১০ই মুহররমের দশটি বিশেষ গুরুত্ব
ilmfeed.com অবলম্বনে, আবরার শেখ
Published: 2022-08-08 16:32:57 BdST | Updated: 2024-05-03 16:39:28 BdST
বছরের কিছু কিছু দিন এমন আছে যেগুলো সাধারণ অন্যান্য দিনের তুলনায় বিশেষ গুরুত্বের অধিকারী। এরকমই একটি দিন ১০ই মুহররম। বর্তমানে কারবালার ইমাম হুসাইন (রা.) এর শাহাদাতের ঘটনার কারণে এই দিনটি অধিক পরিচিত হলেও আরো বিভিন্ন কারনে এই দিনটি ইসলামের দৃষ্টিতে গুরুত্ব বহন করে।
১০ই মুহররমের বিবিধ গুরুত্ব থেকে এখানে দশটি বিশেষ গুরুত্ব সম্পর্কে উল্লেখ করা হল।
১. সম্মানিত মাসে অবস্থান
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ উল্লেখ করেছেন, “নিশ্চয় আল্লাহর বিধান ও গণনায় মাস বারটি, আসমানসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকে। তন্মধ্যে চারটি সম্মানিত।” (সূরা তাওবা, আয়াত: ৩৬)
হযরত আবু বকর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন,
“বছরের বারো মাসের মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত, এরমধ্যে ধারাবাহিকভাবে আসা তিনটি মাস হলো যিলকদ, যিলহজ্জ্ব এবং মুহররম, এবং বিচ্ছিন্ন (মাস) হলো রজব যা জুমাদিউস সানী ও শাবান মাসের মাঝে অবস্থিত।” (বুখারী)
আল্লাহর ঘোষণা করা সম্মানিত এই চার মাসের অন্যতম মুহররম মাসেরই একটি দিন ১০ই মুহররম।
২. মুসা (আ.) ও বনী ইসরাইলের ফেরাউনের হাত থেকে মুক্তি লাভ
১০ই মুহররমের এই দিনে হযরত মুসা (আ.) বনী ইসরাইকে সাথে নিয়ে ফেরাউনের নিপীড়নের কবল থেকে মুক্ত হয়ে নিরাপদে মিসর ত্যাগ করেন।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল (সা.) যখন মদীনায় হিযরত করে আসেন, তখন দেখেন ইহুদিরা আশুরার দিনে রোজা রাখছে। তিনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন,
“বিষয়টি কি?”
তারা তখন বলে, “এটি একটি পবিত্র দিন। এই দিনে আল্লাহ বনী ইসরাইলকে তাদের শত্রুদের হাত থেকে মুক্ত করেছেন। তাই মুসা এই দিনে রোজা রাখতেন।”
রাসূল (সা.) তখন বলেন, “আমরা তোমাদের তুলনায় মুসার অধিক নিকটের।”
তিনিও তখন এই দিনটিতে রোজা রাখা শুরু করেন এবং অন্যদেরকেও রোজা রাখার আদেশ দেন। (বুখারী)
৩. নূহ (আ.) এর নৌকার জুদি পাহাড়ে অবতরন
ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (র.) এর এক বিবরণ থেকে জানা যায়, নূহ (আ.) এর নৌকা এই দিনে মহাপ্লাবনের পর জুদি পাহাড়ের চূড়ায় অবতরণ করে। (তাফসির ইবনে কাসীর)
৪. নবুওয়াতের আগে রাসূল (সা.) এর রোজা পালন
ইমাম মালিক ইবনে আনাস (র.) এর সংকলিত হাদীসগ্রন্থ মুয়াত্তার এক হাদীস থেকে জানা যায়, জাহেলী যুগে ইবরাহীম (আ.) এর প্রতিষ্ঠিত এক প্রথা অনুযায়ী মক্কার মুশরিকরা রোজা রাখতো। নবুওয়াত পাওয়ার আগে রাসূল (সা.) এই দিনে এই প্রথা অনুযায়ী রোজা রাখতেন।
৫. ফরজ রোজা
রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার পূর্বে রাসূল (সা.) ও তার সাহাবীরা এই দিন ফরজ রোজা আদায় করতেন। পরবর্তীতে রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার পর এই রোজাকে নফল করে দেওয়া হয়।
হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, জাহেলী যুগে মক্কার কুরাইশরা রোজা রাখতো। রাসূল (সা.)’ও এই দিনে রোজা রাখতেন। যখন তিনি মদীনায় হিযরত করেন, তখনও তিনি রোজা রাখতেন ও অন্যদের (মুসলমানদের) এই দিনে রোজা রাখার আদেশ দিতেন। কিন্তু যখন রমজানের রোজার আদেশ করা হল, তখন আশুরার রোজা রাখা বা না রাখা লোকদের ইচ্ছাধীন করে দেওয়া হল।” (বুখারী)
৬. রোজা রাখার জন্য রাসূল (সা.) এর উৎসাহ দান
বিভিন্ন হাদীস থেকে রাসূল (সা.) এর এই দিনে রোজা রাখার প্রতি উৎসাহিত করার কথা বর্ণনা করা হয়েছে। বিভিন্ন হাদীসেই এই দিনে মুসলমানদের রোজা রাখার জন্য রাসূল (সা.) নির্দেশনা দেওয়ার বিবরণ এসেছে।
৭. রমজানের পর উত্তম রোজা
রমজানের রোজার পর মুহররম মাসের রোজাকে রাসূল (সা.) সর্বোত্তম রোজা হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
হযরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন,
“রমজানের রোজার পর সর্বোত্তম রোজা হল আল্লাহর মাস মুহররমের রোজা।” (মুসলিম)
৮. রাসূলের গুরুত্বের সাথে রোজা পালন
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেছেন, আমি রাসূল (সা.) কে কখনোই অন্যকোন দিনই এত গুরুত্ব সহকারে রোজা রাখতে দেখিনি এক আশুরার দিন এবং রমজান মাস ছাড়া। (বুখারী)
৯. গুনাহের মোচন
আশুরার দিনের রোজা বান্দার গুনাহ মোচনের কারণ হতে পারে।
হযরত আবু কাতাদাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন,
“আশুরার দিনের রোজায়, আমি আশা করি আল্লাহ আগের বছরের কৃত গুনাহ মাফ করার মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করবেন।” (ইবনে মাযাহ)
১০. পরিবারের সাথে সময় কাটানোর মাধ্যমে কল্যাণ অর্জন
রাসূল (সা.) এর বর্ণিত এক হাদীসে এসেছে, “যে ব্যক্তি আশুরার দিন পরিবারের সাথে সময় কাটাবে, আল্লাহ তার প্রতি সারাবছরই দয়া প্রদর্শন করবেন।” (বায়হাকী)
ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (র.) হযরত সুফিয়ান সাওরী (র.)-এর উক্তি উল্লেখ করেন,
“পঞ্চাশ বা ষাট বছর আমি এটির চর্চা (পরিবারের সাথে সময় কাটানো) করছি এবং আমি কল্যাণ ছাড়া আর কিছুই পাইনি।” (লাতায়িফ আল-মায়ারিফ)
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: