বীজগণিতের জনকমুহাম্মদ ইবনে মুসা আল-খাওয়ারিজমী
mvslim.com অবলম্বনে, মুহাম্মদ আল বাহলুল
Published: 2018-02-13 13:42:39 BdST | Updated: 2024-04-29 13:10:34 BdST
সংখ্যার জগতে ‘শূণ্য’ একটি গুরুত্বপূর্ণ চিহ্ন। গণিতের প্রাথমিক ১-৯ সংখ্যাসমূহের সাথে “০” (শূণ্য) ব্যবহৃত হয়ে সহজেই বিভিন্ন আকৃতির সংখ্যা গঠিত হতে পারে। গণিতক্ষেত্রে শূণ্যের এই বহুল ব্যবহারের পিছনে যার ভূমিকা অনস্বীকার্য, তিনি হলেন পারসিক মুসলিম বিজ্ঞানী ও গণিতবিদ মুহাম্মদ ইবনে মুসা আল-খাওয়ারিজমী। তিনিই প্রথম শূণ্যকে গণিতের ক্ষেত্রে ব্যবহার করেন। তার অনুসরণেই বর্তমান আধুনিক সংখ্যাবিন্যাস গঠিত।
৭৮০ ঈসায়ীর দিকে তিনি তৎকালীন আব্বাসীয় সাম্রাজ্যের খাওয়ারেজম প্রদেশের খিভা শহরে জন্ম গ্রহণ করেন, যেটি বর্তমানে আধুনিক উজবেকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত। তার জন্মস্থানের নামানুসারে তাকে ‘আল-খাওয়ারিজমী’ নামে ডাকা হত।
আল-খাওয়ারিজমী খলীফা আল-মামুনের প্রতিষ্ঠিত ‘বাইতুল হিকমাহ’র গবেষণা্কর্মে যুক্ত ছিলেন। প্রাচীন গ্রীক, হিব্রু ও রোমান ভাষা হতে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক পান্ডুলিপি তিনি আরবীতে অনুবাদ করেছেন। এছাড়া জ্যোর্তিবিজ্ঞান ও গণিতে তিনি গুরুত্বপূর্ন মৌলিক গবেষণা সম্পন্ন করেন।
ইউরোপে আল-খাওয়ারিজমী ‘আলগোরিজমি’ হিসেবে পরিচিত, যা থেকে পরবর্তীতে ‘আলগরিদম’ শব্দটির উদ্ভব। আলগরিদম কম্পিউটার সফটওয়ারের পরিচালনায় মুখ্য ভূমিকা পালন করে। আলগরিদমের সাহায্যেই কম্পিউটারের বাইনারী গণনা সম্পন্ন্ হয়।
আল-খাওয়ারিজমীর গণিতের মৌলিক গবেষণার উপর ভিত্তি করেই আধুনিক বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার গবেষণা পরিচালিত হয়েছে।
আলগরিদম সম্পর্কে তিনি ‘কিতা্ব আল-জাম ওয়াল তারফিক বি হিসাব আল-হিন্দ’ নামে একটি গ্রন্থ রচনা করেন। এই গ্রন্থেই তিনি প্রথম আধুনিক সংখ্যাসমূহ অর্থ্যাৎ ০-৯ সম্পর্কে আলোচনা করেন। শূণ্যের ব্যবহারের মাধ্যমে বিভিন্ন সংখ্যার বিন্যাসের প্রক্রিয়াও তিনি এই গ্রন্থে আলোচনা করেন।
দুঃখজনকভাবে মঙ্গল আগ্রাসনে তার এই গ্রন্থটির মূল আরবী পান্ডুলিপিটি হারিয়ে গেছে। বর্তমানে শুধু এর একটি লাতিন অনুবাদই বিদ্যমান রয়েছে।
ভূগোল বিষয়ে তিনি ‘কিতাব সুরাত আল-আরদ’ নামে একটি গ্রন্থ রচনা করেন। এতে তিনি অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশ সম্পর্কে আলোচনা করেন এবং বিশ্বের বিভিন্ন স্থানের অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশের হিসাব উল্লেখ করেন। টলেমির কর্তৃক প্রস্তুত অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশের হিসাবের তুলনায় তার হিসাব ছিলো অধিক নিখুঁত।
ত্রিকোণমিতির ক্ষেত্রে তার গবেষণা তিনি তার গ্রন্থ ‘জিজ আল-সিন্দহিন্দ’এ লিপিবদ্ধ করেন। এই সিন্দহিন্দ হলো আধুনিক ত্রিকোণমিতির সাইন এবং কোসাইন, যাদের সাহায্যেই ত্রিকোণমিতির সকল হিসাবনিকাশ সম্পন্ন হচ্ছে। এছাড়া তিনি এই গ্রন্থে সূর্য, চাঁদ এবং বিভিন্ন গ্রহ-উপগ্রহের আবর্তন সম্পর্কিত একটি ত্রিকোণমিতিক ছক সন্নিবেশিত করেন।
‘হিসাব আল-জাবির ওয়াল মুকাবিলা’ আল-খাওয়ারিজমীর সর্বাধিক বিখ্যাত রচনা। এই গ্রন্থের নামের প্রথমাংশ ‘আল-জাবির’ হতেই ‘এলজেব্রা’ নামটির উদ্ভব। উপরন্তু, এটিই ছিলো বীজগণিতের প্রথম গ্রন্থ।
তার এই গ্রন্থে তিনি দৈনন্দিন জীবনে গণিতের বিবিধ ব্যবহার তুলে ধরেন। এছাড়া বীজগণিতের বিবিধ সমীকরণ সম্পর্কে তিনি এই গ্রন্থে আলোচনা করেন। এই গ্রন্থের মধ্য দিয়েই তিনি বীজগণিতের ভিত্তি স্থাপন করেন। বীজগণিতের ভিত্তি প্রদানকারী এই গবেষণার কারণে তাকে বীজগণিতের জনক হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।
মুসলিম স্বর্ণযুগের এই বিশিষ্ট গণিতবিদ ও বিজ্ঞানী ৮৫০ ঈসায়ীতে বাগদাদে ইন্তেকাল করেন।
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: