নির্যাতিত ইমামের জীবনীআহমদ ইবনে তাইমিয়া
Islamweb অবলম্বনে, মুহাম্মদ আল বাহলুল
Published: 2018-02-01 20:15:53 BdST | Updated: 2024-04-29 13:24:34 BdST
Photo Credit: algerie-penser-librement
অনেকদিন আগে, দামিশকের একজন পিতা তার পরিবার নিয়ে বেড়াতে যেতে বের হয়েছিলেন। বেড়াতে যাওয়ার সময় হঠাৎ করে তার ছেলে উধাও হয়ে যায়। অনেক খোঁজ করার পরও ছেলেকে খুঁজে না পেয়ে তিনি তাকে ফেলে রেখে অন্যান্যদের নিয়ে বেড়াতে বের হলেন। সকলে বেড়িয়ে আসার পর ছেলেটিকে পড়ার টেবিলে দেখতে পেলেন। পরিবারের সবাই বেড়াতে না যাওয়ার জন্য তিরস্কার করছিলো। ছেলেটি তখন একটি বইয়ে হাত রেখে বললো, “তোমরা তোমাদের বেড়িয়ে আসা থেকে অতটা লাভবান হতে পারনি, যেভাবে আমি তোমাদের অনুপস্থিতিতে এই বইটি মুখস্ত করার মাধ্যমে হয়েছি।’
ছেলেটি তার চেহারা, সূক্ষ্ম স্মরণশক্তি এবং বুদ্ধিমত্তার জন্য পরিচিত ছিলো। দামিশকের সকলেই তার মেধার প্রশংসা করতো। বয়স বাড়ার সাথে সাথে তার মেধার খ্যাতি আশেপাশের শহরগুলোতেও ছড়িয়ে পরে। তার এই খ্যাতিতে আলেপ্পো হতে একজন পন্ডিত তার সাথে সাক্ষাত করতে দামিশকে আসেন। শহরের লোকজনের কাছে তিনি ছেলেটির সম্পর্কে জিজ্ঞেস করার পর তারা তাকে ছেলেটির বিদ্যালয়ের রাস্তা দেখিয়ে দিল। পন্ডিত ব্যক্তিটি ছেলেটির বিদ্যালয়ে গিয়ে ছেলেটিকে ডাকলেন এবং তাকে তার পাশে বসিয়ে রাসূল (সা.) এর কিছু হাদীস বর্ণনা করলেন। ছেলেটি তার হাতে থাকা স্লেটে রাসূল (সা.) এর হাদীসগুলো লেখে নিলো। পন্ডিতব্যক্তি এরপর তাকে হাদীসগুলো পড়তে বললে ছেলেটি তা পড়ে শুনালো। এরপর পন্ডিত ব্যক্তি তার কাছ থেকে হাদীসগুলো মুখস্ত শুনতে চাইলে ছেলেটি হুবহু তা বর্ণনা করে গেলো্। এরপর পন্ডিত ব্যক্তি তাকে আরো হাদীস বর্ণনা করলেন এবং একইভাবে ছেলেটির কাছে জানতে চাইলেন। ছেলেটি এবারেও তার স্মৃতি হতে হাদীসগুলো হুবহু বর্ণনা করলো। সেই পন্ডিত ব্যক্তি তখন বললেন, “ছেলেটি যদি বেঁচে থাকে, তবে সে অনেক বড় হবে।’
এই ছেলেটিই পরবর্তীকালের বিখ্যাত বিদ্বান ও ধর্মতাত্ত্বিক ইমাম আহমদ ইবনে তাইমিয়া। ৬৬১ হিজরীতে তিনি হাররানে জন্ম গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে তার পরিবার দামিশকে এসে বসবাস শুরু করে।
ইবনে তাইমিয়া ছিলেন একজন জ্ঞানসাধক ব্যক্তিত্ব। তার সমগ্র জীবনই তিনি জ্ঞানসাধনার ভিতর দিয়ে অতিবাহিত করেন। তার সময়ে তিনি ছিলেন অন্যতম শ্রেষ্ঠ পন্ডিত ব্যক্তিত্ব। বিভিন্ন বিষয়ের উপর তিনি অসংখ্য গ্রন্থ রচনা করেছেন। তার রচিত বইয়ের সংখ্যা তিনশতেরও অধিক।
তার অভাব সত্ত্বেও তিনি কখনোই কারো অনুদান গ্রহণ করতেন না। নিজের জন্য কোনো প্রকার অর্থও তিনি সঞ্চয় করে রাখতেননা।
ইবনে তাইমিয়া তার সাহসের জন্যও খ্যাতি অর্জন করেন। আক্কার বিজয় অভিযানে অংশগ্রহণ করে তিনি তার দৃঢ় বিশ্বাস ও সাহসের পরিচয় প্রদান করেছিলেন।
একবার তাতার শাসক কাজান কয়েকজন মুসলমানকে বন্দী করে নিয়ে যায়। ইবনে তাইমিয়া তার কাছে গিয়ে তাকে তার এই কাজের জন্য তিরষ্কার করলেন এবং বন্দীদের ছেড়ে দিতে অনুরোধ করলেন। ইবনে তাইমিয়ার কথামত কাজান বন্দীদের মুক্ত করে দেন।
ইবনে তাইমিয়ার জীবন ছিলো বিভিন্ন পরীক্ষায় পরিপূর্ণ। সারজীবনেই এক পরীক্ষা শেষ হতে না হতেই অপর এক পরীক্ষার সম্মুখীন তিনি হয়েছিলেন।
শেষ জীবনে কিছুলোক ষড়যন্ত্র করে তাকে জেল হাজতে নিক্ষেপ করে। তাকে দামিশকের দুর্গে বন্দী করে রাখা হয়েছিলো। কারাগারেও তার জ্ঞানসাধনা অব্যাহত থাকে। কারাগারে বন্দী থাকা অবস্থায় তিনি বলতেন, ‘যদি আমাকে এই কারাগার ভর্তি করে স্বর্ণমুদ্রা দেওয়া হত, তবুও আমি এতোটা অনুগ্রহবোধ করতামনা, যতটা আমি কারাগারে আটকের মাধ্যমে হয়েছি।’
বন্দী অবস্থাতেই ৭২৮ হিজরীতে ইবনে তাইমিয়া ইন্তেকাল করেন। তার ইন্তেকালের সংবাদে হাজার হাজার লোক তার জানাজায় অংশগ্রহনের জন্য দামিশকে জড়ো হয়। তার জানাজায় জনতার এই ভীড়কে নিয়ন্ত্রণের জন্য সৈন্য নিয়োগ করতে হয়েছিলো।
এই মহান ইমামের প্রতি আল্লাহ তার রহমত বর্ষণ করুন।
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: