বিশ্বকাপ ফুটবল ও মুসলিম দেশসমূহের অংশগ্রহণ: দশটি সংক্ষিপ্ত তথ্য
ইসলামী বার্তা ডেস্ক
Published: 2018-06-22 22:32:19 BdST | Updated: 2024-05-03 12:18:38 BdST
Photo Credit: about Islam
গত ১৪ই জুন ক্রীড়াজগতের অন্যতম বৃহত্তম আসর বিশ্বকাপ ফুটবলের আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়েছে। এ বছর মোট সাতটি মুসলিম দেশ বিশ্বকাপ ফুটবলে অংশ গ্রহণ করছে। এর মধ্যে আফ্রিকা থেকে পাঁচটি; নাইজেরিয়া, মিসর, মরক্কো, তিউনিসিয়া, সেনেগাল এবং এশিয়া থেকে দুইটি দল; ইরান ও সউদি আরব অংশ গ্রহণ করছে। উদ্বোধনী ম্যাচটি স্বাগতিক রাশিয়া এবং সউদি আরবের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়। এই ম্যাচে সউদি আরব রাশিয়ার কাছে পাঁচ-শূন্য গোলে পরাজিত হয়েছে।
নিচে বিশ্বকাপ ফুটবলে মুসলিম দেশসমূহের অংশগ্রহণ সম্পর্কে সংক্ষেপে দশটি বিষয় জেনে নেওয়া যাক।
এক. ১৯৩৪ সালে ইতালিতে দ্বিতীয় বিশ্বকাপে প্রথম মুসলিম দেশ হিসেবে মিসর অংশগ্রহণ করে। সেসময় বিশ্বকাপে প্রথম পর্বে সম্পূর্ণ নক-আউট ভিত্তিতে খেলা হত। মিসর তার ম্যাচে হাঙ্গেরীর বিরুদ্ধে অংশগ্রহণ করে ৪-২ গোলে পরাজিত হয় প্রথম রাউন্ডেই ছিটকে পড়ে।
দুই. সর্বাধিক মুসলিম জনসংখ্যার দেশ হিসেবে ইন্দোনেশিয়া ১৯৩৮ সালে ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ ফুটবলে অংশগ্রহণ করে। তবে এটি তখন নেদারল্যান্ডের অধীনে থাকায় এটি তার কলোনীয় নাম ‘ডাচ ইস্ট ইন্ডিজ’ নামেই বিশ্বকাপে অংশ গ্রহণ করে। এবারো হাঙ্গেরী ৬-০ গোলে ইন্দোনেশিয়াকে পরাজিত করে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় করে।
তিন. বিশ্বকাপের এ পর্যন্ত ২১টি আসরের মধ্যে ১৫টি আসরে মোট ১৫টি দল অংশগ্রহণ করেছে। ক্রমানুসারে দলগুলো হলো-
যথাক্রমে, মিসর, ইন্দোনেশিয়া (ডাচ ইস্ট ইন্ডিজ), তুরস্ক, মরক্কো, তিউনিসিয়া, ইরান, আলজেরিয়া, কুয়েত, ইরাক, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সউদি আরব, নাইজেরিয়া, সেনেগাল, আইভরিকোস্ট, এবং বসনিয়া-হার্জেগোভিনা।
চার. বিশ্বকাপ ফুটবলে প্রথম গোল করা মুসলিম ফুটবলার মিসরের আবদুর রহমান ফাউজি। ১৯৩৪ সালে তিনি হাঙ্গেরীর বিরুদ্ধে দুইটি গোল করেন।
পাঁচ. ১৯৫৪ সালের সুইজারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে তুরস্ক দক্ষিণ কোরিয়াকে সাত-শূন্য গোলে পরাজিত করে। এর মাধ্যমে বিশ্বকাপের আসরে প্রথম কোন মুসলিম দেশ জয় অর্জন করে।
ছয়. বিশ্বকাপ ফুটবলের ইতিহাসে একটি বিতর্কিত ঘটনা ‘গিজনের কলঙ্ক’ (Disgrace of Gijon) যা ১৯৮২ সালের স্পেন বিশ্বকাপে সংঘটিত হয়। গ্রুপ পর্ব থেকে আলজেরিয়াকে বাদ দেওয়ার জন্য পশ্চিম জার্মানী ও অস্ট্রিয়া সর্ম্পূণ পূর্ব পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তাদের মধ্যকার ম্যাচটিকে সাজায়। ম্যাচের দশ মিনিটের মাথায় পশ্চিম জার্মানী গোল করে বসে। এর ফলে উভয় দলের পয়েন্ট আলজেরিয়ার সমান হয়ে যায়। কিন্তু গোলের ব্যবধানের ভিত্তিতে আলজেরিয়া এগিয়ে থাকায় পশ্চিম জার্মানী ও অস্ট্রিয়ার দ্বিতীয় রাউন্ডে যাওয়ার ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। ম্যাচটিতে কোন পক্ষে আরো গোল হলে আলজেরিয়ার দ্বিতীয় রাউন্ডে যাওয়া সম্পূর্ণ নিশ্চিত হয়ে যেত। কিন্তু আলজেরিয়াকে ঠেকাতে দুইদল আপোষে পরস্পরকে আর কোন আক্রমণ না করেই খেলা সমাপ্ত করে। ফলে আলজেরিয়া দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠতে ব্যর্থ হয় এবং পশ্চিম জার্মানী ও অস্ট্রিয়া দ্বিতীয় রাউন্ডে উত্তীর্ণ হয়।
সাত. ১৯৮৬ সালের মেক্সিকো বিশ্বকাপে মরক্কো প্রথম মুসলিম দেশ হিসেবে দ্বিতীয় রাউন্ডে উত্তীর্ণ হয়। কিন্তু দ্বিতীয় রাউন্ডে তারা পশ্চিম জার্মানীর কাছে ১-০ গোলে পরাজিত হয়ে বিদায় নেয়।
আট. ১৯৯৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ ফুটবলে সউদি আরবের সাঈদ আল-ওইরান গ্রুপ পর্বে বেলজিয়ামের সাথে ম্যাচে একক প্রচেষ্টায় বিপক্ষের চার জন ডিফেন্ডারকে অতিক্রম করে গোল করেন। ফিফার ইতিহাসে এই গোলটি অন্যতম একটি শ্রেষ্ঠ গোল হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে।
নয়. ২০০২ সালে তুরস্ক জাপান-দক্ষিণ কোরিয়ার যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে তৃতীয় স্থান অধিকার করে। এটিই বিশ্বকাপ ফুটবলে কোন মুসলিম দলের এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ অর্জন।
দশ. বিশ্বকাপ ফুটবলের ইতিহাসে একমাত্র সম্মাননা প্রাপ্ত মুসলিম ফুটবলার ফ্রান্সের জিনেদিন ইয়াজিদ জিদান। ২০০৬ সালে জার্মানীতে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে তাকে টুর্নামেন্টের শ্রেষ্ঠ খেলোয়ারের সম্মানে ভূষিত করা হয়। এছাড়া ২০১৪ সালের ব্রাজিল বিশ্বকাপে ফ্রান্সের আরেকজন মুসলিম খেলোয়ার পল পগবাকে শ্রেষ্ঠ উদীয়মান ফুটবলারের সম্মানে ভূষিত করা হয়।
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: