ঐক্য ও নেতৃত্বে জামাল উদ্দীন আফগানী


শাহ আবদুল হান্নান
Published: 2023-02-04 23:11:06 BdST | Updated: 2024-04-29 05:05:24 BdST

সাইয়িদ জামাল উদ্দীন আফগানী গত দু'শ বছরে সারা মুসলিম বিশ্বে, ঊনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীর যে কয়জন মহান মুসলিম মনীষী জন্ম নিয়েছিলেন তাদের মধ্যে একজন। আরো স্পষ্ট করে বলা যায় প্রথম চার পাচ জনের মধ্যে একজন।


তার রাজনৈতিক জীবন, তার কর্ম সম্পর্কে না জানলে বুঝতেই পারবে না যে তিনি কত বড় ব্যক্তি ছিলেন। তিনি ১৮৩৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মারা যান ১৮৯৭ সালে ৫৮ বছর বয়সে। এর মধ্যে তিনি এমন অসাধারণ সব কাজ করেন যা ভাবাই যায় না।


জামাল উদ্দীন আফগানীর কাজ বুঝতে হলে সেই সময়কে বোঝা দরকার। তিনি এমন এক সময়ে জন্মগ্রহণ করেন যখন সম্রাজ্যবাদ তার সর্বোচ্চ ক্ষমতা নিয়ে অধিষ্ঠিত। ভারত ইতোমধ্যেই পদানত হয়ে গেছে-১৭৫৭ সাল থেকে শুরু করে ১৮৫৭ সালের দিকে। যখন তিনি মাত্র সতের আঠারো বছরের যুবক তখন ভারত উপমহাদেশে সিপাহী বিদ্রোহ অর্থাৎ স্বাধীনতার যুদ্ধ শুরু হয়! সে সময় সমগ্র ভারতকেই বৃটেন দখল করে নেয়। একই সময়ে ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, পর্তুগাল ও ডাচরা মিলে সারা বিশ্ব দখল করে চলছে। জামাল উদ্দীন আফগানী সাম্রাজ্যবাদের উত্থানের ঠিক সেই সময়ই জন্মগ্রহণ করেন এবং বেড়ে ওঠেন।


তাঁর এই বেড়ে ওঠার মুহূর্তে তিনি লক্ষ্য করলেন প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে বিশ্বের প্রায় সকল দেশই ইংরেজদের এবং অন্যান্য ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদীদের পদানত হয়ে গেছে। জামাল উদ্দীন আফগানী তার যৌবনেই সারা বিশ্ব ঘুরে বেড়ান। আফগানিস্তানে তার জন্ম হলেও হিন্দুস্তানে তিনি আসেন। আমরা জানি, ঊনবিংশ শতাব্দীর সেই সময় গোটা মুসলিম বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় এক চতুর্থাংশই ভারত উপমহাদেশে বাস  রত। এর মধ্যে ভারতের পূর্ব ও পশ্চিম দিকে বেশি এবং মধ্যভাগে বিক্ষিপ্ত ভাবে মুসলিমরা বাস করত। আফগানী কলকাতাতেও আসেন। তিনি ফ্রান্সে যান। তিনি তৎকালীন মুসলিম বিশ্বের প্রধান প্রধান দেশে (যেগুলোকে সে সময়ের মুসলিম পাওয়ার বলতে পারি) যান। যেমন মিসরে তিনি অনেকদিন ছিলেন। মিসরকে তখন উত্তর আফ্রিকা বা আরব বিশ্বের নেতা বলা যায়। মিসর ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ দেশ। সেখানে তিনি কাজ করেন এরপর তুর্কী খেলাফতের কেন্দ্র ইস্তাম্বুলে তিনি বাস করেন এবং সেখানকার রাজনীতিকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন। তিনি মিসর থাকাকালীন সময় সেখানে এই কাজটিই করেছিলেন। মিসরের মতো তুরস্কও তখন খুব গুরুত্বপূর্ণ দেশ হিসাবে স্বীকৃত ছিল। বর্তমানেও তুরস্ক খুবই গুরুত্বপূর্ণ দেশ। তিনি তুরস্কের খেলাফতকে পরিবর্তন ও রক্ষা করার চেষ্টা করেন। ইরান এখনকার মতো তখনও খুবই গুরুত্বপূর্ণ দেশ ছিল। তিনি ইরানে যান এবং সেখানেও কাজ করেন। সেখানকার রাজনীতিকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন এবং জনগণকে উদ্বুদ্ধ করেন। সেই সাথে সাথে হিন্দুস্তানের রাজনীতিকে তিনি প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন।


এগুলো বলার উদ্দেশ্য হলো তিনি ইন্দোনেশিয়া বা ইষ্টে (পূর্বে) কাজ করেননি। কিন্তু তৎকালীন কেন্দ্রিয় চারটি স্থান উপমহাদেশ, ইরান, তুরস্ক এবং মিসরে কাজ করেন। আফগানিস্তানও সেই সাথে উল্লেখযোগ্য। ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায় তিনি সঠিক ভাবেই দেশগুলো নির্বাচন করেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন মুসলিম বিশ্বের ভবিষ্যত নির্ভর করছে এসব দেশ বা স্থানের এলিট বা জনগণকে প্রভাবিত করার উপর। আমরা এটাও লক্ষ্য করি তিনি তাঁর জীবনে মিসরে মুফতি আবদুহুর মতো একজন মহৎ শিষ্য পান। মুফতি আবদুহু'ই তার চিন্তাধারাকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেবার চিন্তা করেন, বিশেষ করে মুসলিম বিশ্বের কেন্দ্রে যেটা আরবি ভাষী ছিল। এটা সত্য যে সাবকন্টিনেন্টে তৎকালীন মুসলিম এলিটদের মধ্যে ইংরেজি শিক্ষিত কম ছিল। যারা ছিল তারা আরবি শিক্ষিত ছিল। তাদের মধ্যে আরবীর মাধ্যমেই আফগানীর চিন্তাধারা পৌঁছানো সম্ভব হতো। ইংরেজির মাধ্যমে পৌছানোর কোনো উপায় তখন ছিল না। আর ইংরেজি ভাষা তাদের মধ্যে বিস্তার লাভ করে ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে। এখানে প্রথম মুসলিম ইংরেজি কলেজই স্থাপিত হয় অনেক পরে, আলীগড়ে। এ ছাড়া ইংরেজি শিক্ষা ছিল তখন গুটি কয়েক লোকের মধ্যে। সুতরাং তৎকালীন মুসলিম বিশ্বের যারা এলিট ছিলেন তাদের ভাষা আরবিই ছিল বলা যায়। আরবির সাথে সাথে ভারত এবং ইরানে ফার্সিও ছিল। কাজেই তিনি প্রথম মিসর কেন্দ্রিক সাংবাদিকতা শুরু করেন মুফতি আবদুহু'র সহায়তায়। সারা বিশ্বে তিনি তার বাণীকে ছড়িয়ে দিতে চেষ্টা
করেন।


এরপর তিনি ফ্রান্সে গিয়ে ‘আল উরওয়াতুল-উছকা' বা শক্ত রজ্জু নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন। প্যারিসকে কেন্দ্র করে আরবী ভাষায় এটা করার মধ্যে এটাও প্রমাণ করে যে তিনি নিজেও আরবী ভাষা ভালো জানতেন। তিনি তার পত্রিকা ‘আল-উরওয়াতুল উছকায়” যে সমস্ত প্রবন্ধ লেখেন সেগুলো সংকলন করে উর্দুতে মুহাম্মদ আবদুল কুদ্দুস কাসেমী 'আফগানী রচনাবলী' লেখেন।

জামাল উদ্দীন আফগানী তখন তাঁর লেখায় মুসলিম বিশ্বের কেন্দ্রীয় সমস্যাগুলো কী তা দেখাতে চাইলেন। তিনি তাঁর যুগকে সামনে রেখেই কথা বলে ন। যেমন আমরা আমাদের যুগকে সামনে রেখে কথা বলে থাকি। তিনি দু'টি বিষয়কে প্রধান বলে দেখেন। একটি হলো অনৈক্য। তিনি বলেছেন যে বিদেশী শক্তি আমাদের অনৈক্যের সুযোগে ঢুকে পড়েছে। আর দ্বিতীয় যে বিষয়ের উপর তিনি গুরুত্ব নিয়েছিলেন সেটা হলো নেতৃত্ব। তিনি বললেন, মুসলিমদের মধ্যে নেতৃত্বের অভাব ঘটেছে এবং শক্ত নেতৃত্ব নাই। যদিও বলা যায়, গণতন্ত্র, মানবাধিকার, নারীর অধিকার এ সব বিষয় তিনি আনেন নাই। কেন আনেন নাই- এর উত্তর হলো, সে যুগে এগুলো বড় প্রশ্ন ছিল না। তখনকার সময় বড় প্রশ্ন ছিল মুসলিম জাতির রক্ষা। যে শাসকই আছে তাকে নিয়েই এগুতে হবে সেখানে প্রথম কাজ এটা নয় যে বাদশাহী বাদ দিয়ে গণতন্ত্র করা। মানবাধিকার করা। প্রকৃতপক্ষে তখনকার ইস্যুই ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। সেটা তুরস্কের খেলাফতকে পরিবর্তন ও রক্ষা করার চেষ্টা করেন। ইরান এখনকার মতো তখনও খুবই গুরুত্বপূর্ণ দেশ ছিল। তিনি ইরানে যান এবং সেখানেও কাজ করেন। সেখানকার রাজনীতিকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন এবং জনগণকে উদ্বুদ্ধ করেন। সেই সাথে সাথে হিন্দুস্তানের রাজনীতিকে তিনি প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন।


এগুলো বলার উদ্দেশ্য হলো তিনি ইন্দোনেশিয়া বা ইষ্টে (পূর্বে) কাজ করেননি। কিন্তু তৎকালীন কেন্দ্রিয় চারটি স্থান উপমহাদেশ, ইরান, তুরস্ক এবং মিসরে কাজ করেন। আফগানিস্তানও সেই সাথে উল্লেখযোগ্য। ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায় তিনি সঠিক ভাবেই দেশগুলো নির্বাচন করেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন মুসলিম বিশ্বের ভবিষ্যত নির্ভর করছে এসব দেশ বা স্থানের এলিট বা জনগণকে প্রভাবিত করার উপর। আমরা এটাও লক্ষ্য করি তিনি তাঁর জীবনে মিসরে মুফতি আবদুহুর মতো একজন মহৎ শিষ্য পান। মুফতি আবদুহু'ই তার চিন্তাধারাকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেবার চিন্তা করেন, বিশেষ করে মুসলিম বিশ্বের কেন্দ্রে যেটা আরবি ভাষী ছিল। এটা সত্য যে সাবকন্টিনেন্টে তৎকালীন মুসলিম এলিটদের মধ্যে ইংরেজি শিক্ষিত কম ছিল। যারা ছিল তারা আরবি শিক্ষিত ছিল। তাদের মধ্যে আরবীর মাধ্যমেই আঞ্চপানীর চিন্তাধারা পৌঁছানো সম্ভব হতো। ইংরেজির মাধ্যমে পৌছানোর কোনো উপায় তখন ছিল না। আর ইংরেজি ভাষা তাদের মধ্যে বিস্তার লাভ করে ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে। এখানে প্রথম মুসলিম ইংরেজি কলেজই স্থাপিত হয় অনেক পরে, আলীগড়ে। এ ছাড়া ইংরেজি শিক্ষা ছিল তখন গুটি কয়েক লোকের মধ্যে। সুতরাং তৎকালীন মুসলিম বিশ্বের যারা এলিট ছিলেন তাদের ভাষা আরবিই ছিল বলা যায়। আরবির সাথে সাথে ভারত এবং ইরানে ফার্সিও ছিল। কাজেই তিনি প্রথম মিসর কেন্দ্রিক সাংবাদিকতা শুরু করেন মুফতি আবদুহু'র সহায়তায়। সারা বিশ্বে তিনি তার বাণীকে ছড়িয়ে দিতে চেষ্টা
করেন।


