নির্বাসন থেকে রাজনৈতিক যাত্রা: তিউনিসিয়ায় ইসলাম ও গণতন্ত্রের জন্য রাশিদ ঘানুচির আপোষহীন লড়াই


ইসলামী বার্তা ডেক্স
Published: 2024-04-21 19:18:19 BdST | Updated: 2024-05-06 00:27:42 BdST

বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ তিউনিসিয়ার সাবেক স্পিকার ও বর্তমান বিরোধীদলীয় নেতা রাশিদ ঘানুচি তিউনিসিয়ার ইসলামী দল আন-নাহদা পার্টির প্রধান। উদারনৈতিক ইসলামী আন্দোলন, সংস্কারের জন্য দল মত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা সহ তাঁর রয়েছে বহু বাস্তবসম্মত দৃষ্টিভঙ্গি যা শিক্ষণীয় হতে পারে সবার জন্য। এই মহান ব্যক্তিত্বের জীবনের কিছু দিক এখানে সংক্ষেপে তুলে ধরা হল।


শৈশব ও শিক্ষাজীবন

রাশিদ ঘানুচি ২২ জুন ১৯৪১ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি দক্ষিণ তিউনিসিয়ার একটি দরিদ্র কৃষক পরিবারে বেড়ে ওঠেন। অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও তিনি ১৯৬২ সালে ইউনিভার্সিটি অফ ইজ জিতুনাতে অধ্যয়ন করেন। পরে ১৯৬৪ সালে কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি বিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেন কিন্তু মিশর থেকে তিউনিসিয়ানদের বিতাড়নের পর তিনি সিরিয়া চলে যান। সেখানে তিনি দামাস্কাস বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন অধ্যয়ন করেন।১৯৬৮ সালে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন।

উদারনৈতিক ইসলামী আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা

১৯৮১ সালের এপ্রিলে তিনি অহিংস ইসলাম এবং রাজনৈতিক বহুত্ববাদের পক্ষ সমর্থন করে ইসলামি আন্দোলন প্রতিষ্ঠা করেন। এর মাধ্যমে তিনি অর্থনৈতিক জীবনকে আরও ন্যায়সঙ্গত ভিত্তিতে পুনর্গঠনের জন্য, একদলীয় রাজনীতির অবসান এবং রাজনৈতিক বহুত্ববাদ ও গণতন্ত্রের স্বীকৃতির আহ্বান জানায়।

কারাবরন ও নির্বাসন

তিনি তিউনিসিয়ার স্বৈরশাসক প্রেসিডেন্ট বেন আলীর শাসনামলে কারাবরণ ও নির্যাতনের সম্মুখীন হন। ১৯৮১ র জুলাইয়ের শেষের দিকে, তাঁকে এবং তার দলের সদস্যদের গ্রেফতার করা হয়, বিচারে তাঁকে এগারো বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয় এবং নির্যাতন করা হয়। জেলে থেকেও সরকারের সমালোচনা এবং জাতিকে দিক নির্দেশনা দিতে থাকে। ধর্মীয় ও ধর্মনিরপেক্ষ সম্প্রদায় উভয়ই তার সমর্থনে সমাবেশ করেছিল। এর ১৯৮৪ সালে মুক্তি পান, কিন্তু ১৯৮৭ সালে তাঁকে আবার যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয়। এরপর ১৯৮৮ সালে মুক্তি পান। তিনি রাজনৈতিক নির্বাসিত হিসাবে যুক্তরাজ্যে চলে আসেন, যেখানে তিনি ২২ বছর বসবাস করেন। তিউনিসিয়ার বিপ্লবে বেন আলীর ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর, তিনি ২০১১ সালে লন্ডনের নির্বাসন থেকে ফিরে আসেন এবং তিউনিসিয়ায় গণতন্ত্রে উত্তরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

নির্বাচনে জয়ী হয়েও পদ গ্রহণ করেননি

১৯৮১ সালে গঠন করা ইসলামী দল আন-নাহদা ২০১১ সালে রাজনৈতিক স্বীকৃতি অর্জন করে। রাশিদ ঘানুচির নেতৃত্বে, ২০১১ সালের তিউনিসিয়ার গণপরিষদ নির্বাচনে আন-নাহদা ৩৭.০৪% ভোটে বা সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়ে সরকার গঠন করে। কিন্তু তিনি সরকারী পদ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ফলে দলের সেক্রেটারি জেনারেল হামাদি জেবালি প্রধানমন্ত্রী হন। দেশের তৎকালীন অর্থনৈতিক সংগ্রাম এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা সহ বিভিন্ন ধরনের প্রতিকুলতা নিয়ে একটি পরিবর্তনের সময়ের মধ্য দিয়ে দলটি তিউনিসিয়াকে নেতৃত্ব দেয়। কট্টর ইসলামপন্থীদের চাপ সত্ত্বেও আন-নাহাদা ধর্ম পরিবর্তনের স্বাধীনতা, ধর্মনিরপেক্ষতা ও গণতন্ত্রের প্রতি অঙ্গীকার বজায় রেখেছে।

