-ভাবনা সূত্রে আমরা পেয়েছি আধুনিক দর্শন ও পরীক্ষামূলক বিজ্ঞানের পথ তিনি চেষ্টা করেছেন মানুষের ভাগ্য ও গন্তব্য সম্পর্কে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ উপস্থাপন করে যেতে তার অভিমত হচ্ছে

‘Man is neither in full control of his destiny nor it is fully predetermined for him’ এর সার কথা হচ্ছে মানুষ পুরোপুরি ভাগ্যের নিয়ন্ত্রণাধীন নয় এবং ভাগ্যটা পুরোপুরি আগে থেকে নির্ধারিতও নয়’ ইবনে রুশদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ হচ্ছে ‘তুহাফুত আল তুহাফুতইয়। এটি ইমাম গাজ্জালীর লেখাসমূহের জবাবে দর্শন বিষয়ক বই তাঁর এই বই অনেক মুসলিম পণ্ডিতদের সমালোচনার মুখে পড়ে কিন্তু তা ব্যাপকভাবে ইউরোপীয় চিন্তা-ভাবনায় প্রভাব ফেলে তিনি অ্যারিস্টটলের কাজের ওপর তিনটি সমালোচনা প্ৰকাশ করেছিলেন এর মধ্যে সবচেয়ে ছোট সমালোচনামূলক লেখাটি ছিল ‘জামি’ মাঝারি আকারের বইটি ‘তালখিস’ এবং বিস্তারিত বইটি ছিল ‘তাফসিস’ আসলে ‘তাফসিস’ ছিল তাঁর মূল অবদান এতে আবু রুশদ তাঁর নিজস্ব বিশ্লেষণ তুলে ধরেন এই বিশ্লেষণের – ভিত্তি ছিল কুর’আনের ব্যাখ্যা

‘কিতাব ফি হারাকাত আল ফালাক’ হচ্ছে ইবনে রুশদের জ্যোতির্বিদ্যা বিষয়ক একটি বই এই বইয়ে ভূমন্ডলের গতি বিষয়ে তিনি আলোচনা করেন তাঁর লেখা বই ‘আল মাজেষ্ট’ দুখণ্ডে বিভক্ত এক খণ্ডে বর্ণনা আছে ভূমণ্ডলের অন্য খণ্ডে বর্ণিত হয়েছে ভূমণ্ডলে গতির বিষয়টি ১২৩১ খৃষ্টাব্দে এই বইটি আরবি থেকে হিব্রু ভাষায় অনুবাদ হয় এর অনুবাদক ছিলেন ইয়াকুব আনাতুলি অন্য পরিচয়ে জেকব আনা তুলি ইবনে রুশদ জ্ঞান অর্জন করেন সঙ্গীতের জগতেও তিনি অ্যারিস্টটলের সঙ্গীত বিষয়ক বই De Anima’র সমালোচনা করে বই লিখেন মিশেল দ্যা স্কট নামে জনৈক অনুবাদক এটি লাতিন ভাষায় অনুবাদ করেন

ইবনে আল আব্বার বলেছেন,

ইবনে রুশদ ২০ হাজার পৃষ্ঠার বই লিখে গেছেন এগুলো মূলত দর্শন, চিকিৎসা ও মৌলিক আইন বিষয়ক বই শুধু চিকিৎসা বিষয়ে তিনি লিখেছেন, ২০টির মতো বই ইবনে রুশদের দর্শন বিষয়ক সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বই হচ্ছে : ‘বিদায়াত আল মুস্তাসেদ ওয়া নেহায়েত আল মুকতাসেদ’ মালোকী সম্প্রদায়ের ফিকহ শাস্ত্ৰে একে সর্বোত্তম বই হিসেবে বিবেচনা করা হয় ইবনে রুশদের বইগুলো মূলত অনুবাদ হয়েছে ইউরোপীয় লাতিন, ইংরেজি, জার্মান, হিব্রু ইত্যাদি ভাষায় তার দর্শন বিষয়ক বইগুলো হিব্রু ভাষায় সংরক্ষিত আছে সামান্য ক’টি বই পাওয়া যায় মূল আরবি পাণ্ডুলিপি আকারে প্রাচ্যের চেয়ে পাশ্চাত্যে ছিল তাঁর বেশি গ্ৰহণযোগ্যতা প্লেটোর রিপাবলিক, গ্যালেন-এর ট্রিটিজ অন ফিভারস, আল ফারাবীর লজিক সম্পর্কে তাঁর সমালোচনামূলক লেখাগুলো হারিয়ে গেছে তাঁর প্রাচ্য বিষয়ক বইয়ের সংখ্যা ৮৭টিইবনে রুশদকে দ্বাদশ শতকের একজন শীর্ষ সারির চিন্তাবিদ ও বিজ্ঞানী হিসেবে বিবেচনা করা হয়




সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


মুসলিম ব্যক্তিত্ব বিভাগের সর্বাধিক পঠিত


(জন্মঃ ৮১০-মৃত্যুঃ ৮৭০ খ্রিস্টাব্দ), আরব রীতি অনুযায়ী বংশধারাসহ পুরো...

মুসলিম ব্যক্তিত্ব | 2017-12-22 11:55:49

ইসলাম আগমনের পূর্ব থেকেই ভারতের সাথে আরবদের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিলো। বা...

মুসলিম ব্যক্তিত্ব | 2018-04-08 09:16:03

ইবনে রুশদ ছিলেন আধুনিক সার্জারির জনক। সেই সাথে ছিলেন একজন বড় মাপের আধ...

মুসলিম ব্যক্তিত্ব | 2017-12-01 00:44:18

সাহাবী  হযরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.) বলতেন- আর আমি (রাতে) ঘুমাই এবং নাম...

মুসলিম ব্যক্তিত্ব | 2020-02-06 18:38:47

ভাবুন তো... আপনার খুব কাছের কোনো বন্ধু আপনার বাসার ঠিক পাশ দিয়ে চলে গে...

মুসলিম ব্যক্তিত্ব | 2019-02-15 23:46:59

সংখ্যার জগতে ‘শূণ্য’ একটি গুরুত্বপূর্ণ চিহ্ন। গণিতের প্রাথমিক ১-৯ সংখ্...

মুসলিম ব্যক্তিত্ব | 2018-02-13 13:42:39

ইবনে সিনা (৯৮০-১০৩৭ খ্রিস্টাব্দ) যিনি কঠোর জ্ঞান সাধনা ও অধ্যবসায়ের মধ...

মুসলিম ব্যক্তিত্ব | 2017-10-28 14:09:44

অনেকদিন আগে, দামিশকের একজন পিতা তার পরিবার নিয়ে বেড়াতে যেতে বের হয়েছিল...

মুসলিম ব্যক্তিত্ব | 2018-02-01 20:15:53