এরপর তিনি ফ্রান্সে গিয়ে ‘আল উরওয়াতুল-উছকা' বা শক্ত রজ্জু নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন। প্যারিসকে কেন্দ্র করে আরবী ভাষায় এটা করার মধ্যে এটাও প্রমাণ করে যেতিনি নিজেও আরবী ভাষা ভালো জানতেন। তিনি তার পত্রিকা ‘আল-উরওয়াতুল উৎকায়” যে সমস্ত প্রবন্ধ লেখেন সেগুলো সংকলন করে উর্দুতে মুহাম্মদ আবদুল কুদ্দুস কাসেমী 'আফগানী রচনাবলী' লেখেন।


জামাল উদ্দীন আফগানী তখন তাঁর লেখায় মুসলিম বিশ্বের কেন্দ্রীয় সমস্যাগুলো কী তা দেখাতে চাইলেন। তিনি তাঁর যুগকে সামনে রেখেই কথা বলেছেন। যেমন আমরা আমাদের যুগকে সামনে রেখে কথা বলে থাকি। তিনি দু'টি বিষয়কে প্রধান বলে দেখেন। একটি হলো অনৈক্য। তিনি বলেছেন যে বিদেশী শক্তি আমাদের অনৈক্যের সুযোগে ঢুকে পড়েছে। আর দ্বিতীয় যে বিষয়ের উপর তিনি গুরুত্ব নিয়েছিলেন সেটা হলো নেতৃত্ব। তিনি বললেন, মুসলিমদের মধ্যে নেতৃত্বের অভাব ঘটেছে এবং শক্ত নেতৃত্ব নাই। যদিও বলা যায়, গণতন্ত্র, মানবাধিকার, নারীর অধিকার এ সব বিষয় তিনি আনেন নাই। কেন আনেন নাই- এর উত্তর হলো, সে যুগে এগুলো বড় প্রশ্ন ছিল না। তখনকার সময় বড় প্রশ্ন ছিল মুসলিম জাতির রক্ষা। যে শাসকই আছে তাকে নিয়েই এগুতে হবে সেখানে প্রথম কাজ এটা নয় যে বাদশাহী বাদ দিয়ে গণতন্ত্র করা। মানবাধিকার করা। প্রকৃতপক্ষে তখনকার ইস্যুই ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। সেটা মানসিক ভাবে দেড়শ' বছর আগে না গেলে আমরা বুঝব না। তিনি তাঁর সময়কে সামনে রেখেই নেতৃত্বের প্রশ্ন তুলেছিলেন। তিনি একথা বললেন না যে নেতা স্বৈরাচারী, গণতান্ত্রিক নয় কিংবা তিনি নির্বাচিত হন নাই। কিন্তু তিনি এটা বললেন যে, যে যেখানে নেতা আছেন। আপনারা ঝগড়া ঝাটি বন্ধ করুন আপনারা একত্রিত হন। আপনাদের নেতৃত্বের যোগাতা রাখতে হবে। আলস্য, বিলাস এবং জুলুম পরিহার করার জন্য তিনি তাদেরকে বললেন। তিনি এই দু'টি জিনিস, অনৈক্য ও নেতৃত্বকে সার্বিক ভাবে গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি তাঁর 'একতা' প্রবন্ধে বলেছেন, একথা বলা উদ্দেশ্য এ নয় যে, সমস্ত মুসলিম দেশের উপর কোনো একক ব্যক্তির আধিপত্য মেনে নেয়া হোক। এমন প্রস্তাব দুঃসাধ্য বলে মনে করার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে আমি অবশ্যই চাই যে, এদের সবার উপর কুরআনী আহকামের আধিপতা থাকুক এবং সবাই ইসলামকে নিজেদের ঐক্য ও সংহতির মাধ্যমে পরিণত করুক। (সাইয়িদ জামাল উদ্দীন আফগানীর রচনাবলী-মুহাম্মদ আবদুল কুদ্দুস কাসেমী, পৃষ্ঠা-৪৩ )

এই কথারই যদি ব্যাখ্যায় বলা যায় এখানে তিনি বলছেন না যে সারা মুসলিম বিশ্বকে এক নেতা মেনে নিতে হবে এখন। এই প্রস্তাব কত ভাল বা মন্দ সে প্রশ্ন তিনি তুলছেন না।