জাতির জন্য বাস্তবসম্মত রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি

তিনি ইসলামী উদারনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির ক্ষেত্রে ইসলাম পন্থীদেরকে পথ দেখিয়েছেন। ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী, পশ্চিমা চিন্তাধারার দল, কমিউনিষ্ট সহ ভিন্ন মতাদর্শের দলের সাথে সহযোগীতা মূলক অবস্থানে থেকে দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করার দৃষ্টিভঙ্গী তিনি স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন।

পদে পদে প্রতিবন্ধকতা

তাঁর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদে সমর্থন, দূর্নীতি এবং নারী অধিকারের বিরোধিতা করার মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে। প্রহসনের বিচারে তিনি ও তাঁর দলের সদস্যরা বারবার কারাবরন ও জুলুম নিযাতনের শিকার হয়েছেন। গতবছর ২০২৩ সালের এপ্রিলের ১৭ তারিখে  বিচারের নামে প্রহসনের মাধ্যমে তাঁকে অবৈধ বিদেশী অর্থায়নের জন্য তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। অথচ ইতিমধ্যে অনেক মিডিয়া তাঁর বিরুদ্ধে অহেতুক ও মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর জন্য সরাসরি ভুল স্বীকার করে এবং ক্ষমা চেয়ে সরাসরি বিবৃতি প্রকাশ করেছে। শত প্রতিবন্ধীকতা সত্বেও তাঁর বুদ্ধিভিত্তিক আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে। তিনি তিউনিশিয়ার মানুষদের একজন জনপ্রিয় নেতা। তিনি ২০১৯ সালে প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার নির্বাচিত হয়েছিলেন।

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে জিহাদের ডাক

তিনি ১৯৮৯ সালে শিকাগোতে ইসলামিক কমিটি ফর ফিলিস্তিন সম্মেলনে যোগদান করেন। তিনি আমেরিকান পণ্য, বিমান এবং জাহাজ বয়কট ও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে জিহাদের জন্য মুসলিম জাতিকে আহ্বান জানান।

গ্রন্থ রচনা

কারাগারে থাকাকালীন তিনি গণতন্ত্র, নারী অধিকার এবং ফিলিস্তিন বিষয়ে বেশ কয়েকটি রচনা লিখেছেন। তার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ, আল-হুররিয়াত আল-আম্মাহ বা ইসলামী রাষ্ট্রে জনগণের স্বাধীনতা। 

বর্তমানে তাঁর বয়স প্রায় ৮৩ বছর। তার পুরো কর্মজীবনে, তিনি তিউনিসিয়ার রাজনীতিতে একজন কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে রয়েছেন। গণতান্ত্রিক নীতি, রাজনৈতিক বহুত্ববাদ এবং উদারনৈতিক ইসলামী আন্দোলনের পক্ষে তিনি বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখে যাচ্ছেন। 


সূত্র : উইকপিডিয়া, আলজাজিরা 

রাশিদ ঘানুচি : অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ফেইসবুক

সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


মুসলিম ব্যক্তিত্ব বিভাগের সর্বাধিক পঠিত


(জন্মঃ ৮১০-মৃত্যুঃ ৮৭০ খ্রিস্টাব্দ), আরব রীতি অনুযায়ী বংশধারাসহ পুরো...

মুসলিম ব্যক্তিত্ব | 2017-12-22 11:55:49

ইসলাম আগমনের পূর্ব থেকেই ভারতের সাথে আরবদের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিলো। বা...

মুসলিম ব্যক্তিত্ব | 2018-04-08 09:16:03

ইবনে রুশদ ছিলেন আধুনিক সার্জারির জনক। সেই সাথে ছিলেন একজন বড় মাপের আধ...

মুসলিম ব্যক্তিত্ব | 2017-12-01 00:44:18

সাহাবী  হযরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.) বলতেন- আর আমি (রাতে) ঘুমাই এবং নাম...

মুসলিম ব্যক্তিত্ব | 2020-02-06 18:38:47

ভাবুন তো... আপনার খুব কাছের কোনো বন্ধু আপনার বাসার ঠিক পাশ দিয়ে চলে গে...

মুসলিম ব্যক্তিত্ব | 2019-02-15 23:46:59

সংখ্যার জগতে ‘শূণ্য’ একটি গুরুত্বপূর্ণ চিহ্ন। গণিতের প্রাথমিক ১-৯ সংখ্...

মুসলিম ব্যক্তিত্ব | 2018-02-13 13:42:39

ইবনে সিনা (৯৮০-১০৩৭ খ্রিস্টাব্দ) যিনি কঠোর জ্ঞান সাধনা ও অধ্যবসায়ের মধ...

মুসলিম ব্যক্তিত্ব | 2017-10-28 14:09:44

অনেকদিন আগে, দামিশকের একজন পিতা তার পরিবার নিয়ে বেড়াতে যেতে বের হয়েছিল...

মুসলিম ব্যক্তিত্ব | 2018-02-01 20:15:53