তিনি তা দুঃসাধ্য বলে মনে করেছেন সেটা বাস্তবও নয়। তিনি বলেছেন ঐক্যের ভিত্তি এমনই হবে যে সবার উপরই কুরআনী আহকামেরই আধিপত্য থাকুক। অর্থাৎ কুরআনকে ঐক্যের ভিত্তি করা হোক । ইসলামকে ঐক্য ও সংহতির মাধ্যমে পরিণত করা হোক। আমরা এখানে পরিষ্কার দেখি যে মুসলিমদের ঐক্যের ভিত্তি এ ছাড়া অন্য কিছু হতে পারে তা তিনি মনে করেননি। তিনি কুরআন ও ইসলামকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। তিনি আরেক জায়গায় বলছেন : "ঐক্য ও নেতৃত্ব এ দু'টি বস্তু সামাজিক ও জাতীয় জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ দু'টিকে অর্জন করার পথে কখনো প্রাকৃতিক প্রয়োজন ও স্বভাবগত চাহিদা সাহায্য করে, কখনো ধর্ম এগুলো থেকে উপকৃত হওয়ার পথ বলে দেয় আবার ক্রমাগত অনুশীলন চর্চার মাধ্যমে এগুলো লাভ করা যায়। ঐক্য ও নেতৃত্ব এক সাথেই বাড়ে এবং উৎকর্ষে উপনীত হয় (পৃষ্ঠা-৪৫)

তিনি আবার বলেছেন, ঐক্য ও নেতৃত্ব ইসলামী সুউচ্চ প্রাসাদের দু'টি প্রধান স্তম্ভ। এগুলোকে অটুট রাখার জন্য চেষ্টা করা ইসলামের সাথে সম্পর্কিত প্রতিটি ব্যক্তির উপর ফরয(পৃষ্ঠা-৪৬)।

তিনি এরকম ভাবেই ঐক্য ও নেতৃত্বকে কল্পনা করতেন। একথা একবিংশ শতাব্দির আজকের দিনেও সত্য যে আমরা পাশ্চাত্য থেকে যে সমস্ত কারণে পিছিয়ে আছি তার মধ্যে রয়েছে ঐক্যের এবং যোগ্য নেতৃত্বের অভাব। বিভিন্ন দেশে মুসলমানরা যেভাবে মার খাচ্ছে সেখানেও আমরা শক্তিশালী কোনো অবস্থান এখনও তৈরি করতে পারিনি। জামাল উদ্দীন আফগানী বললেন, হিলফুল ফুযুল একটা অন্ধকার যুগের চুক্তি হলেও জাহেলিয়াতের সেই সময়ে রাসুলুল্লাহ (সঃ) শুধুমাত্র ঐক্যের প্রয়োজনে সেটা গ্রহণ করলেন । তিনি বলেন, হিলফুল ফুযুল অন্ধকার যুগের একটি চুক্তি হলেও ঐক্যের খাতিরে রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর কাছে সেটাও গ্রহণীয় ছিল এবং পৌত্তলিকদের সাথে তিনি তাতে শরীক হন (পৃষ্ঠা- ৫২)। অর্থাৎ ঐক্যকে গুরুত্ব দেয়ার জন্যই তিনি এ কথাটা উদাহরণ হিসাবে উল্লেখ করেন। তিনি আরেক জায়গায় ইসলামী রাষ্ট্রের উপর জোর দিচ্ছেন: বেশির ভাগ দ্বীনি হুকুম জারী করা একটি সুসংগঠিত ইসলামী রাষ্ট্রের উপর  র্ভরশীল (পৃষ্ঠা-৫৩)।

এর দ্বারা এও বোঝা যায় যে তিনি ইসলামী রাষ্ট্র চাইতেন। তিনি এই ঐক্যের ব্যাপারে। হজ্জের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেন, প্রত্যেক মুসলমানের উপর সামর্থ্য সাপেক্ষে হজ্জ আদায় করা ফরয। হজ্ব উপলক্ষে এই ভূখন্ডে প্রত্যেক স্তরের প্রত্যেক অঞ্চলের এবং প্রত্যেক মানব গোষ্ঠীর মুসলিম পরস্পর মিলিত হয় । প্রয়োজন শুধু একটি আরতা হলো, কোন প্রভাবশালী মহান ব্যক্তি সত্যের এমন একটি আওয়াজ বুলন্দ করবে যার দ্বারা বিশ্বের সর্বদিকে ও সর্বপ্রান্তে চাঞ্চল্য ও কর্ম ব্যস্ততার একটি বিদ্যুৎ প্রবাহ বয়ে যাবে এবং নীরবতা প্রবণ মানব গোষ্ঠীর অন্তরে জাগরণ এবং জাগরণ থেকে কর্ম সম্পাদনের আকুতি সৃষ্টি হবে "(পৃষ্ঠা-৫৭)।

তিনি এখানে হজ্জকে ব্যবহার করতে বলছেন। আমরা আজকে যে কথাটি বলছি সেই কথাটিই তিনি আজ থেকে দেড়শ' বছর আগে বলে গেছেন। তিনি তখনই ঐক্যের পক্ষে কথা বলেছেন।

জামাল উদ্দীন আফগানী একজন অত্যন্ত জ্ঞানী ব্যক্তি ছিলেন। ফার্সী এবং আরবী ভালো জানতেন। তিনি তাঁর কালের প্রধান মুসলিম রাষ্ট্র ও তাঁর সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে পেরেছিলেন এবং সেখানে তিনি কাজ করেছেন। তিনি সাংবাদিকতার গুরুত্ব বুঝেছিলেন এবং তাঁর মাধ্যমে তিনি কাজ করেছিলেন। তিনি নিজে ফার্সী ভাষা ভাষী হওয়া সত্ত্বেও আরবীর গুরুত্ব উপলব্ধি করেন এবং আরবীকে তার সাহিত্যের এবং লেখার ভিত্তি করেন। তিনি সেই যুগের উম্মতের মূল সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে পেরেছিলেন। তিনি বোঝাতে চান যে ঐক্য না থাকার কারণে সমস্যাগুলো হচ্ছে। দ্বিতীয়ত সমস্যা হলো নেতৃত্বের। এ ছাড়াও অন্যান্য জায়গায় তিনি শিক্ষার জ্ঞানের কথা বলেছেন, ভ্রাতৃত্বের, বীরত্বের কথা বলেছেন । জামাল উদ্দীন আফগানীর এ সব কথা আজকের মুসলিম জাতির জন্যও প্রযোজ্য।

সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


মুসলিম ব্যক্তিত্ব বিভাগের সর্বাধিক পঠিত


(জন্মঃ ৮১০-মৃত্যুঃ ৮৭০ খ্রিস্টাব্দ), আরব রীতি অনুযায়ী বংশধারাসহ পুরো...

মুসলিম ব্যক্তিত্ব | 2017-12-22 11:55:49

ইসলাম আগমনের পূর্ব থেকেই ভারতের সাথে আরবদের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিলো। বা...

মুসলিম ব্যক্তিত্ব | 2018-04-08 09:16:03

ইবনে রুশদ ছিলেন আধুনিক সার্জারির জনক। সেই সাথে ছিলেন একজন বড় মাপের আধ...

মুসলিম ব্যক্তিত্ব | 2017-12-01 00:44:18

সাহাবী  হযরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.) বলতেন- আর আমি (রাতে) ঘুমাই এবং নাম...

মুসলিম ব্যক্তিত্ব | 2020-02-06 18:38:47

ভাবুন তো... আপনার খুব কাছের কোনো বন্ধু আপনার বাসার ঠিক পাশ দিয়ে চলে গে...

মুসলিম ব্যক্তিত্ব | 2019-02-15 23:46:59

সংখ্যার জগতে ‘শূণ্য’ একটি গুরুত্বপূর্ণ চিহ্ন। গণিতের প্রাথমিক ১-৯ সংখ্...

মুসলিম ব্যক্তিত্ব | 2018-02-13 13:42:39

ইবনে সিনা (৯৮০-১০৩৭ খ্রিস্টাব্দ) যিনি কঠোর জ্ঞান সাধনা ও অধ্যবসায়ের মধ...

মুসলিম ব্যক্তিত্ব | 2017-10-28 14:09:44

অনেকদিন আগে, দামিশকের একজন পিতা তার পরিবার নিয়ে বেড়াতে যেতে বের হয়েছিল...

মুসলিম ব্যক্তিত্ব | 2018-02-01 20:15:53